বাবুলকেই সন্দেহ শ্বশুরের, দুই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি

এক বছরেও মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের রহস্যভেদ না হওয়ার মধ্যে জামাতা বাবুল আক্তারকে নিয়েই সন্দেহে ঘুরপাক খাচ্ছেন মোশাররফ হোসেন।

মিন্টু চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2017, 12:01 PM
Updated : 4 June 2017, 12:40 PM

মিতুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ এখনও মনে করছেন, পরকীয়ার কারণে তার জামাতা সাবেক এসপি বাবুল আক্তারই স্ত্রীকে হত্যা করিয়েছে।

গত বছরের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের সড়কে সন্তানের সামনে মিতুকে হত্যার পর বাবুলকে নিয়ে কোনো সন্দেহের কথাই আসেনি শ্বশুরকূলের কাছ থেকে। সন্তানদের নিয়ে তখন বাবুল ঢাকায় ছিলেন শ্বশুর বাড়িতেই।

মাসখানেকের মধ্যে বাবুলকে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পরও জামাতার পক্ষেই ছিলেন শ্বশুর। কিন্তু বাবুল সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছাড়ার পর তাকে নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন মিতুর বাড়ির লোকজন।

অন্য নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্কের কথা বলতে থাকেন মোশাররফ। এর মধ্যে বাবুলের বাবার বাড়ির এলাকার বনানী বিনতে বসির বর্ণি নামে এক নারীর কথা আলোচনায় ওঠে।

ওই নারী সংবাদ সম্মেলন করে তা অস্বীকারও করেন। অন্যদিকে বাবুল দাবি তোলেন, শ্বশুর বাড়ির কথায় মামাত শ্যালিকাকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় এখন তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে।

হত্যাকাণ্ডের একবছর পর রোববার বিডিনিউজ টোযেন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথায় মিতুর বাবা মোশাররফ বাবুলের ‘পরকীয়ার’ দিকে ইঙ্গিত করে তা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

খুনের ‘প্রকৃত মোটিভ’ আড়ালেই রয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি। মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তুষ্ট তিনি।

মাহমুদা আক্তার মিতু

মোশাররফ বলেন, “খুনের মোটিভ বা মিতুকে কে কেন খুন করল তার রহস্য পুলিশ এখনও বের করতে পারেনি। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও পুলিশের ভাষ্য ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মুছা ও কালু এখনও নিখোঁজ।”

বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছাড়া এবং চাকরি থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়াকেও রহস্যময় মনে করেন সাবেক এই পুলিশ পরিদর্শক।

তিনি বলেন, বাবুলের সঙ্গে দুই নারীর ‘পরকীয়া’ সম্পর্ক ছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসতে পারে।

বাবুল পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দেওয়ার কয়েকদিন পরই খুন হন মিতু। হত্যাকাণ্ডের পরদিনই চট্টগ্রামে গিয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন বাবুল।

ডিবির জিজ্ঞাসাবাদের পর বাবুলের চাকরি নিয়ে ঢাকঢাক গুড়গুড় ছিল পুলিশের। কয়েক মাস পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, বাবুল নিজেই চাকরি ছেড়েছেন। 

বাবুল আক্তার

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ বলেন, “সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে বাবুলকে পুলিশ ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বলেই তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছে। তাকে ছেড়ে দিল, পরে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিল।”

বাবুলের কাছ থেকে কী তথ্য পুলিশ পেয়েছে, তা জানতে চান শ্বশুর।

“তার কোনো দোষ না থাকলে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি কেন দেওয়া হবে? সে নিজেই বা কেন পুনরায় চাকরিতে যোগদানের আবেদন করল না, তা বুঝতে পারি না।”

পুলিশের এসআই আকরাম হোসেন লিটনের স্ত্রী বর্ণি ছাড়াও ভারতীয় এক নারীর সঙ্গেও বাবুলের সম্পর্কের কথা জেনেছেন বলে দাবি করেন মোশাররফ।

দুই বছর আগে বাবুল জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত অবস্থায় সড়কে নিহত হন এসআই আকরাম; ওই হত্যাকাণ্ডে বাবুলের হাত রয়েছে বলে দাবি আকরামের পরিবারের; তবে বাবুল তা অস্বীকার করে আসছেন।

ওই দুই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি তুলে মোশাররফ বলেন, “আমরা তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছিও। পুলিশ এখনও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। ওই দুজনকে বাবুলের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করি।”