মোনাজাত নিয়ে ডিসিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া যেত: হাছান মাহমুদ

প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিলের মোনাজাতে অংশ নেওয়া নিয়ে ডিসি মমিনুরকে ভোটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2022, 05:46 PM
Updated : 30 Sept 2022, 05:46 PM

মোনাজাতে অংশ নেওয়া নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা পদ থেকে ‘তড়িঘড়ি’ সরানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

শুক্রবার নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে দুর্গা পূজা উপলক্ষে হরিজন সম্প্রদায়ের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদে সরকার দলীয় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম গত ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে গিয়ে তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরপর তার সঙ্গে থাকা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা দলীয় প্রার্থীর জয় কামনা করে মোনাজাত ধরেন।

সেসময় রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানও মোনাজাতে হাত তোলেন। মোনাজাত শেষে সেখানে আগে থেকে চলমান সম্প্রীতি সভায় তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বক্তৃতাও করেন।

এক্ষেত্রে কোনো তদন্ত হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন রাখা হয় তথ্যমন্ত্রীর কাছে। উত্তরে হাছান মাহমুদ বলেন, “সেখানে শতশত মানুষের মধ্যে কেউ একজন মোনাজাত ধরেছে। মুসলমান হিসেবে এখানে যদি কেউ মোনাজাত ধরে, আর আমি যদি এখানে মোনাজাত না ধরে দাঁড়িয়ে থাকি, তাহলেতো আমাকে বলবে বিধর্মী।

“সেই জন্য জেলা প্রশাসকও সেখানে মোনাজাত ধরেছেন। মোনাজাতের মধ্যে কে কী বললো, সেটার দায় জেলা প্রশাসকের ওপর বর্তায় বলে আমি মনে করি না।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসককে একটি শোকজ নোটিস দেওয়া দরকার ছিল। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার দরকার ছিল, তার বক্তব্য নেওয়া দরকার ছিল।

“বক্তব্য সন্তোষজনক নাহলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারত। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে একটি মোনাজাত ও কিছু পত্রিকার সংবাদকে উপলক্ষ করে যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে আমি মনে করি সেটি তড়িঘড়ি। এবং যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।”

তৎকালীন রিটার্নিং কর্মকর্তা মমিনুর সেদিন বলেছিলেন, “আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমি মনে করি, বাংলাদেশ সৃষ্টি হবার পর থেকেই এ নির্বাচনই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এতে সিদ্ধান্ত হবে রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের শক্তির হাতে থাকবে নাকি স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির হাতে যাবে।

“আমি মনে করি যে, রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে যদি থাকে; আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ বলি, বিএনপি বলি জামায়াত বলি- সবাই নিরাপদ থাকবে। আমি মনে করি, বিএনপি-জামায়াতেরও এখন দোয়া করা উচিত শেখ হাসিনা যেন আবার ক্ষমতায় আসেন।”

তার ওই বক্তব্য ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তিনি এ ধরনের অবস্থান নিতে পারেন কি না, ওই বক্তব্য দেওয়ার পর তিনি ভোটের দায়িত্বে থাকতে পারেন কি না, সেই প্রশ্নও ওঠে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “কেউ হঠাৎ মোনাজাত ধরলে তখন কিছু করার থাকে না।”

তবে সে সময় দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, “দুর্গাপূজা উপলক্ষে সম্প্রীতি সভায় আমি বক্তব্য দিয়েছি। সেখানে যে বক্তব্য তা বিকৃত করা হচ্ছে। অন্য বিষয়ের সাথে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এটা ডিসটর্ট করা হচ্ছে। আর কিছু বলতে চাই না।”

এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে ভোটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় নির্বাচন কমিশন।

জেলা প্রশাসককে সরিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামানকে দায়িত্ব দিয়ে ‘চট্টগ্রাম জেলার জেলা পরিষদের নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার পরিবর্তন সংক্রান্ত সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি সচিবালয়।

এরপর ২১ সেপ্টেম্বর ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সুধিসমাজ’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসকের পক্ষে বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

‘ভূমিদস্যুদের’ বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় জেলা প্রশাসক মমিনুরকে বিপাকে ফেলে তাকে চট্টগ্রাম থেকে বদলির ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে ওই সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের একাধিক সংগঠক জেলা প্রশাসকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ইতিমধ্যে কর্মসূচি পালন করেছে।

‘বিশৃঙ্খলা হলে ছাড় নয়’

হাছান মাহমুদ বলেন, “ঠাকুরগাঁও গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের পাকিস্তানই ভালো ছিল বক্তব্য এবং ঢাকায় লাঠি ও রডের মাথায় জাতীয় পতাকা লাগানো একইসূত্রে গাঁথা। তারা জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি অশ্রদ্ধা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। দুটির মধ্যে সম্পর্ক আছে।”

তিনি বলেন, “বিএনপি বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা করছে, মুন্সীগঞ্জে নিজেদের কর্মীকে নিজেরা মেরেছে। তাদের এখন উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রয়োজনে নিজেদের কর্মীদের নিজেরা মেরে দেশে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালানো।

“সেটা যদি বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের নামে আবারো করার অপচেষ্টা চালায় সেগুলো সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে, জনগণও তাদের প্রতিহত করবে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”

জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. বদিউল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান, মুহাম্মদ মাহমুদ উল্লাহ মারূফ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরোয়ার কামাল দুলু, জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুল আলম, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য, জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ।

আরও পড়ুন:

Also Read: চট্টগ্রামের ডিসির পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আ জ ম নাছির

Also Read: জেলা পরিষদ ভোট: চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা হলেন ইসি থেকে

Also Read: জেলা পরিষদ নির্বাচন: ভোটের দায়িত্ব থেকে সরানো হচ্ছে চট্টগ্রামের ডিসিকে

Also Read: হঠাৎ মোনাজাত, কিছু করার ছিল না: চট্টগ্রামের ডিসি