মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে গণপরিবহনে করোনাভাইরাস মহামারীর আগের ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন শুরু হয়।
তবে নির্দিষ্ট আসনের বেশি যাত্রী নেওয়ায় বারণ থাকলেও পাদানিতে ঝুলিয়েও যাত্রী নিতে দেখা গেছে চট্টগ্রামে। গাড়িচালক ও পরিবহনসকর্মীদের অধিকাংশের মুখে ছিল না মাস্ক।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত মার্চে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ১ জুন থেকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালানো শুরু হয়, সেই কারণে ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার থেকে পূর্বের ভাড়ায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়।
এতে বলা হয়েছে পরিবহনের চালক-সহকারীকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে। বাসে বা গণপরিবহনে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না।
চট্টগ্রামে সারাদিনে দেখা গেছে, মিনি বাস, হিউম্যান হল্যারগুলো নির্দিষ্ট আসনের অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছে, টেম্পু ও হিউম্যান হল্যারের পাদানিতে ঝুলিয়ে যাত্রী নেয়া হয়েছে।
সকাল ও বিকালে বিশেষ করে অফিসে যাওয়া ও ফেরার সময়ে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় নির্দিষ্ট আসনের বাইরে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া হয়েছে।
কোনো কোনো রুটের যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে নগরীর চান্দগাঁও থেকে আন্দরকিল্লায় এক নম্বর রুটের বাসে চড়ে এসে একটি বইয়ের দোকানের কর্মকর্তা আকাশে জামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বাসের সিটের বাইরে অনেককেই গা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। চালকের মুখে মাস্ক থাকলেও সহকারীর মুখে তা ছিল না।
করোনাভাইরাস অতি ছোঁয়াচে বলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাই আক্রান্ত হওয়া ঠেকানোর প্রধান উপায়; এছাড়া জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শও দেন বিশেষজ্ঞরা।
জামাল বলেন, “জীবিকার প্রয়োজনেই বাসে উঠতে হচ্ছে। এভাবে গণপরিবহনে চড়লে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হবার ঝুঁকি বাড়বে বই কমবে না।”
নগরীর বহদ্দারহাট থেকে টাইগার পাসে আসা যাত্রী ফজলুর রহিম জানান, ভাড়া আগের মতো নেওয়া হলেও বাসের ভেতরে দাঁড়ানো অবস্থায় যাত্রী নেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী রোহিত জিইসি মোড় থেকে টাইগারপাস এসেছেন হিউম্যান হল্যারে করে।মূল ভাড়া সাত টাকা হলেও তার কাছ থেকে ১০ টাকা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তার।
গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি বাস-মিনি বাস হিউম্যান হল্যার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অর্থ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসনের বেশি যাত্রী না নেওয়ার নির্দেশনা দেয়া আছে। তারপরও অনেকে মানছেন না।বিষয়টি মালিকপক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “যাত্রীরাও অনেকেই জোর করে বাসে উঠে পড়েছেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে চান না।”
শুধু মহানগরী এলাকা নয় জেলার ভেতরে বিভিন্ন দূরপাল্লার বাসেও অনেকক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি ঠিক মতো মানা হচ্ছে না।
এ অভিযোগে নগরীর শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন বাস টার্মিনালে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হাসান।
অভিযানে দেখা গেছে, কয়েকটি পরিবহন আগের ভাড়ার সঙ্গে কিছু ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করছে। চট্টগ্রামের পটিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা উপজেলায় যাবার কয়েকটি পথের বাসগুলো এ বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।
আলী হাসান বলেন, হানিফ, জনতা, বিলাসী পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। এসব পরিবহনে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী না নেওয়া এবং দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। একইসাথে স্বাস্থ্যুবিধি মানার জন্যও তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অভিযানে আগের তুলনায় ভাড়া বাড়তি নেয়া অপরাধে বিভিন্ন পরবিহনকে মোট তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয় বলে জানান তিনি।