উড়াল সড়কের বিরোধিতায় সংবাদ সম্মেলন চট্টগ্রামে

বন্দর নগরীর যানজট নিরসনে উড়াল সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যায়িত করেছে ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2015, 05:01 PM
Updated : 11 Nov 2015, 05:01 PM

মুরাদপুর-লালখান বাজার উড়াল সড়ক বিমানবন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংগঠনটির নেতারা।

বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে সত্যিকারের তথ্য জানানো হয়নি।

ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, “নগরীতে দৈনিক যে পরিমাণ যানবাহন চলাচল করে তাতে উড়াল সড়ক নির্মাণের কোনো যৌক্তিকতা নেই। অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত বহদ্দারহাট উড়ালসড়কও যানজট নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।”

১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম নগরীর যে মহাপরিকল্পনা প্রণীত হয়েছিল, তাতে উড়াল সড়ক নির্মাণের কোনো সুপারিশ না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রয়োজনে রেল ক্রসিংয়ের জায়গায় কিছু ওভারপাস নির্মাণের সুপারিশ ছিল।

ফোরামের সভাপতি মু. সিকান্দার খান বলেন, “ফ্লাইওভারের নামে যে উন্নয়ন হচ্ছে সেটা হবে দুর্দশাগ্রস্ত উন্নয়ন। মহাপরিকল্পনায় এসব উড়াল সড়ক কোথাও ছিল না। পরিকল্পিত উন্নয়ন না হলে চট্টগ্রামের যোগাযোগ, শিক্ষা ও বিনিয়োগ সবই বাধাগ্রস্ত হবে।

“এসব বিষয়ে আমাদের বক্তব্য মেয়র-মন্ত্রী সবাইকে বলেছি। একনেক থেকে পরিকল্পনা কমিশন, সব জায়গায় চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু প্রকৃত সত্য ও কারিগরি দিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হচ্ছে না।”

মুরাদপুর-লালখান বাজার উড়ালসড়কের ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’ চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করেছে এমন তথ্য সঠিক নয় বলেও দাবি করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক।

গত ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, “মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার একটি অসম্পূর্ণ উড়াল সড়ক। এটি বিমান বন্দর পর্যন্ত যেতে হবে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলে বিমানবন্দর পর্যন্ত এ উড়ালসড়ক নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।”

সুভাষ বড়ুয়া বলেন, "মুরাদপুর-লালখান বাজার উড়ালসড়ক বিমানবন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারণ ভবিষ্যতের জন্য মোটেও ভালো হবে না। এতে পরবর্তীতে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট করার সমস্ত পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। তখন উড়ালসড়ক ভাঙ্গা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।”

বিমানবন্দর দিয়ে চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার দশমিক শূন্য চার শতাংশ লোক যাতায়াত করে দাবি করে তিনি বলেন, অধিকাংশ জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করা টেকসই উন্নয়নের পরিপন্থি।

উড়াল সড়ক নির্মাণের যৌক্তিকতা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যাও দাবি করেছে ফোরাম।

এগুলো হলো- উড়াল সড়ক নির্মাণের উদ্দেশ্য, দৈনিক কত যানবাহন এ সড়কে চলাচল করবে, নিচের সড়কের দুই লেইন সমান স্থান ব্যবহার করে উপরে উড়ালসড়ক নির্মাণের কারিগরি বিশ্লেষণ ও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে কীভাবে যানবাহন উড়ালসড়ক থেকে নামবে তার পথরেখা।

উড়াল সড়ক না করে নগরীর গণপরিবহনের চাহিদা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জোর দিয়ে সুভাষ বড়ুয়া বলেন, “এতে করে যানজট কমবে, যাত্রীদের গতিশীলতা বাড়বে, জ্বালানি খরচ কমবে ও সড়ক নিরাপদ হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ফোরামের সহ-সভাপতি বিধান বড়ুয়া, এবিএমএ বাসেত, স্থপতি জেরিনা হোসাইন ও প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নগরীর বহদ্দারহাট মোড় ও দেওয়ানহাটে দুটি উড়াল সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। চলছে কদমতলী ও মুরাদপুর-লালখান বাজার উড়াল সড়ক নির্মাণ কাজ।