চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের পথে ফ্লাইওভার ও এক্সপ্রেসওয়ে বাধা: পরামর্শক প্রতিষ্ঠান

চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রস্তাবিত মেট্রোরেল লাইন স্থাপনে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার ও নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে ‘প্রতিবন্ধকতা’ বলে মনে করছে প্রাক-যোগ্যতা সমীক্ষাকারী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2019, 07:21 PM
Updated : 26 July 2019, 07:24 PM

এই প্রতিবন্ধকতা এড়াতে তিনটি সম্ভাব্য সমাধানও প্রস্তাব করা হয়েছে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে।

শুক্রবার নগরীর টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যন্টস লিমিটেড।

প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে তিনটি র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-১ এর দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ২৬ কিলোমিটার (২০টি স্টেশন), সিটি গেট থেকে নিমতলা হয়ে শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর পর্যন্ত লাইন-২ এর দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার (১২টি স্টেশন) এবং অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গিবাজার ও পাঁচলাইশ থেকে একেখান পর্যন্ত লাইন-৩ এর দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ১৪ কিলোমিটার (স্টেশন ১৫টি)।

তিনটি লাইনের মোট দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার, স্টেশন থাকবে মোট ৪৭টি। প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ১ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রস্তাবে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে লাইন-১ এর পথে থাকা বহদ্দারহাট-লালখান সড়কের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার এবং লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বিমানবন্দর সড়কে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

বিকল্প হিসেবে তাদের প্রস্তাব তিনটি হল- ১. এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ স্থগিত রেখে এমআরটি স্থাপনে অগ্রাধিকার দেওয়া; ২. নকশা পুর্নবিবেচনা করে সমন্বিতভাবে এমআরটি ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ; এবং ৩. আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার অংশ এড়িয়ে বহদ্দারহাট থেকে চকবাজার হয়ে কাজীর দেউড়ি মোড় দিয়ে লালখান বাজার পর্যন্ত এমআরটি-১ নির্মাণ।

এর মধ্যে তৃতীয় প্রস্তাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পাশ দিয়ে এমআরটি নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তা করতে গেলে ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ ও সেবা সংস্থার লাইন স্থানান্তরের ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।  

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, “এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গেছে। তাই কাজ বন্ধ করা ঠিক হবে না। প্রকল্প নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করলে ভালো হয়। সবার সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে কাজ করবে, যাতে কোনো সংস্থা বাধার সম্মুখীন না হয়।”

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, নগরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে নিত্য-নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নগরে জনবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

“এ জন্য এমআরটি লাইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেট্রোরেল আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। হলে মঙ্গল হত। এখন উড়ালসড়ক হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলছে। ফলে আগে মেট্রোরেল হলে এসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হত না।”

সিডিএ অনাপত্তি পত্র দিলে এমআরটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, “সবগুলো সেবা সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। সিডিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার চুল পরিমাণ গ্যাপ নেই।”

সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হুদা, ফোরাম ফর প্ল্যানড চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি সুভাষ বড়ুয়া, প্রকৌশলী আলী আশরাফ, মো হারুণসহ নগর পরিকল্পনাবিদরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এমআরটি লাইন ২ ও ৩ নির্মাণে অন্য প্রকল্পগুলো কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না বলে জানানো হয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে।