বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীনে নির্মিত এবং নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার প্রকল্প পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সকাল ১১টা থেকে সিডিএ সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষক, সিডিএর কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে বৈঠক করে সাব কমিটি।
বৈঠক শেষে জানতে চাওয়া হয়, নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে ভবিষ্যতে মাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বাধাগ্রস্ত হবে কি না।
জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, “চট্টগ্রামে এমআরটি করার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। যদি কখনও পরিকল্পনা করা হয় এসব (ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) অবকাঠামো মাথায় রেখেই করা হবে।
“আমরা শুধু বর্তমান বিবেচনায়ই নয়, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই এসব ফ্লাইওভার নির্মাণ করছি।”
চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর-লালখান বাজার পর্যন্ত আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী এটি বিমানবন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারণের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তবে এর বিরোধিতা করে গত বছর এক সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেছিলেন, এই ফ্লাইওভার সম্প্রসারণ করা হলে ভবিষ্যতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা মাস র্যাপিড ট্রানজিট করার তা ভেঙ্গে ফেলতে হবে।
চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সফরকালে মুরাদপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। দুই হাজার ৯৫৭ কোটি টাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সিডিএ।
আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ফ্লাইওভারটি এই এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটির চেয়ারম্যান ও চুয়েট অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম বলেন, আগ্রাবাদ এলাকায় মূল সড়কের নিচে ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সেখানে নির্মাণ কাজ করা সম্ভব হবে না।
ভবিষ্যতে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে হলে ফ্লাইওভারের লালখান বাজার মোড় অংশ উন্মুক্ত রেখে দুই পাশে গাড়ি ওঠানামার দুটি লেইন করার পক্ষে মত দেন তিনি।
সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম জানান, আগ্রাবাদ অংশে সড়কের দুই পাশ থেকে স্লোপ উঠবে। লালখান বাজার মোড়ে দুটি লেইন করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা মুরাদপুর-লালখান বাজার ফ্লাইওভারের মুরাদপুর অংশে র্যাম্পের প্রস্তাব করলেও জমির অভাবে তা করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন সিডিএ চেয়ারম্যান।
চুয়েটের ভূমিকম্প প্রকৌশল গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক আবদুর রহমান চট্টগ্রামের ফ্লাইওভারগুলোর ‘সিসমিক রেজিসটেন্স’ (ভূকম্পন সহনশীলতা) যাচাইয়ের পরামর্শ দেন।
বৈঠকে অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম বলেন, বহদ্দারহাটের ফ্লাইওভারটি ওভারপাস হয়ে গেছে। এখন অবশ্য র্যাম্প নির্মাণের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, “র্যাম্প না করে লুপ নির্মাণ করা হলে সুফল মিলত। গ্রেড সেপারেশন না হলে বিপরীতমুখী যান চলাচলে দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়ে।”
নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকা থেকে বহদ্দারহাট মোড় পর্যন্ত ১ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার এ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। সিডিএ ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ফ্লাইওভার নির্মাণ করে।
এর প্রায় তিন বছর পর কয়েক মাস আগে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকামুখী র্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু করে সিডিএ।
সাব কমিটির সদস্য সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, বহদ্দারহাট দিয়ে বেশি গাড়ি চলে না। নতুন অর্থনৈতিক জোন হলে গাড়ি চলাচল বাড়বে।
“ফ্লাইওভার সংক্রান্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখতেই এ কমিটি করা হয়েছে। ফ্লাইওভারগুলোর ওপর ট্রাফিক ব্যবস্থা ও সিসি ক্যামরা সংযোজন করা প্রয়োজন।”
তাজুল ইসলাম বলেন, “ফ্লাইওভারে মানুষের সুবিধা প্রাপ্তিতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় এবং সর্বোচ্চ সুবিধা যাতে নিশ্চিত করা যায় সে লক্ষে আমরা কাজ করব।”
পরিদর্শন শেষে বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তা প্রতিবেদন আকারে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সাব কমিটির আরেক সদস্য সাংসদ মহিবুর রহমান মানিকও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সাব কমিটির সদস্যরা ওয়াসার মোড়, জিইসি মোড় এবং বহদ্দারহাট এলাকায় ফ্লাইওভার পরিদর্শন করেন।