‘ধর্মীয় লেবাসে’ ইয়াবার কারবার

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও নগদ টাকা উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2020, 03:58 PM
Updated : 13 Nov 2020, 03:59 PM

এ ঘটনায় চার জনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, তারা ‘ধর্মীয় লেবাস’ ধরে ইয়াবার কারবার চালিয়ে আসছিল, যাতে এলাকার লোকজন সন্দেহ না করে।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান জানান, বাকলিয়া থানা পুলিশ শুক্রবার বিকালে নতুন চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ওই বাসায় অভিযান চালায়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. ফোরকান ওরফে মাসুদ (৩১), তার স্ত্রী শামীম আরা শমী (২৮), মোবারক হোসেন (৩৮) ও মো. রাসেল (১৮)।

মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ৫ নভেম্বর শাহ আমানত সেতু এলাকা এবং টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বিদেশি পিস্থলসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যারা ‘ইয়াবার বিনিময়ে অস্ত্র সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মজুদ’ করার কথা জানিয়েছিল।

“গ্রেপ্তার দুই জনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের চতুর্থ দিন চলছে আজ। রিমান্ডে তারা তাদের চক্রের সাথে এই ফোরকানের সম্পৃক্ততার কথা বলে।”

সেই তথ্যের ভিত্তিতে সকালে শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে ফোরকান ও মাসুদকে এক হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে নতুন চান্দগাঁও আবাসিকের ওই বাসায় ইয়াবা রাখার তথ্য দেয় পুলিশকে।

উপ-কমিশনার মেহেদী বলেন, সেই তথ্যে আবাসিক এলাকার চার নম্বর রোডের হাজী সাহেবের বিল্ডিং নামে পরিচিত একটি ভবনের তৃতীয় তলায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে ২৩ হাজার ২০০ ইয়াবা এবং নগদ আট লাখ ৮৩ হাজার ৬২২ টাকা এবং তিনটি ব্যাংকের ১২টি চেক বই জব্দ করা হয়।

এছাড়া ওই বাসায় কিছু চুম্বক পাওয়া গেছে, যেগুলো যানবাহনের সিটের নিচে কিংবা ব্যাগের সঙ্গে লাগিয়ে কৌশলে ইয়াবার পোটলা বহন করা হত বলে পুলিশের ধারণা।

অভিযান শেষে সন্ধ্যায় মেহেদী সাংবাদিকদের বলেন, যে বাসায় অভিযান চালানো হয়, সেটি ফোরকানের ভাড়া করা বাসা। সেখানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি থাকতেন। এলাকায় ধার্মিক ব্যক্তি হিসেবেই তিনি পরিচিত। 

“মূলত ধর্মীয় লেবাস ব্যবহার করে তারা ইয়াবার কারবার চালাত। বাসায় বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় বই রেখে তারা সাজিয়েছিল, যাতে কেউ তাদের সন্দেহ না করে।”

গ্রেপ্তারদের মধ্যে এক জনের সাথে মিয়ানমারের এবং আরেকজনের সাথে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সরাসরি যোগাযোগ আছে। তারা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ইয়াবা আনত বলে জানান উপ-কমিশনার মেহেদী।

তিনি বলেন, “এসব ইয়াবা ফোরকান বাসায় এনে মজুদ করে রাখত। সেখান থেকে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করত। তার বাসায় বইয়ের আলমারিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ইয়াবাগুলো উদ্ধার করা হয়। নগদ টাকা ছাড়াও ফোরকান ও তার স্ত্রীর পাসপোর্ট, চেক বইসহ বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।”

ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য শাহিদা আক্তার। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ফোরকানকে তিনি একজন ধার্মিক ব্যক্তি হিসেবেই চিনতেন।

“সবার সাথে মার্জিত ভঙ্গিতে কথা বলেন। বিভিন্ন সময়ে তাকে রাস্তায় আড়ালে গিয়ে টেলিফোনে কথা বলতে দেখা গেছে, তবে সেটা নিয়ে তখন সন্দেহ হয়নি।”  

পাশের ভবনের বাসিন্দা মো. সেলিম জানান, বহদ্দারহাট এলাকায় ফোরকানের একটি মুদি দোকান আছে। এলাকায় সবাই তাকে ধার্মিক ব্যক্তি হিসেবে ‘সমীহ’ করতেন। প্রতিদিনই তিনি এলাকার লোকজনকে নামাজ পড়তে এবং তবলিগে যাওয়ার দাওয়াত দিতেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফোরকান ফেনী, কক্সাবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ইয়াবার কারবার চালিয়ে আসছিলেন বলে তথ্য পেয়েছেন তারা। সেসব এলাকায় তিনি নিজের ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করতেন।

বাকলিয়া থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, তারা অভিযানে গেলে ফোরকানের স্ত্রী বইয়ের আলমারি, ব্যাগসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ইয়াবাগুলো বের করে দেন। তার স্ত্রী চট্টগ্রাম কলেজ থেকে পদার্থ বিদ্যায় স্মাতকোত্তর করেছেন। সরকারি চাকরির জন্য একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।