আইফোনসহ দামি মোবাইলের ক্ষেত্রে তিনি সহায়তা নিতেন দুই বিদেশি সহযোগীর।
Published : 29 Feb 2024, 05:41 PM
বিভিন্ন সময়ে মোবাইল ফোনের আইএমইআই বদলানোর ‘কারিগর’ দেশে ধরা পড়লেও এবার চট্টগ্রামে এমন একজনকে ধরা হয়েছে; যার আছে বিদেশি প্রশিক্ষণ, বিদেশি সহযোগীও।
পুলিশের ভাষ্য, তথ্যপ্রযুক্তিতে স্নাতক এ যুবক আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) পাল্টানোর কাজে বিদেশি সফটওয়্যারও কিনেছেন।
চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী মৌসুমী আবাসিক এলাকায় বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে সরোয়ার হোসেন সুজন ওরফে শাহন (৩১) নামের এ যুবককে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা।
তার কাছ থেকে আইএমইআই বদল করা ৫২টি মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) আব্দুল মান্নান মিয়া জানান, গ্রেপ্তার শাহন চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস-ইউআইটিএস থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এ কারণে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং নিয়ে তার জানাশোনা আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “প্রথমে ‘শখের বশে’ মোবাইল ফোনের আইএমইআই পরিবর্তন করলেও এখন সেটি তার (শাহনের) পেশা। নগরীর অলংকার শপিং কমপ্লেক্সে তার একটি মোবাইল বিক্রির দোকানও আছে।
“মোবাইল চোর ও ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কিনে সেগুলোর আইএমইআই পাল্টে নিজের দোকানে কিংবা অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করেন।”
শাহনের আইএমইআই পাল্টানোর কারবারের সঙ্গে পাকিস্তানি ও ইন্দোনেশিয়ার মোবাইল টেকনিশিয়ানদের যোগ পেয়েছে পুলিশ।
অতিরিক্ত কমিশনার মান্নান বলেন, “শাহন মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করতে না পারলে তাদের (বিদেশি সহযোগীদের) সাথে যোগাযোগ করে সেগুলোর নম্বর পাল্টে ফেলেন। এজন্য তাদের তিনি ডলারে অর্থ পরিশোধ করেন।“
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিভিন্ন সময়ে অনেকের মোবাইল ফোন হারানো কিংবা চুরি হলে সেগুলো উদ্ধার করতে আইএমইআই প্রয়োজন। কিন্তু পাল্টে ফেললে সেগুলো আর উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।”
‘দক্ষ’ হতে অনলাইনে ‘প্রশিক্ষণ’
শাহন ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকানোর পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। শিক্ষকতা করার কথাও পুলিশের কাছে তুলে ধরেছেন। বলেছেন, প্রোগ্রামিংসহ তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে ভালো ধারণা থাকায় একসময় তার আইএমইআই পাল্টানোর কৌশল শেখার আগ্রহ জন্মায়।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (পশ্চিম) তারেক আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাহন জানিয়েছে-ফেইসবুকের মাধ্যমে বছর খানেক আগে তার সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার এক মোবাইল টেকনিশিয়ানের পরিচয় হয়। তার (বিদেশির) কাছ থেকে ৫০০ ডলারের বিনিময়ে শাহন একটি সফটওয়্যার ইনস্টল করে নেন নিজের ল্যাপটপে। পাশাপাশি অনলাইনে প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন।
“এরপর পাকিস্তানি মোবাইল টেকনিশিয়ানের কাছ থেকেও একইভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নিজে কোনো আইএমইআই পাল্টাতে না পারলে তার দ্বারস্ত হন শাহন। টিমভিউয়ার (স্ক্রিন শেয়ারিং) সফটওয়্যারের মাধ্যমে তাদের সাথে যুক্ত হয়ে মোবাইল ফোনের আইএমইআই পাল্টে নেন।”
এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আইএমইআই পাল্টানোর আরও অনেক মোবাইল কারিগর চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। তারা মূলত সাধারণ মানের মোবাইল ফোনের আইএমইআই পাল্টাতে পারলেও শাহন সবধরনের মোবাইল ফোনের আইএমইআই পাল্টাতে পারেন।”
পুলিশ বলছে, শাহন নিজে যেমন চোরাই মোবাইল সংগ্রহ করে আইএমইআই পাল্টিয়ে বেচতেন, তেমনই চোরাই মোবাইলের অনেক ক্রেতাও তার মাধ্যমে আইএমইআই পাল্টাতেন। এজন্য তিনি ফোনভেদে ১ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিতেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা তারেক বলেন, “আগে আমাদের কাছে ধারণা ছিল, আইফোন এবং বেশি দামি মোবাইল ফোনের আইএমইআই পালটানো যায় না। কিন্তু শাহন সব ধরনের আইএমইআই পাল্টাতে পারেন।
“দামি ফোনের বেশির ভাগ সে তার পরিচিত বিদেশি দুই মোবাইল টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে করিয়ে নেন। বিনিময়ে তিনি তাদের অর্থ পরিশোধ করেন।”