সামরিক কর্মকর্তা জনপ্রিয় হলে তার বিরুদ্ধে কী করে ২৬টা ক্যু হয়, প্রশ্ন রাখেন আওয়ামী লীগের এ সাংসদ।
Published : 19 Aug 2023, 10:13 PM
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে জেনারেল সম্বোধন করা ‘উচিত নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
তিনি বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে পাকিস্তানপন্থি ও বাংলাদেশ বিরোধী সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক শক্তিকে যেভাবে প্রণোদনা দেয় বিশেষ করে জিয়াউর রহমান, তাকে জেনারেল বলেও সম্বোধন করা উচিত নয়। কারণ যে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা সামরিক আইন ভঙ্গ করে, দেশের সংবিধান ভঙ্গ করে এবং রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পিস্তল দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করে- তাকে কখনো জেনারেল সম্বোধন করাটা এই উপাধির প্রতি অসম্মানজনক।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দামপাড়া পুলিশ লাইনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য নওফেল বলেন, “খুনি জিয়াউর রহমান সেই সকল ষড়যন্ত্রের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। তার আদর্শের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি এখনো বাংলাদেশে বিদ্যমান। দেশি-বিদেশি পরাশক্তি সমূহের প্রণোদনায় তারা বেড়ে উঠছে। এটা আমাদের জন্য একটা বাস্তবতা।
“এটাকে আমরা রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি, এখনও করছি। সেই সংগ্রাম যেন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিদ্যমান থাকে- এ বিষয়ে আমাদের এক চুলও নড়া যাবে না।”
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, “জিয়াউর রহমানকে এখন নানাভাবে প্রচার করা হয়- সে নাকি জনপ্রিয় ছিল। জনপ্রিয় সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে কী করে ২৬টা ক্যু হয়? কারণ এ ব্যক্তি অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে ১৩০০ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা কর্মচারীকে ফাঁসি দেয়। এতই যদি জনপ্রিয় হয় কোনো শাসক, তাহলে নিজের দেশের সামরিক বাহিনীর ভিতরে এত নির্মম হত্যাযজ্ঞ কী করে চালায়?
“আমাদের দেশপ্রেমিক বাহিনীগুলো দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বসহ জাতীয় মূলনীতির প্রতি আস্থাশীল ছিল। অবৈধ কিছুকে তারা প্রশ্রয় দেয়নি বলেই বাহিনীর ভিতর এভাবে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল।”
অতীতের ধারাবাহিকতায় এখনও ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “১৯৭০ সালের নির্বাচনে যে ২৪ শতাংশ মানুষ বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দেয় নাই, সেটাকে আরো উর্বর করার জন্য ৭৫ এর ১৫ অগাস্টের পরে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে।
“বাংলাদেশ বিরোধী চক্রকে জ্যামিতিক হারে বাড়ানো হয়েছে, সেটা কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রের জন্য এখনও হুমকি হিসেবে আছে। আগামীতেও হুমকি হিসেবে সামনে চলে আসার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।”
আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিনপুত্র নওফেল বলেন, “বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশকে যে পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন এজন্য তিনি অনেক পরাশক্তি সমূহের গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এজন্য তারা আমাদের সুশৃঙ্খল বাহিনীগুলোকে পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু আমরা জানি ষড়যন্ত্রকারীরা টাকা পয়সা খরচ করে নানা বিদেশি শক্তি ও ভিতরে থাকা ষড়যন্ত্রের মানসিকতার লোকদের উৎসাহিত করে এসব কাজ করাচ্ছে।
“সেখানেও অনেক ভালো মানুষ আছে। তারাও ইতিমধ্যে বুঝতে পারছে। একজন শেখ হাসিনা ব্যতীত এই বাংলাদেশ, এই উপমহাদেশ ও এই অঞ্চল এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে...। সেটা তারা সকলেই বুঝতে পেরে এখন সেই আক্রমণাত্মক ভূমিকা থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। একজন শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ। এই বিষয়টা সকলেই বুঝতে পেরেছে।”
বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সমালোচনা করে নওফেল বলেন, “বিদেশে বসে রিমোট টিপে ক্ষমতায় আসা যাবে না। কিন্তু হত্যার ষড়যন্ত্র তারা করছে। সবার প্রতি, সব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান রাখব, দেশের জনগণের জন্য রাজনীতি করুন। এজন্য অবশ্যই শেখ হাসিনার সরকারের সাথেই আলোচনা করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এই বোধোদয় আপনাদের যথা সময়ে হবে বলে বিশ্বাস করি।
“একজন ব্যক্তি, তারেক রহমান ভালো করেই জানে তার মা বেঁচে থাকতে এবং এদেশে সরকারের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকতে সে কখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। নির্বাচনে তার দল বিজয়ী হলেও পারবে না। আইনত তার পক্ষে সেটা সম্ভব না। তাই সে পরিকল্পনা করছে কিভাবে অরাজকতা সৃষ্টি করে, কিভাবে নির্বাচনকে ভণ্ডুল করা যায়। নির্বাচন হলে তার কোনো লাভ নেই। সংসদে বা ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ তার নেই তাই সে নিজেও চায় না তার দল রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় থাকুক।”
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।
সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগরের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার একেএম সরওয়ার কামাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।