Published : 08 Nov 2022, 07:31 PM
নদীর বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন শেষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলছেন, কর্ণফুলী নদীর ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি শঙ্কিত।
মঙ্গলবার কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা ও তৃতীয় সেতু অংশ পরিদর্শন শেষে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের কাছে নিজের শঙ্কার কথা জানান।
এরআগে তিনি চাক্তাই ভেড়া মার্কেটের বিপরীতে জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত নতুন ফিশারি ঘাট এলাকায় যান। সেখানে নদীর জমিতে কীভাবে নতুন ফিশারি ঘাট গড়ে উঠল এবং সেখানকার স্থাপনার বিষয়ে জানতে চান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
এ বিষয়ে জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাবুল সরকার বলেন, “২০১৭ সালে বন্দরের কাছ থেকে ১৫ বছরের ‘লিজ’ নিয়ে আমরা ফিশারি ঘাট করেছি। এখানে ১০৩টি আড়ৎ এবং ১০০টি প্যাকিং প্রতিষ্ঠান আছে।
“নদীর তীরে সিসি ব্লক ফেলে বাঁধ এবং জমির খালি অংশে ঢালাই করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আমরা শুধু আড়ৎ করেছি। প্রতিটি আড়ত বাবদ ৫ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।”
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের কাছে সব তথ্য ও ম্যাপ আছে। এখানে নদীর তীর থেকে সড়ক পর্যযন্ত ৭৫০ ফুট দখল হয়েছে। ২০১১ সালেও ফিশারি ঘাট অংশটি নদী ছিল। এরপর থেকে ফিশারি ঘাট ও মেরিনার পার্কের নামে ধীরে ধীরে তা দখল হয়েছে।”
“চট্টগ্রামে এত সরকারি সংস্থা ও এখানকার বুদ্ধিজীবী সমাজ, সবার সামনে কি করে নদীর এই অংশ ভরাট করল?” - এমন প্রশ্নও রাখেন মনজুর আহমেদ।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমাদের এটা ভাঙলে যদি নদী হয়, তাহলে আমাদের ছাড়তে কোনো আপত্তি নেই। আমরাও চাই নদী বাঁচুক।
“বন্দর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের সময় মাটি ভরাট করে এ জায়গা সমতল করে ফেলে। আমাদের পুরান ফিশারিঘাট ৩২ বছর আগের পুরান বাজার। তখন আমরা বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে জমি চাই। তিনি জমি বরাদ্দ দেন।”
বাবুল সরকার বলেন, “দেশে ৬৭ হাজার নৌযান বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরে কিন্তু চট্টগ্রামে মৎস্য অবতরণের কোনো ঘাট ছিল না। তাই বন্দর আমাদের এই জমিটি বরাদ্দ দেয়। এটা পরিবেশবান্ধব আধুনিক বাজার। তবে এখানে যদি আমরা ছেড়ে দিলে নদী হয়, আমরা ছেড়ে দিব।”
ফিশারিঘাটের বরফকল, চাক্তাই খালের মুখে স্লুইস গেট এবং ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর এলাকা ঘুরে দেখে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, “কর্ণফুলী নদী শুধু এখানে নয়, অনেক জায়গায় ব্যাপকভাবে দখল হয়ে গেছে। এবং নদী সংকুচিত হয়ে আসতেছে। এভাবে দখল চলতে থাকলে কর্ণফুলী নদীর ভবিষ্যত নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
“এ নদী শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয় সারাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি এ নদীর তীরে যে বন্দর তার মাধ্যমে হয়। দখল যে হয়েছে সেগুলো অবমুক্ত করতে হবে।
“কর্ণফুলী ড্রাইডকের প্রায় সব অংশই নদীর মধ্যে অবস্থিত। এই ফিশারিঘাট, এখানে যে বরফকল সবই নদীর ভেতর ছিল। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। এখানে অনেক সরকারি সংস্থা আছে। সিটি করপোরেশন, সিডিএ, বন্দর, জেলা প্রশাসনের চোখের সামনে একটা নদী কী করে দখল করে ফেলল। এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
তিনি বলেন, “নদীর ওপর অন্যায় হয়েছে। নদীর অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। কাল সভা আছে। নদী রক্ষায় কী কালেকটিভ মেজার নেয়া যায় তা দেখব। জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন্দরের কাছে জানতে চাইব কীভাবে দখল হল। কার দায়িত্ব ছিল।
“আমাদের অবজারভেশন হলো- এখানে যে দাঁড়িয়ে আছি, এখানে একটা নদী ছিল। এ নদী আরও দখল হলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।”
এক প্রশ্নের জবাবে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে গিয়ে নদী ভরাট হয়ে গেছে- এটা আমরা মেনে নেব না। ড্রেজিং ম্যানেজমেন্টের গাইড লাইন আছে। নাব্যতা রক্ষায় ড্রেজিং করতে হবে। কিন্তু ড্রেজিং এর নামে ভরাট কেন হবে।”
পরিদর্শনের সময় নদী রক্ষা কমিশনের উপপরিচালক (গবেষণা ও নিরীক্ষণ) ড. আকতারুজ্জামান তালুকদার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।