চট্টগ্রামে মাদক কারবারি ছিনতাই: নাজমার মৃত্যু ‘গুলিতে’

পুলিশ বলছে, নাজমা কার গুলিতে নিহত হয়েছেন, তা তদন্তে ওঠে আসবে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2022, 03:21 PM
Updated : 20 Nov 2022, 03:21 PM

চট্টগ্রামে ‘মাদক কারবারিকে’ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে সংর্ঘষে নিহত নাজমার মৃত্যু হয়েছে ‘গুলিতে’; যিনি পালিয়ে যাওয়া হানিফের বড় বোন বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

রোববার বিকালে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

চান্দগাঁও থানার ওসি মঈনুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “নাজমার ‍মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। তবে কার গুলিতে মৃত্যু হয়েছে সেটা তদন্তের বিষয়। কারণ হামলাকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে।”

শনিবার রাতে ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যিনি মারা গেছেন, তিনি একজন হিজড়া। তবে রোববার জানানো হয়, তিনি একজন নারী, পালিয়ে যাওয়া একজনে বোন তিনি।

রোববার বিকালে নাজমার লাশ হস্তান্তরের সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) মর্গ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গুলিতে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।”

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নগরীর পাঁচলাইশ থানার আওতায় হওয়ায় ওই এলাকার নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় দেখভালের দায়িত্ব পাঁচলাইশ থানা পুলিশের।

সাদেকুর রহমান বলেন, শনিবার রাতে আহত নাজমাকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কাউকে না জানিয়ে সঙ্গে থাকা লোকজন তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, “আমরা ওয়ার্ডে গিয়ে তাকে না পেয়ে খোঁজ নিতে থাকি। এসময় সিসি ক্যামেরায় তাকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে পাই।

“পরে তাকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সেখানে তার মৃত্যুর পর লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।”

পরিদর্শক সাদেকুর বলেন, “প্রথমে আমরা শুনেছি নাজমা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। লাশ উদ্ধার করে আনার পর নিশ্চিত হয়েছি তিনি নারী ছিলেন।”

শনিবার সন্ধ্যায় কালুরঘাট এলাকা থেকে পাঁচ হাজার ইয়াবাসহ দেলোয়ার ও হানিফ নামে দুই ‘মাদক কারবারিকে’ গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানিয়েছিল চান্দগাঁও থানা পুলিশ।

এ সময় তাদের সহযোগী মাদক কারবারি ও কিছু হিজড়াকে জড়ো করে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে পুলিশের ভাষ্য।

দেলোয়ার-হানিফের সহযোগী ও হিজড়ারা ‘একযোগে ফাঁড়িতে হামলা চালালে’ সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে; এতে আহত নাজমা নামে এক নারীর মৃত্যু হয় বলে জানায় পুলিশ।

রোববার কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার কয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যার দিকে পুলিশ দুজনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের পেছন পেছন বেশকিছু নারী, পুরুষ ও হিজড়া এসে ফাঁড়ির সামনে জড়ো হয়।

এসময় ফাঁড়িতে অল্প কয়েকজন পুলিশ সদস্য থাকলেও আটক করে আনা ব্যক্তিদের পক্ষে কয়েকশ লোক আসে; তারা ঢিল ছুড়তে শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

হামলাকারীরা মূলত কালুরঘাট রেল লাইনের ৮ ও ৯ নম্বর ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা; হামলাকারীদের সাথে বেশকিছু হিজড়াও অংশ নিয়েছিল বল জানান তারা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের মর্গে নাজমার মা রুনু বেগম জানান, পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জে তাদের বাড়ি হলেও বেশ কয়েক দশক ধরে তারা চট্টগ্রামে বসবাস করছেন। তার সন্তানদের জন্মস্থান চট্টগ্রাম।

তিনি বলেন, কালুরঘাট ৯ নম্বর ব্রিজ এলাকায় তাদের বাসা। স্বামী কৃষিকাজ করলেও ছেলে হানিফের অটোরিকশা আছে। নাজমাও স্বামী সন্তান নিয়ে তাদের সঙ্গে থাকতেন। নাজমার তিন ও সাত বছর বয়েসী দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

মর্গে রুনু বেগমের সাথে থাকা রায়হান নামে এক কিশোর নিজেকে হানিফের অটোরিকশার চালক পরিচয় দিয়ে শনিবার রাতের ঘটনার বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, হানিফ শনিবার বিকালে দেলোয়ারকে নিয়ে বোয়ালখালী গিয়েছিলেন একটি রাজনৈতিক সভায় যোগ দিতে। সেখান থেকে ফেরার পথে কালুরঘাট ব্রিজে পুলিশ তাকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।

“হানিফকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে নাজমা ফাঁড়িতে যায়। এ সময় তিনি ঢুকতে গেলে তাকে বাধা দেওয়া হয় এবং কাউকে আটক করা হয়নি বলে পুলিশ জানায়।”

রায়হানের দাবি, পুলিশ কাউকে আটক করা হয়নি জানালেও তারা নিচ থেকে জানালা দিয়ে হানিফকে তৃতীয় তলায় দেখেছিলেন। এসময় লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে।

নাজমার মা রুনু বেগমের অভিযোগ, পুলিশ রাতে তাদের এলাকায় গিয়ে ব্যাপক মারধর করে। ওই সময় তার অপর দুই ছেলেমেয়ে আকলিমা ও ইব্রাহীমকেও পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

Also Read: চট্টগ্রামে ‘মাদক কারবারি ছিনতাইয়ের’ ঘটনায় দুই মামলা

Also Read: 'মাদক কারবারি' ছিনতাই: পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক নারী নিহত

স্থানীয়দের দাবি, কালুরঘাট এলাকার একটি অংশের মাদকের কারবার ও জুয়া খেলা নিয়ন্ত্রণ করেন হানিফ। তাদের মধ্যে আছেন বেশ কয়েকজন হিজড়াও। সড়কে বিভিন্ন যানবাহন থেকে হিজড়াদের তোলা একটি টাকার ভাগ পান হানিফ। পুলিশের সঙ্গেও হানিফের সখ্যতা থাকার কথা শোনা যায়।

এদিকে হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দুই শতাধিক আসামি করে মামলা করেছে।

এছাড়া পুলিশ হামলার পর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন হিজড়াসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন ওসি মঈনুর রহমান।

গ্রেপ্তাররা হলেন- রাব্বি ইসলাম রবিন ওরফে মনি হিজড়া (২২), ফরিদুল ইসলাম ফরিদ ওরফে সুন্দরী হিজড়া (২০), মো. বাদশা ওরফে ববিতা হিজড়া (১৮), আব্দুল জলিল (২০), দিল মোহাম্মদ (১৮), আব্দুর রহমান (১৮), আকলিমা আক্তার আঁখি (৩৫) ও মো ইব্রাহিম (২৮)।