চাকরির বেতন ও কিছু টাকা জমিয়ে ২০১৮ সালে চার লাখ টাকায় দুটি গাভি কিনে ব্যবসা শুরু করছিলেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।
Published : 22 Apr 2023, 08:50 PM
ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর শেষ করে চট্টগ্রামের তরুণ এস এম আসাদ যোগ দিয়েছিলেন বেসরকারি একটি ব্যাংকে, তিন বছর চাকরি করে ইস্তফা দিয়ে এখন হয়েছেন খামারি।
ব্যাংকার থেকে খামারি বনে যাওয়া আসাদ ‘সয়েল মিল’ ব্রান্ডের নাম দিয়ে দই, দুধ আর মাংস বিক্রি করেন। তার আয় চাকরির বেতনের চেয়েও বেশি।
তবে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে খামারি হওয়ার পেছনের গল্পটা তেমন সুখের ছিল না বলে জানালেন হাটহাজারি উপজেলার ফতেয়াবাদের বাসিন্দা আসাদ। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের তুচ্ছতাছিল্যকে দূরে রেখে এগিয়ে যাওয়ার গল্প বলেছেন এই উদ্যোক্তা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, ২০১১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে চাকরির চেষ্টা করেন। পরে বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকে যোগ দেন ২০১৭ সালে।
এর মধ্যে চাকরির বেতন ও কিছু টাকা জমিয়ে ২০১৮ সালে চার লাখ টাকায় দুটি গাভি কিনেছিলেন তিনি।
আসাদ বলেন, “২০১৮ বাড়ির পাশে মসজিদের ৪০ শতক জমি ভাড়া নিয়ে গরু পালন শুরু করেছি। এই উদ্যোগে সময় দেওয়ার জন্য ২০২০ সালে চাকরি ছেড়ে দিই। বিষয়টি প্রথমে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা ভালোভাবে নিতে পারেননি। বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী অনেকেই বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষও করেছিলেন।”
তিন বছরের মধ্যে ব্যবসার পরিধি বেড়েছে জানিয়ে আসাদ বলেন, বর্তমানে তার খামারে গরুর সংখ্যা ১৮টি।
“প্রথমে গরুর দুধ বিক্রি করতাম। সেখান থেকে শুরু করি দই উৎপাদন। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থান থেকে অর্ডার নিয়ে জবাই করা গরুর মাংসও বিক্রি করি। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে গরুও বিক্রি করি।”
আসাদ বলেন, “ছোটবেলা থেকে এলাকায় বিভিন্ন সামজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় পরিচিতিকে সম্বল করে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আশা ছিল আমার খামারের দুধ এলাকার দোকানিরা রাখবেন। এখন প্রতিদিন গড়ে ১০০ লিটার দুধ বিক্রি হয়।”
দুধ থেকে দই
আসাদ জানান, কর্মচারীদের ওপর নির্ভর না করে নিজেও বিভিন্ন দোকানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তবে গরু পালনে যে খরচ, শুধু দুধ বিক্রি করে সে টাকা আয় করা সম্ভব হচ্ছিল না। সে কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়েছিলেন।
“২০২০ সালে লকডাউন শিথিল করার পর একটা দোকানে দুধ সরবরাহ করতে গেলাম। ওই সময় দোকানের সামনে এক লোক আমার কাছে জানতে চাইলেন, দুধ বিক্রি করে কেমনে পোষানো সম্ভব? ওই সময় তিনি আমাকে দই উৎপাদনের পরামর্শ দেন।
“শহীদ নামের ওই ব্যক্তি প্রবাসে থাকতেন। দেশে এসে লকডাউনের কারণে আর যেতে পারছিলেন না। তিনি দই তৈরি করতে পারার বিষয়টি আমাকে জানান।”
শহীদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে পরদিন তার মাধ্যমে তিন লিটার দুধ দিয়ে ২২ কাপ দই তৈরি করান আসাদ। ছয় কাপ ঘরে রেখে বাকি ১৬ কাপ দই দোকানে বিক্রি করতে দেন। ক্রেতাদের পছন্দ হওয়ায় দোকানিরা আরও দইয়ের চাহিদার কথা জানায়।
“যার কারণে পরদিন ছয় লিটার, তার পরে ১৫ লিটার দুধ থেকে দই উৎপাদন করি, যা এখন প্রায় ১০০ লিটারে গিয়ে ঠেকেছে।”
শহীদ পরে বিদেশে চলে যাওয়ায় নিজেই দই বানানোর প্রক্রিয়া শিখে নেন আসাদ। তিনি বলেন, দই উৎপাদন থেকে তার মাসিক মুনাফা হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। তবে প্রতিবছর রোজার মাসে তা চার থেকে পাঁচগুণ বেড়ে যায়। এ বছর রোজায় তার দুই লাখ টাকার মত মুনাফা হয়েছে।
দইয়ের আরও চাহিদা থাকলেও অতিরিক্ত দুধ না থাকায় দইয়ের জোগান দেওয়া সম্ভব হয় না বলে জানান আসাদ। খামারে থাকা গরুর জন্য ভাড়া করা ৪০ শতক জমির মধ্যে ঘাসও উৎপাদন করেন তিনি।
বেড়েছে পরিধি
দই উৎপাদনের পাশাপাশি ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর কথা জানালেন আসাদ। এখন বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মাংসের অর্ডার নিয়ে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করেন।
“কিছুদিন পরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে অনলাইনে গরুর মাংসের অর্ডার আসে। তাদের চাহিদামত গরু জবাই করে মাংস সরবরাহ করি। শুধু গত বৃহস্পতিবাই ৪৩০ কেজি মাংস সরবরাহ করেছি।”
আসাদ জানান, প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তিনি এখন গরুও বিক্রি করেন। গত বছর কোরাবনির ঈদে ৪৫টি গরু বিক্রি করেছেন তিনি।
“কোরবানির ঈদে বিক্রি করা গরুগুলো আমার খামারের না, রোজার আগে বিভিন্ন স্থান থেকে গরু সংগ্রহ করে কয়েক মাস আমার খামারে রেখে লালনপালন করি। সেগুলো লাভে বিক্রি করলে ভালো অংকের একটা টাকা হয়।”
ব্র্যান্ডের নাম ‘সয়েল মিল’
আসাদ বলেন, “মানুষসহ সকল জীবের খাদ্যের উৎস হল মাটি। যার কারণে আমি আমার ব্রান্ডের নাম দিয়েছি ‘সয়েল মিল’। দুধ, দই বিক্রি হয় এ সয়েল মিল ব্র্যান্ডের নামে।”
খামারের পরিসর আরও বাড়াতে চান বলে জানান আসাদ। বাড়াতে চান ব্যবসার পরিধিও। চাকরি ছেড়ে ব্যবসাতেই স্বাবলম্বী হয়ে আর্থিকভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে বিশ্বাস তার।