চট্টগ্রামে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, আটক ২০

সংঘর্ষের খবরে তড়িঘড়ি করে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করেন বিএনপি নেতারা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2023, 01:39 PM
Updated : 16 Jan 2023, 01:39 PM

চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

সোমবার বিকালে নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড়ে সংঘর্ষে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন; আটক করা হয়েছে অন্তত ২০ জনকে।

বিক্ষোভের সময় ট্রাফিক পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়; সড়কে যানবাহন ও দোকান ভাংচুর করা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছুঁড়েছে।

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ট্রাফিক পরিদর্শক বিপ্লব বড়ুয়া, কোতোয়ালী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুর রহমানও আছেন।

১০ দফা দাবি আদায় এবং বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বেশ কয়েক বছর ধরে তারা দলীয় কার্যালয়ের সামনের মাঠে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলেও সোমবার ওই কার্যালয়ের সামনের সড়কে মিনি ট্রাকে মঞ্চ তৈরি করে বক্তব্য রাখছিলেন।

এতে অংশ নিতে বিভিন্ন দিক থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিলসহ সমাবেশে যোগ দিতে আসছিলেন।

এরমধ্যে বিকাল সাড়ে ৩টার কিছু পরে সমাবেশ স্থলের অদূরে কাজীর দেউড়ি মোড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের খবর আসলে তড়িঘড়ি করে সমাবেশ শেষ করেন বিএনপি নেতারা।

এসময় দলটির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে তড়িঘড়ি করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে চলে যেতে দেখা গেছে। সমাবেশে থাকা কর্মীদেরও দ্রুত সমাবেশস্থল ত্যাগ করতে দেখা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাজীর দেউড়ি মোড়ে একটি মিছিল আসার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়া হয়। এসময় সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরা শিশু পার্কের দিকে চলে যান। পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।

সেসময় কাজীর দেউড়ি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে রাখা পুলিশের একটি মোটর সাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেন বিএনপি কর্মীরা। পরে তারা দিকবিদ্বিক ছোটাছুটি শুরু করে বেশকিছু যানবাহন ও দোকান ভাংচুর করে। 

কাজীর দেউড়ি থেকে আলমাস সিনেমা হল মোড়, এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন সড়কে বেশকিছু গাড়ি ভাংচুর করা হয়।

সড়কের এক পাশ বন্ধ করে সমাবেশ চলার সময় অন্যপাশে দুই দিকের গাড়ি চলাচল করায় আগে থেকেই যানজট লেগেছিল। সংঘর্ষের সময় সড়কে আটকে থাকা গাড়িতেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। বিএনপি কর্মীদের ভাংচুরের কবলে পড়েছে চিকিৎসক ও সাংবাদিকের গাড়িও।

নগর পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপি নেতারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তাদের কিছু লোকজন কাজীর দেউড়ি মোড়ে আমাদের পুলিশের ওপর হামলা করে। গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। 

"এ সময় আমরা তাদের ধাওয়া করে নিবৃত করি। কাজীর দেউড়ি ও দলীয় কার্যালয়ের আশেপাশে অভিযান চালিয়ে অন্তত ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।”

হামলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ট্রাফিক পরিদর্শক বিপ্লব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। আরও তিন কনস্টেবলকেও সেখানে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলার শিকার চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলা পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সাইদুল ইসলাম জানান, ঢাকা অফিসের এক সহকর্মীসহ আলমাস মোড় হয়ে আসকার দিঘী এলাকায় অফিসে যাওয়ার পথে তাদের গাড়িসহ বিভিন্ন গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এসময় তাদের গাড়ির সামনের ও পাশের গ্লাস ভেঙে যায়।

জাহাঙ্গীর আলম নামে এক চিকিৎসক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি নিজে গাড়ি চালিয়ে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের দক্ষিণ গেইট হয়ে যাচ্ছিলাম লালখান বাজারের দিকে। এসময় কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোকজন এসে এলোপাথাড়ি গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে।

“আমার গাড়ির সামনে অপর একটি গাড়ি ও কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুরের কবলে পড়লে আমি দ্রুত গাড়ি ঘুড়িয়ে উল্টোপথে চলে আসি। এসময় তাদের ছোঁড়া ইটে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়।”

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ চিকিৎসক। তার অভিযোগ, “জনগণের স্বার্থে সমাবেশ করার কথা বললেও তারা বিনা কারণে সাধারণ লোকজনের গাড়ি ভাঙচুর করেছে।”

সংঘর্ষের বিষয়ে নগর বিএনপি'র আহ্ববায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের অভিযোগ, “আমাদের সমাবেশ করার অনুমতি দিলেও কাজীর দেউড়ি মোড়ে ‘ব্যারিকেড’ দিয়ে যুবদলের একটি মিছিল আটকে দেওয়া হয়, তাদের পেছনে স্বেচ্ছাসেবক দলেরও একটি মিছিল ছিল। যুবদল কর্মীরা ব্যারিকেড ভেঙ্গে আসার চেষ্টা করলে ‘বিনা উস্কানিতে’ পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও ছররা গুলি ছুঁড়লে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।

“কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ বিনা উস্কানিতে হামলা চালিয়েছে। হামলায় আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। হামলায় এক কর্মীর চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছে।”