রাতভর কোভিড-১৯ সনদের জন্য অপেক্ষার পর ফ্লাইট ‘মিস’

সার্ভারে ত্রুটির কারণে রাতভর অপেক্ষা শেষে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২০ ঘণ্টার পর কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার প্রতিবেদন পেলেও ২০-২৫ জন বিদেশগামী তাদের নির্ধারিত ফ্লাইট ধরতে পারেননি।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2020, 11:27 AM
Updated : 27 July 2020, 11:27 AM

রোববার সারারাত চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অবস্থান করেন প্রায় আড়াইশ বিদেশগামী। সোমবার সকাল ১১টার দিকে প্রতিবেদন পেয়েছেন তারা।

নির্ঘুম রাত কাটিয়ে শেষ মুহূর্তে অনেক কষ্টে কেউ কেউ বিমান ধরতে পেরেছেন। তবে এমন ভোগান্তিতে চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিদেশগামী যাত্রীরা।

এসব যাত্রীদের সবারই সোমবার বিভিন্ন দেশের ফ্লাইট নির্ধারিত ছিল। বিলম্বে ফল পাওয়ার কারণে অনেকেরই টিকেট ফেরত দিতে হয়েছে।

দুবাইপ্রবাসী শাহাদাত হোসেন সাদেক চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তিনি রোববার বেলা দুইটায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আসেন প্রতিবেদন নিতে। নির্ধারিত সময় ছিল বেলা ৩টায়।

শাহাদাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় দুই-আড়াইশ লোক ছিল রাতে। ভোর ৫টা পর্যন্ত সেখানে ছিলাম। কিন্তু ভোরেও রিপোর্ট পাইনি। যখন চলে আসি তখনও ৩০-৪০ জন দাঁড়িয়ে ছিলেন।

“এরপর আমার বড় ভাইকে রেখে আমি বাসায় চলে যাই। তার বিমানবন্দরে রওনা হই। সকাল সোয়া ১১টায় আমার চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট। ১১টার সময় ভাই রিপোর্ট নিয়ে আমাকে হোয়াটস এপে পাঠায়। সেটা প্রিন্ট করে আমি বিমানে উঠি।”

বেলা সোয়া ২টার সময় শাহাদাত হোসেন সাদেক ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বলেন, “আড়াইটায় আমার ফ্লাইট ছাড়বে। আমি ভোরে সেখানে ভাইকে রেখে চলে না এলে আজ আর বিমান ধরতে পারতাম না। ছয় মাস পরে আমি কাজে ফিরছি।

“এত টাকা ফি দিয়ে আমরা হয়রানির স্বীকার হলাম। সকাল পর্যন্ত যারা রিপোর্টের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন, তারা অনেকেই ফ্লাইট মিস করেছেন। আমাদের জন্য এই টেস্টের সময় নির্ধারিত। আমরা সময়মত নমুনা জমা দিয়েছি, তারপরও এত কষ্ট পেতে হলো। এটা প্রবাসীদের প্রাপ্য না।”

নগরীর বাসিন্দা প্রবাসী ব্যবসায়ী কামাল হোসেন ৩০ জুলাই ওমান যাবেন।

কামাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গতকাল (রোববার) নমুনা দিতে গেলে শুরুতে বলেছিল ২৮, ২৯ ও ৩০ জুলাই যাদের ফ্লাইট তাদের নমুনা নেয়া হবে। এরপর দুই তিনবার নানা রকম কথা বলে বেলা দুইটার সময় বলা হলো আমাদের নমুনা নেয়া হবে মঙ্গলবার।

“রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে লোকজন এসেছেন অনেক কষ্ট করে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত লাইনে থেকে তারা ফেরত গেছেন।”

ওমান প্রাবসী ব্যবসায়ী তৌহিদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছয় মাস ধরে আমি দেশে, আমার পরিবার সেখানে। অনেক কষ্টে ঢাকায় ওমান দূতাবাসে ঘুরে যাওয়ার অনুমোদন নিয়েছি।

“৩০ তারিখ ফ্লাইট। শনিবার গেছি ফি জমা দিতে। বলেছে পরদিন যেতে। গতকাল লাইনে ছিলাম সকাল সাতটা থেকে ১টা পর্যন্। বয়স্করা আতঙ্ক নিয়ে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তারপর বললো মঙ্গলবার যেতে।”

তিনি বলেন, প্রবাসীদের জন্য এভাবে যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা ঠিক নয়। গতকাল রাতে অনেকে অপেক্ষা করে রিপোর্ট না পেয়ে ফ্লাইট মিস করেছেন।

“এখন ভয়ে আছি। রিপোর্ট ঠিক সময় মত না পেলে কি করব? আমার পরিবার ওখানে আমার ফেরার অপেক্ষায় আছে।”

ভোগান্তির বিষয়টি স্বীকার করে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরীক্ষা শেষে আমাদের প্রতিবেদন রেডি ছিল। সার্ভারের (ঢাকায়) সমস্যার কারণে সময়মত রিপোর্ট দিতে পারিনি। যেহেতু তারা বিদেশে যাবেন সার্ভারে এন্ট্রি দিতে না পারলে তারা ওই প্রতিবেদন দিয়ে যেতেও পারবেন না।” 

সোমবার সকাল ১১টায় প্রায় তিনশ জন বিদেশগামীর কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল দেয়ার কথা জানান তিনি।

ফজলে রাব্বি বলেন, “২০-২৫ জনের ফ্লাইট মিস হয়েছে। কেউ কেউ টিকেট বদল করে পরের টিকেট নিয়েছেন। সীমিত সামর্থ্য নিয়ে আমরা সারারাত চেষ্টা করেও ফল দিতে পারিনি।

“চট্টগ্রামের বিদেশগামীদের প্রায় সবারই কানেক্টিং ফ্লাইট। তাই তাদের সময়ের প্রয়োজন। একারণে ঢাকায় বলেছি চট্টগ্রামের বিদেশ গমনেচ্ছুদের পরীক্ষা যেন আরও একদিন আগে করা হয়, এতে হাতে একদিন সময় থাকবে।”

এখন নমুনা দেওয়ার দিনকে প্রথম দিন ধরে তৃতীয় দিন বেলা একটা থেকে ৩টার মধ্যে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ফলাফলের সনদ দেওয়া হচ্ছে।

নমুনার জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি ও নমুনা দিতে ভোগান্তির অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, “বুথ শুরুতে ছিল একটি। এখন বাড়িয়ে করা হয়েছে পাঁচটি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।