সম্প্রীতির প্রার্থনায় সাগর তটে দেবীকে বিদায়

ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় সনাতন ধর্মবলম্বীদের যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, তার সাঙ্গ হলো বুধবার বিজয়া দশমীতে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2022, 10:28 AM
Updated : 5 Oct 2022, 10:28 AM

মনের কলুসতাকে ঝেড়ে ফেলে আগামীর পৃথিবী হবে সম্প্রীতির ও সুন্দর- এই প্রার্থনায় আগামী বছরের অপেক্ষায় এবার দেবী দুর্গাকে বিদায় জানালো চট্টগ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।

ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় হিন্দুদের যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, তার সাঙ্গ হলো বুধবার বিজয়া দশমীতে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, নবমী পূজা সম্পন্নের পর মর্ত্য ছেড়ে নিজালয়ে যাত্রা করেন দেবী দুর্গা। দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় ত্রিনয়নীর পূজা।

শাস্ত্র মতে, এবার দেবী দুর্গা কৈলাশ থেকে সপরিবারে মর্ত্যলোকে এসেছেন গজে (হাতি) চড়ে, আর ফিরে গেছেন নৌকায়।

বিজয়া দশমীর সকালে অঞ্জলির পর নগরীর বিভিন্ন মণ্ডপে দেবী দুর্গাকে তেল সিঁদুর আর পান চিনিতে অশ্রু সজল নয়নে বিদায় জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। দুপুর থেকে ট্রাকে কিংবা ভ্যানে করে দেবী দুর্গার প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন স্থানে।

চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিবছরের মতো এবারও বিসর্জনের প্রধান স্থান ছিল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট, অভয়মিত্র ঘাট এবং বিভিন্ন এলাকার পুকুরেও দেওয়া হয়েছে বিসর্জন।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও উৎসব দেখতে ভিড় করেন। শিশু-কিশোর ও তরুণ-যুবক সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে মিলনমেলায় পরিণত হয় সৈকত প্রাঙ্গণ।

ঢাকের বাদ্য আর কাঁসার ঘণ্টায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো সৈকত ও আশপাশের এলাকা। পান-সিদুঁর আর মিষ্টিমুখ করিয়ে চারদিনের আনন্দ শেষে অশ্রুজলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিদায় দেন দেবীকে।

বিসর্জনকে ঘিরে সৈকত এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করা হয়। সৈকতের মূল পয়েন্টে প্রতিমাবাহী গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

গতবছর পূজায় কুমিল্লায় কোরআন শরীফের কথিত অবমাননার অভিযোগ তুলে যে সাম্প্রদায়িক উস্কানিকে কেন্দ্র করে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছিল। বিসর্জনের দিনেও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ঘটেছিল সাম্প্রদায়িক হামলা। পূজার আনন্দ পরিণত হয়েছিল বিষাদে।

এবারের পূজাতেও দেবীর দুর্গার আরাধনায় শঙ্কা ছিল হিন্দুধর্মাবলম্বীদের। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) শাকিলা সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ১৩৬টি প্রতিমা বিসর্জনের কথা আছে। সেজন্য সৈকতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

নগরীতে এবারে ব্যক্তিগত, ঘট পূজাসহ ২৮৩টি পূজা হয়েছে। জেলায় পূজা হয়েছে ২ হাজার ৬২টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৫৭টি প্রতিমা পূজা এবং বাকিগুলো ঘটপূজা হয়েছে।