চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েসহ ছয় প্রকল্প উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

চট্টগ্রামে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েসহ চার হাজার ৯৩৫ কোটি টাকার ছয়টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2016, 01:46 PM
Updated : 30 Jan 2016, 03:01 AM

শনিবার চট্টগ্রাম সফরকালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীনে বাস্তবায়নাধীন এসব প্রকল্পের মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন এবং অন্য পাঁচ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের (বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) শেষ প্রান্তে এক অনুষ্ঠানে একযোগে এসব প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে। 

এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার নগরীর ও আর নিজাম সড়কের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত জানান সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।

তিনি বলেন, প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চট্টগ্রামের ইতিহাসে এই প্রথম। সিডিএ’র ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

“২০০৮ সালে নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশসেবার সুযোগ পেলে চট্টগ্রামের উন্নয়ন তিনি নিজে করবেন। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের ব্যাপারে খুব দুর্বল, তাই বারবার তিনি চট্টগ্রামের জন্য উপহার নিয়ে আসেন।”

গ্রাফিক্সে চট্টগ্রামের অ্যালিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার।

চার লেইন বিশিষ্ট এই সড়কের প্রস্থ হবে সাড়ে ১৬ মিটার। নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ফ্লাইওভারটি এই এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।

মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের সঙ্গে ওয়াসা, টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং, নিমতলা, কাস্টমস, সিইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং ও কাঠগড় মোড়ে মোট নয়টি স্থানে উঠা-নামার জন্য ‘এনট্রি ও এক্সিট’ র‌্যাম্প থাকবে।

সাড়ে পাঁচ মিটার প্রস্থের এসব র‌্যাম্পের মোট দৈর্ঘ্য হবে ১২ কিলোমিটার।

দুই হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প সিডিএ বাস্তবায়ন করলেও এর অর্থায়ন করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, "বন্দর নগরীর যেসব রাস্তা ব্যবহার করে-তার নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে সিটি করপোরেশন ও সিডিএ। ৪৪ বছরে এ খাতে তারা কোনো টাকা খরচ করেনি।

“বন্দরের টাকা মানে রাষ্ট্রের টাকা। প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে তো আর কিছু করার থাকে না। ঋণ হিসেবে এ টাকা নেওয়া হবে। টোল আদায় করে পরিশোধ করা হবে।”

শনিবার চট্টগ্রাম সফরকালে এই প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, প্রস্তাবিত কর্ণফুলী টানেলের সাথে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের সংযোগ স্থাপন হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে বন্দরের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে এবং নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে যানজট নিরসন হবে।

২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম সফরকালে প্রধানমন্ত্রী এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণের ঘোষণা দেন।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে প্রকল্পটির ডিপিপি ২০ জানুয়ারি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান সিডিএ চেয়ারম্যান।

চট্টগ্রামে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ওপর নির্মাণাধীন আউটার রিং রোড

আউটার রিং রোড

সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস রোধ, নগরীর যানজট নিরসন এবং পর্যটন ও আবাসন খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতেই ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড নির্মাণের উদ্দেশ্য।

আউটার রিং রোড প্রকল্পটি মূলত পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণ।

এই সড়কের উচ্চতা হবে ৩০ ফুট। দুই পাশে ঢাল এবং মাঝে মূল সড়কসহ প্রশস্ততা হবে ৩০০ ফুট। চার লেনের মূল সড়কের প্রস্থ হবে ৮৪ ফুট। 

প্রায় ছয় মাস আগে সরকারি ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয় মাটি ভরাটের কাজ।

সড়ক নির্মাণে ৮৫৭ কোটি টাকার পুরোটাই দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। জমি অধিগ্রহণ ও তিনটি ফিডার সড়ক নির্মাণের জন্য বাকি টাকা দেবে সরকার।

২০১৭ সালের জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

লিঙ্ক রোড

নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থেকে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ লিঙ্ক রোডটি নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ১৭২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

সড়কটি শাহ আমানত সেতু, অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক এবং বায়েজিদ বোস্তামি থেকে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড পর্যন্ত সংযোগের মাধ্যমে আউটার রিং রোড এর অংশ হিসেবে কাজ করবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া থেকে আসা যানবাহন নগরীতে প্রবেশ না করে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোডে পৌঁছাতে পারবে।

চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের শুরুতে জাতিক জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল

চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের শুরুতে জাতিক জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও ম্যুরাল

৪৫ কোটি টাকা খরচে অক্সিজেন থেকে কুয়াইশ পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ বাইপাস সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।

সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, সারাদেশে বাইপাস থাকলেও চট্টগ্রামে কোনো বাইপাস নেই। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী বাইপাস হবে এই সড়কটি।

“৪৪ বছরেও চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো সড়ক নেই। তাই এটির নামকরণ করেছি বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। নামকরণ করলে যদি কেউ সম্বোধন না করে এই চিন্তা করে সড়কের দুই প্রান্তে দুটি ম্যুরাল নির্মাণ করেছি।”

২৬ ফুট ও ৪২ ফুট দীর্ঘ ম্যুরাল দুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকা।

সিডিএ চেয়ারম্যানের দাবি ৪২ ফুট দীর্ঘ ম্যুরালটিই দেশে বঙ্গবন্ধুর সর্বোচ্চ ম্যুরাল।

কদমতলী ফ্লাইওভার

৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে এক দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ কদমতলী ফ্লাইওভারটি নগরীর উত্তর ও দক্ষিণাংশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী।

আবদুচ ছালাম বলেন, এই ফ্লাইওভারের চালুর পর দেওয়ানহাট ওভারপাস ও ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড সম্প্রসারণের সুফল মিলছে।

৬ ডিসেম্বর থেকে কদমতলী ফ্লাইওভারে যান চলচাল শুরু হলেও এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।