কোভিড-১৯: চট্টগ্রামে বিদেশ গমনেচ্ছুদের পরীক্ষার দীর্ঘ লাইন, ভোগান্তি

চট্টগ্রামে বিদেশ গমনেচ্ছুদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের প্রথম দিনে একটি মাত্র বুথে ভিড় করে ও বৃষ্টিতে ভিজে নমুনা দিতে হয়েছে।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2020, 05:16 PM
Updated : 20 July 2020, 05:26 PM

সোমবার চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই ভবনের নিচতলায় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত একটি বুথে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

সকাল থেকে নগরীর পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিদেশ গমনেচ্ছুরা এসে সেখানে ভিড় করেন। লাইনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে তাদের নমুনা দিতে দেখা গেছে।

প্রথম দিনে নমুনা দেওয়ার পাশাপাশি মঙ্গলবার নমুনা দেওয়ার জন্য টাকা দিতেও ভিড় করেন অনেকে। পরের দিনের নমুনা দিতে সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে সরকার নির্ধারিত পরীক্ষার ফি সাড়ে তিন হাজার টাকা জমা দেন তারা।

একটি মাত্র বুথ, নারীদের জন্য পৃথক বুথ না থাকা, পরীক্ষার ফি, ভিড় করে লাইনে দাঁড়ানো এবং উপজেলা থেকে আসা-যাওয়ার স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে অভিযোগ করেছেন নমুনা দিতে আসা লোকজন।

কোভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা দিতে সোমবার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিচতলার বুথে আসেন দুবাই প্রবাসী ইসমাইল হোসেন বাবলু।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেলা ১টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে কাগজপত্র (টিকেট ও পাসপোর্টের ফটোকপি) দেখিয়ে টাকা জমা দিতে পেরেছি। লম্বা লাইন ছিল। টাকা জমা দিতেই কয়েক ঘণ্টা লেগে গেছে।

“কালকে সকালে আবার গিয়ে নমুনা দেব। কালকে নমুনা দিলে পরশু রেজাল্ট দেবে বলেছে। ২৩ জুলাই আমার ফ্লাইট। সময় মতো রেজাল্ট নিয়ে ফ্লাইট ধরতে পারব কি না তা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।”

জানুয়ারি মাসে ছুটিতে দেশে ফিরেছিলেন ইসমাইল হোসেন। দুবাইয়ের নিয়োগকর্তা তাকে কাজে যোগ দিতে বার বার ফোন করছেন বলে জানান তিনি।

বিদেশ গমনেচ্ছু এক নারী সাংবাদিকদের বলেন, ২৩ জুলাই রাতে ঢাকা থেকে তার ফ্লাইট। এখান থেকে টেস্টের প্রতিবেদন নিয়ে গাড়িতে ঢাকায় যাবেন।

“দীর্ঘ যাত্রার আগে এমন টেনশনে পড়ে গেলাম সব সময়মতো হবে কি না। এখানে নারীদের জন্য কোনো আলাদা লাইন নেই। বৃষ্টির মধ্যে সবাই এক লাইনে দাঁড়িয়ে নমুনা দিতে হচ্ছে। কোনো ছাউনিও নেই।”

নমুনা দিতে আসা বিদেশ গমনেচ্ছুরা জানান, বিভিন্ন উপজেলা থেকে নমুনা দিতে তারা গণপরিবহনে চড়ে আসা-যাওয়া করছেন। কিন্তু নমুনা নেওয়ার সময় বলা হচ্ছে, নমুনা দেওয়ার পর থেকে বিদেশে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তাকে অবশ্যই ‘আইসোলেশনে’ থাকতে হবে।

উপজেলা পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকলে আইসোলেশন মেনে চলা সম্ভব হত বলে অভিমত তাদের।

দীর্ঘদিন দেশে থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফি সাড়ে তিন হাজার টাকা নির্ধারণ ‘বেশি’ বলেও কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বুথ স্বল্পতার বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুব অল্প সময়ে প্রস্তুতি নিয়ে নমুনা সংগ্রহ শুরু করতে হয়েছে। জনবলও সীমিত।

“শুরুর ২-৩ দিনের পরিস্থিতি দেখে আমরা আরেকটা বুথ বাড়ানোর বিষয়ে ব্যবস্থা করা যায় কি না সেটা দেখব। নারীদের জন্য আলাদা বুথ করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।”

উপজেলা থেকে বিদেশগামীদের আসা-যাওয়ায় ঝুঁকির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “সারা দেশে জেলা পর্যায়েই নমুনা সংগ্রহের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এভাবেই করতে হবে। তাদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে আমরা বার বার বলে দিচ্ছি।”

জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রামে বিদেশগামীর সংখ্যা বেশি। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বুথের সংখ্যা বাড়াতে হবে। দুয়েক দিন দেখেই এটার ব্যবস্থা করা উচিত।

“বিদেশে যেতে অবশ্যই কোভিড-১৯ পরীক্ষার সনদ লাগবে। এ পরীক্ষা সঠিকভাবে না হলে সমস্যা হবে। তাই জেলা পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার যে সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে হয়েছে সেটা মেনে ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই টেস্ট করানো উচিত। নমুনা দেওয়ার পরও আইসোলেশনে থাকতে হবে।”

আর ফি’র বিষয়ে বিদেশ গমনেচ্ছুরা যদি জনশক্তি কার্যালয়ে লিখিতভাবে জানায় তাহলে সেটা ঢাকায় জানানো হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা নীতি নির্ধারণী বিষয়। তারা আবেদন করলে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।”

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ (বিআইটিআইডি) ল্যাবে বিদেশগামীদের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নমুনা সংগ্রহের পর তা এই ল্যাবে পাঠানো হবে।

নমুনা দেওয়ার দিনকে প্রথম দিন ধরে তৃতীয় দিন বেলা ১টা থেকে ৩টার মধ্যে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই ভবনের নিচ তলা থেকে ফলাফলের সনদ দেওয়া হবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দুই মাসের মতো বন্ধ থাকার পর গত মাসের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে বিভিন্ন দেশে যেতে শুরু করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে হাজারখানেক বাংলাদেশি ইতালি ফিরে যান। কিন্তু তাদের মধ্যে একটি বড় সংখ্যকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের ফ্লাইট নিষিদ্ধ করে ইতালি সরকার।

এই প্রেক্ষাপটে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের করোনাভাইরাস পরীক্ষার ‘নেগেটিভ’ সনদ বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি তাদের পরীক্ষার জন্য কয়েকটি হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানের ল্যাব নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সরকার।