নড়েচড়ে বসেছে চট্টগ্রামের পুলিশ

মিরসরাইয়ে নতুন করে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলার পর সতর্কতা বাড়িয়েছে চট্টগ্রামের পুলিশ।

উত্তম সেন গুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2017, 06:21 AM
Updated : 10 March 2017, 07:58 AM

বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি এলাকায় এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা।

গত ডিসেম্বরে র‌্যাবের অভিযানে কর্নেল হাট এলাকায় একটি হুজি আস্তানার সন্ধান মিললেও পুলিশ গত এক বছরে চট্টগ্রামে তেমন কোনো জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালায়নি।

মিরসরাইয়ের ঘটনার পর এ অঞ্চলে নতুন কোনো জঙ্গি আস্তানা আছে কিনা তা জানতে গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে পুলিশ সুপার জানান।

কুমিল্লার চান্দিনায় মঙ্গলবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে তল্লাশির সময় পুলিশের দিকে বোমা ছোড়ে দুই জঙ্গি। পরে তাদের গুলি করে ও ধাওয়া দিয়ে আটক করা হয়।

দুই জঙ্গির মধ্যে মাহমুদুল হাসান নামের একজনকে নিয়ে ওই রাতেই মিরসরাইয়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ২৯টি হাতবোমা, নয়টি চাপাতি, ২৮০ প্যাকেট বিয়ারিংয়ের বল এবং ৪০টি বিস্ফোরক জেল।

রিদওয়ান মঞ্জিল নামে দোতলা ওই বাড়ির মালিক পুলিশকে বলেছেন, ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে মাহমুদুলই গত ফেব্রুয়ারির মাসে তার বাড়ির নিচ তলা ভাড়া নেন।

নব্য জেএমবির সদস্যরা ওই বাড়িতে বিস্ফোরক তৈরি করত বলে প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পাওয়ার কথা বলেছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মিনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগে থেকে নজরদারি থাকলেও সাম্প্রতিক ঘটনার পর সব থানাকে নতুন করে সতর্ক করেছেন তারা।

“এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ব্লক রেইড চালাতে বলা হয়েছে।”

চট্টগ্রাম নগরীতেও পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযান বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ জানান।  

২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বন্দরনগরীর সদরঘাট থানার মাঝিরঘাটে সাহা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে জেএমবি সদস্যদের সন্ধান পায় পুলিশ।

নগর গোয়েন্দা পুলিশ ওই বছরের ৬ অক্টোবর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগরে একটি বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে পুলিশের উপর গ্রেনেড হামলার চেষ্টা করে চট্টগ্রামের নব্য জেএমবির ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ জাবেদ। তিনি পরদিন গ্রেনেড বিস্ফোরণে মারা যান বলে পুলিশের ভাষ্য।

এর কিছুদিন পর নৌ বাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির একটি মসজিদে বোমা হামলা হয়।

তদন্তের মধ্যে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর ভোরে হাটহাজারি উপজেলার আমান বাজারের একটি বাসায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ। সেখান থেকে সেনা বাহিনীর পোশাক, স্নাইপার রাইফেল এবং গুলি ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

নাফিজ নামে এক যুবক নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল বলে বাড়ির মালিক দাবি করেন। কিন্তু পুলিশ জানায়, নব্য জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার ফারদীন বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। দীর্ঘদিন ফারদীনের খোঁজে থাকার পর গত বছর বগুড়ার একটি বাসায় বোমা বিষ্ফোরণে ফারদীনের নিহত হওয়ার খবর দেয় পুলিশ।

এরপর চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযান অনেকটা শিথিল হয়ে আসে। পরে বিভিন্ন সময় আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) কয়েকজন সদস্যকে আটক করা হলেও চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার কোথাও বড় কোনো অভিযান চালায়নি পুলিশ।

অতীতে চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার জঙ্গিরা মিরসরাইয়ের সোনা পাহাড় এলাকায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা পুলিশকে জানিয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের তদন্তে রুবেল ও ইমরান নামে দুই যুবকের খোঁজ পাওয়া যায়। তারা সোনা পাহাড় এলাকায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিতেন। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও জায়গাটি এবং রুবেল ও ইমরানের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বোমা বিস্ফোরণে বগুড়া ও চট্টগ্রামে নিহত ফারদীন ও জাবেদ এবং কারাগারে আটক ফুয়াদসহ আরও কয়েকজন মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ এলাকায় সামরিক প্রশিক্ষণ দিতেন বলে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার জঙ্গিরা জানিয়েছেন।