হুমকি পাওয়া শিক্ষকের অপসারণ চেয়ে খুনের আসামির স্মারকলিপি

বর্ধিত গৃহকরের বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকায় হুমকি পাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহাম্মদ আমির উদ্দিনের অপসারণ চেয়ে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রলীগের একাংশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2017, 03:57 PM
Updated : 6 Nov 2017, 04:37 PM

সোমবার বেলা একটার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন চবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু, যিনি সিআরবি জোড়া খুন ও ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি। এসময় টিপুর সঙ্গে তার সমর্থকরাও ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আলমগীর টিপু সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

টিপুর সঙ্গে ছিলেন দিয়াজ হত্যামামলার আসামি আব্দুল মালেক, মনসুর আলম ও আবু তোরাব পরশ।

তবে এই স্মারকলিপির সাথে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন জানিয়েছেন।

বর্ধিত গৃহকর নিয়ে আন্দোলনকারী করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চবির ইন্সটিটিউশন অব এডুকেশন রিসার্চের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আমির উদ্দিনকে রোববার তার কার্যালয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দেয় ১০-১৫ জন যুবক।

হুমকিদাতারা নিজেদের মেয়র নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেয় বলে দাবি করেছিলেন আমির উদ্দিন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্যাডে ‘সভাপতি’ আলমগীর টিপু স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘শর্তাবলী ও নিয়মাবলী পূরণ না করে অবৈধ ও আত্মীয়করণের মাধ্যমে নতুন বিভাগ চালু করে বিশেষ বদান্যতায় তাকে (আমির উদ্দিন) শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

‘বিভাগ প্রতিষ্ঠাকালে নিয়োগপ্রাপ্ত সকল শিক্ষককে তিন বছরের মধ্যে বিএড ও এমএড অর্জনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত তিনি কোনো ডিগ্রি অর্জন করেননি। তাহলে এখনো তিনি কিভাবে শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।’

সমর্থকদের নিয়ে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিতে যান হত্যা মামলার আসামি আলমগীর টিপু

শিক্ষক আমির উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি অভিযোগ করা হয়- ‘সাম্প্রতিক কর ইস্যু যখন আপিলের মাধ্যমে সুন্দর সমাধানের পথে তখন করদাতা ‍সুরক্ষা পরিষদের ব্যানারে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে বিষোদগার ছড়াচ্ছেন।’

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমির উদ্দিনকে ‘অপসারণের’ দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।

স্মারকলিপির বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর টিপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি আদায় না হলে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব।

“ট্যাক্সের বিষয় সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এর বিরোধীতা করা মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরোধীতা করা।”

হুমকি দেওয়ার পরদিনই স্মারকলিপি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আগে কেন দেইনি সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আগে দেইনি, আজ দিলাম।”

হুমকিদাতারা ছাত্রলীগের অনুসারী বলে শিক্ষক আমির উদ্দিনের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর টিপু বলেন, “উনি স্পেসিফিক কারো নাম বলতে পারেননি। অন্য কেউ হুমকি দিয়ে হয়ত আমাদের গ্রুপের মানসম্মান ক্ষুন্ন করতে চাইছে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন বলেন, এই স্মারকলিপির সাথে সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

“গ্রুপের স্বার্থ চরিতার্থ করতে কেউ সংগঠনের নাম ব্যবহার করেছে। কমিটি এখনো স্থগিত তাই প্যাড ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে জানিয়েছি। কোনো অপরাধীর স্থান ছাত্রলীগে নেই।”

এ বিষয়ে শিক্ষক আমির উদ্দিন সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “স্মারকলিপি দেওয়ার কথা শুনেছি। সেটা প্রশাসনের বিষয়। প্রশাসন দেখবে। আমার এমফিল করা আছে। কেউ এই পরিস্থিতিতে জলঘোলা করতে চাইছে হয়ত।”

হুমকি পাওয়ার পর থেকে ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ আছেন জানিয়ে আমির উদ্দিন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে অনিরাপদ বোধ করছি। আজ ক্যাম্পাসে যাইনি।”