কুমিল্লায় গ্রেপ্তার জঙ্গি নিয়ে অভিযান মিরসরাইয়ে, বোমা-চাপাতি উদ্ধার

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে হাতবোমা, চাপাতি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকচট্টগ্রাম ব‌্যুরো ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2017, 05:01 AM
Updated : 8 March 2017, 03:07 PM

কুমিল্লায় মঙ্গলবার পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার একজনকে নিয়ে এই অভিযান চালানো হয় বলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট জানিয়েছে।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাড়িটিতে নব্য জেএমবির সদস্যরা বিস্ফোরক তৈরি করত বলে প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।”

অভিযানে বাড়িটি থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। মাহমুদুল কুমিল্লায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর অন্যরা এ বাসা ছেড়ে পালায় বলে জানান চট্টগ্রামের জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা।

অভিযানের সময় বাড়িটি ঘিরে ভিড়

মঙ্গলবার কুমিল্লার চান্দিনায় মহাসড়কে তল্লাশির সময় বাস থেকে নেমে পুলিশের উপর বোমা ছোড়ার পর মাহমুদুল হাসানসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা জেএমবি সদস্য বলে পুলিশ জানিয়েছিল।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মিনা বলেন, মাহমুদুল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মিরসরাইয়ের আস্তানার কথা স্বীকার করেন।

“তার তথ্য অনুযায়ী কুমিল্লার চান্দিনা থানা পুলিশ ও চট্টগ্রামের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট যৌথ অভিযান চালায় ওই বাড়িতে।”

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মাত্র তিনশ গজের মধ্যে মিরসরাই পৌর এলাকার কলেজ রোডের পাশের রিদওয়ান মঞ্জিলে মঙ্গলবার মধ্য রাতে অভিযান শুরু হয়।

বুধবার দুপুরে অভিযান শেষে ২৯টি হাতবোমা, নয়টি চাপাতি, ২৮০ প্যাকেট বিয়ারিংয়ের বল এবং ৪০টি বিস্ফোরক জেল উদ্ধারের কথা জানান পুলিশ সুপার।

উদ্ধার বোমার বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের এক সদস্য

বিকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল গিয়ে একে একে সবগুলো হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে।

উদ্ধার বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল

মহিবুল জানান, ফেব্রুয়ারির মাসে দোতলা ওই বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিয়েছিলেন মাহমুদুল। তিনি নিজেকে কাপড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন।

“মাহমুদুল, তার বোন, বোনজামাই এবং ভাগ্নি এই বাসায় থাকতো। মাহমুদুল কুমিল্লায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তারা এ বাসা ছেড়ে পালিয়েছে,” বলেন পুলিশ সুপার।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, “নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা মুসা এই বাসায় যাতায়াত করত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বাড়িটিকে জঙ্গিরা আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করত এবং এখানে তারা বিভিন্ন সময়ে আত্মগোপনে থাকত।”

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার তীরচর গ্রাম এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের একটি চেকপোস্টে তল্লাশির সময় বাস থেকে নেমে বোমা হামলা চালিয়েছিলেন মাহমুদুল ও তার সঙ্গী।

হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম জানান, চালকের কাগজ পরীক্ষা করার সময় বাস থেকে দুই ‘জঙ্গি’ নেমে এসে আল্লাহু আকবর বলে দুটি বোমা ছোড়ে। তবে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়নি।

বোমা ছুড়ে দুজনের একজন দৌড় দেয়। তাকে ধাওয়া করে স্থানীয়দের সহায়তায় আধা কিলোমিটার দূরে এক ধানক্ষেত থেকে ধরা হয়। অন‌্যজন পালানোর চেষ্টার মধ‌্যেই হাতে বোমা নিয়ে ছুড়ে মারার হুমকি দিতে থাকে। পরে তাকেও ধরে ফেলা হয়।

বাসে তাদের সিটের পাশে ব্যাগে ছয়টি হাতবোমা পাওয়ার কথা জানান ডিআইজি আতিকুল।

বাড়িটি সাবেক বিএনপি নেতার

যে বাড়িতে ‘নব্য জেএমবি’ আস্তানা গেঁড়েছিল, তার মালিক মো. রিদওয়ান বিএনপির সাবেক একজন নেতা।

তিনি মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন কয়েক বছর আগে, এখন রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নেই বলে দাবি করেছেন। 

রিদওয়ান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একসময় বিএনপির রাজনীতি করতাম। ২০১৩ সালে আমার এক ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর আমি রাজনীতি থেকে সরে আসি।”

সন্তানের মৃত্যুর পর স্ত্রীও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে বলে জানান তিনি। মাস দুয়েক আগে স্ত্রীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

মো. রিদওয়ান এই বাড়ির মালিক

রিদওয়ান জানান, তার দোতলা বাড়িতে মোট আটটি ইউনিট। তার মধ্যে একটি ইউনিটে তিনি এবং তার দুই সন্তান থাকেন। বাকি সাত ইউনিট ভাড়া দেওয়া।

ফেব্রুয়ারি মাসে মাহমুদুল হাসান নিচের দুটি ইউনিট ভাড়া নেন বলে বাড়িওয়ালা রিদওয়ান জানান।

“কাপড় ব্যবসায়ী পরিচয়ে উঠেছিল সে। একটি ইউনিটে ওর বোন, ভগ্নিপতি ও ভাগ্নি উঠেছিল। আরেকটি ইউনিটে এ মাসে তার পরিবার ওঠার কথা ছিল।”

তিনি জানান, মাহমুদুল হাসান নিজেকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা পরিচয় দিয়েছিলেন। তার ভগ্নিপতির যে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েছিলেন, সেখানে নাম লেখা আছে ‘কামাল উদ্দিন’।

গত সোমবার সন্ধ্যায় মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল নিয়ে কথা হয়েছিল রিদওয়ানের। তার পরদিনই কুমিল্লায় ধরা পড়েন তিনি।

এই ঘটনায় বাড়িওয়ালা রিদওয়ানের সম্পৃক্ততাও তদন্ত করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মিরসরাই পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন।

অভিযানে পুলিশ

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১৩ সালের দিকে যখন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বিএনপি-জামায়াতের অবরোধে ছিল তখন রিদওয়ান সক্রিয় ছিল বিএনপির রাজনীতিতে।

“মিছিলের অগ্রভাগে থাকা রিদওয়ানের বাসায় অনেক সময় নানা ধরনের গোপন সভাও হত। এঘটনায় রিদওয়ানের কী ভূমিকা, সেটা পুলিশ বের করুক।”

মেয়র গিয়াস উদ্দিনের দাবি, ভাড়াটিয়ার তথ্য দেওয়ার জন্য বারবার বলা হলেও রিদওয়ান তা দেননি।

তবে রিদওয়ান দাবি করেছেন, সহিংস কিংবা জঙ্গিবাদী কোনো তৎপরতায় তিনি কখনও জড়িত ছিলেন না। আর মাহমুদুলের বিষয়েও তিনি কিছু জানতেন না।

“গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে যখন পুলিশ তাকে আমার সামনে এনে দাঁড় করায়, তখন আমি বুঝতে পারি সে জঙ্গি কার্যক্রমের সাথে জড়িত।”

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে বাড়িওয়ালা রিদওয়ানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।