স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় শ্বশুরের সন্দেহের তীরের মুখে থাকলেও একবছর আগে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনার ‘সঠিক’ তদন্ত চেয়েছেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার।
Published : 04 Jun 2017, 06:38 PM
স্ত্রীর মৃত্যুর এক বছরের মাথায় এ চাওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন জঙ্গিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা এক সময়ের আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল; যিনি স্ত্রী হত্যার ঘটনায় করা মামলার বাদীও।
বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরিচালক বাবুল আক্তারের কাছে টেলিফোনে জানতে চাওয়া হয়েছিল আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে।
তিনি বলেন, “তদন্ত একটি চলমান প্রক্রিয়া। তদন্ত চলাকালীন কোনো মন্তব্য করাও ঠিক না। কতটুকু কী হয়েছে, তা তদন্ত কর্মকর্তাই (আইও) ভালো বলতে পারবেন।”
গত বছরের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় বাবুলের স্ত্রী মিতুকে। সে সময় পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে সদর দপ্তরে যোগ দিয়ে ঢাকায় ছিলেন বাবুল।
এর আগে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন বাবুল। এর বাইরে পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করে।
অস্ত্র আইনের মামলাটি আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে থাকলেও কয়েকজন গ্রেপ্তার হওয়া ছাড়া হত্যা মামলায় তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন পুলিশ নগরীর বড় গ্যারেজ এলাকা থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আর পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুযুদ্ধে নিহত হয়েছেন দুইজন।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুইজন আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছে, কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা নামে একজনের পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। মুছা একসময়ে বাবুল আক্তারের ‘সোর্স’ ছিল বলেও জানায় পুলিশ।
সেই মুছা এবং ‘হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া’ কালুর হদিস গত এক বছরেও মেলেনি।
বাবুল বলেন, “আইওর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। তবে দ্রুত সময়ে সঠিক তদন্ত হোক এটাই চাইব।”
স্ত্রী হত্যার পর থেকে ঢাকার রামপুরা বনশ্রীতে শ্বশুরবাড়িতে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন বাবুল। ওই সময়ে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে নানা গুঞ্জন ছড়ায়। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর পুলিশের চাকরি থেকে বাবুলকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন হয়। তাতে বলা হয়, বাবুল নিজেই চাকরি ছেড়েছেন।
বাবুল বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আলাদা বাসায় ওঠেন।
বনশ্রীতে থাকার সময়ে শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জামাতার পক্ষে থাকলেও ওই বাসা ছাড়ার পর বাবুলের দিকে সন্দেহের আঙুল তোলেন তিনি।
তার দাবি, অন্য নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক ছিল এবং ওই নারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে মিতু হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে পারে।
তবে বাবুল ফেইসবুকে লিখেছেন, মিতু খুন হওয়ার পর তার মামাত বোনকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক কিছুই জেনেছি। তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছি সঠিকভাবে তদন্ত হোক।”
শোক কাটিয়ে উঠেতে পারেনি শিশু দুটি
বাবুল জানান, তার সন্তানরা এখনও মাকে হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
ঢাকার একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া ছেলেটি এখনও মাকে হারানোর শোক পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলে জানান তিনি। এক বছর আগে তার সামনেই মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।
বাবুল বলেন, “আমরা কঠিন সময় পার করছি। পারিবারিক জীবন খুব মিস করি। মা ছাড়া বাচ্চাদের মেইনটেইন করা অনেক কঠিন। আমার ছেলে এখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারছে না।”
ছেলেকে স্বাভাবিক করতে ১৫ দিন পরপর কাউন্সিলিং করানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া নার্সারিতে পড়া মেয়েকে মা ছাড়া সহজ করানোর চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।