হালদায় আরেকটি মৃত ডলফিন

চট্টগ্রামের হালদা নদীর দক্ষিণ মাদার্শা আকবরিয়া এলাকায় একটি মৃত ডলফিনের সন্ধান মিলেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2021, 03:17 PM
Updated : 27 Dec 2021, 03:17 PM

সোমবার সকালে স্থানীয়রা নদীতে ডলফিনটি ভাসতে থেকে। খবর পেয়ে বিকালে নৌ পুলিশ, হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন এবং বেসরকারি সংস্থা আইডিএফকর্মীরা গিয়ে ডলফিনটির মরদেহ উদ্ধার করে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডলফিনটি বেশ কয়েকদিন আগে মারা গেছে বলে মনে হয়। দেহ পচে যাওয়ায় শরীরে আঘাত ছিল কি না, তা জানা যায়নি। নদীর পাড়ে রাম দাস মুন্সির হাট এলাকায় সেটি মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভোগের অধ্যাপক ও হালদা রির্সাচ কেন্দ্রের সমন্বয়ক মনজুরুল কিবরীয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি হালদায় মৃত ৩৩তম ডলফিন। এটির দৈর্ঘ্য ৩ ফুট এবং ওজন প্রায় ১৫ কেজি।”

শরীর পচে যাওয়ার ডলফিনটির মৃত্যুর কারণ উদঘাটন সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

এ নিয়ে গত পাঁচ মাসে হালদা ও কর্ণফুলী নদী এবং সংলগ্ন শাখা খালে সাতটি মৃত ডলফিনের সন্ধান মিলল।

২৪ অক্টোবর হালদা নদীর আকবরিয়া এলাকায় সবশেষ মৃত ডলফিনটির সন্ধান মেলে। ৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ওই ডলফিনটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

এর আগে ৪ অক্টোবর হালদা নদীর রামদাস মুন্সীর হাট এলাকায় আরেকটি মৃত ডলফিন মিলেছিল। তবে সেটিও পঁচে যাওয়ায় মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে হালদায় ৩৩টি এবং কর্ণফুলীতে ২টি মৃত ডলফিনের সন্ধান মিলেছে।

এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে হালদায় ও শাখা খালে মারা যায় মোট ১৬টি ডলফিন। এরমধ্যে বেশিরভাগের শরীরে আঘাতের চিহ্ন মিলেছিল। সেসময় নদীতে চলাচলকারী বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারের আঘাতে ডলফিন মারা পড়ছিল বলে জানিয়েছিল সংশ্লিষ্টরা।

আগের মত বালুবাহী ড্রেজার না চললেও হালদায় মা মাছ শিকারের জন্য জাল পাতা হয় নিয়মিত। পাশাপাশি নদীর তীর রক্ষায় বসানো ব্লকে এবং নদীতে চলাচলকারী নৌযানের সাথে ধাক্কা খেয়েও ডলফিন মরতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

সোমবার সন্ধ্যায় হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হালদায় এখনও অভিযান চলছে। বালু উত্তোলনকারী নৌকা ও বেশ কিছু মেশিন জব্দ করা হয়েছে। অভিযান শেষে বিস্তারিত জানাব।”

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) গাঙ্গেয় ডলফিনকে বিপন্ন হিসেবে লাল তালিকায় রেখেছে। ২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুসারে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

এই প্রজাতির ডলফিন বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের নদীতে দেখা যায়। এরমধ্যে ভারতের গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র, বাংলাদেশের পদ্মা, সুন্দরবনের আশেপাশের নদী এবং চট্টগ্রামের হালদা ও কর্ণফুলী এর বিচরণ ক্ষেত্র।

ডলফিনের চোখ নেই। মূলত ইকো সাউন্ড দিয়ে এরা চলাফেরা ও খাবার সন্ধান করে। এদের শরীরের গঠনও নরম প্রকৃতির।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর মনজুরুল কিবরিয়া জানান, ২০২০ সালে জরিপ চালিয়ে হালদায় ১২৭টির মতো ডলফিনের উপস্থিতি মিলেছে।