আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, প্রত্যেক আসামিকে ‘নির্মমভাবে প্রহার’ করা হয়েছে। এমন একজন আসামিও নেই যার নিতম্বে, পিঠে ও বাহুতে ‘প্রহারের চিহ্ন নেই’।
Published : 07 Nov 2024, 09:36 PM
চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন ইসকনকে নিয়ে ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে উত্তেজনা থেকে যৌথ বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার ৪৯ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালতে শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুজন দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আসামিদের জামিনের আবেদন করেছিলাম। শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
“শুনানিতে আমরা বলেছি, আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে ঢালাও অভিযোগ করা হয়েছে। কোন আসামি কী অপরাধে সম্পৃক্ত তার নির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়নি। এমনিকে ঘটনার সময়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল বা দোকানে পণ্য কিনতে গিয়েছিল এমন লোকজনকেও ধরে আসামি করা হয়েছে।”
এ মামলার শুনানিতে সনাতনী আইনজীবী পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী অংশ নেন।
শুনানি চলাকালে উপস্থিত আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, প্রত্যেক আসামিকে ‘নির্মমভাবে প্রহার’ করা হয়েছে। এমন একজন আসামিও নেই যার নিতম্বে, পিঠে ও বাহুতে ‘প্রহারের চিহ্ন নেই’।
বিষয়টি আদালতে জানিয়ে আসামিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে লিখিত আবেদন করেন আইনজীবীরা।
আইনজীবী সুজন দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত এ বিষয়ে কারাবিধি অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।”
আসামিদের আদালতে হাজির করে জামিন শুনানি ও কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) এএএম হুমায়ুন কবীরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধেরেননি।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান বলেন, ছুটিতে থাকায় তিনি এই মামলার শুনানি বিষয়ে তথ্য দিতে পারছেন না।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এ মামলায় আরও চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে ওই মামলায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেড়ে হল ৫৩ জন।
ইসকন নিয়ে ফেইসবুক পোস্ট দেয়াকে ঘিরে মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে তুলকালাম ঘটে যায়।
সেখানকার মিয়া শপিং সেন্টার মার্কেটের একটি দোকানের মালিক ওসমান মোল্লা ইসকনকে নিয়ে ‘ব্যাঙ্গাত্মক’ পোস্ট করেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে বিক্ষুব্ধরা মঙ্গলবার রাতে দল বেঁধে ওই মার্কেটের সামনে জড়ো হয়ে দোকানটি ঘিরে ফেলে।
পরে পুলিশ গিয়ে পোস্টদাতা ওসমানকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে, সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সেসময় তারা পুলিশকে ধাওয়া ও যৌথ বাহিনীর সদস্যদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। অ্যাসিডও নিক্ষেপের অভিযোগ ওঠে।
রাত সাড়ে ৯টার পর সেনাবাহিনী যৌথভাবে হাজারী গলির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা ঘটনাস্থল থেকে ৮২ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর হাজারী গলির সব দোকানপাট ‘সিলগালা’ করে বন্ধ করে দেয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
ওই ঘটনায় বুধবার গভীর রাতে নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করে পুলিশ। ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০/৬০০ জনকে সেখানে আসামি করা হয়।
মামলায় ‘যৌথবাহিনীর কাজে বাধা দান ও অ্যাসিড নিক্ষেপের’ অভিযোগ করা হয়েছে বলে কোতোয়ালি থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) তারেক আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ মামলায় মোট ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে যৌথবাহিনীর হাতে আটক ৮২ জনের মধ্যে বাকি ৩৩ জনকে যাচাই বাছাই শেষে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। গ্রেপ্তার ৪৯ জনকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হয়।
এদিকে একদিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে হাজারী গলির বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানের সিলগালা করা তালা খুলে দেন।