স্থগিত কেন্দ্রটিতে ৫ জুন পুনঃভোটের তারিখ রয়েছে।
Published : 03 Jun 2024, 09:32 PM
পটিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন স্থগিত হওয়া পূর্ব পিঙ্গলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফের ভোটগ্রহণ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী।
তবে আশ্বাস দিয়ে রিটার্নিং অফিসার বলছেন, সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, আশঙ্কার কিছু নেই।
গত ২৯ মে তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সেদিন সকাল সাড়ে নয়টায় দুই শতাধিক বহিরাগত উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের পূর্ব পিঙ্গলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, সিল ও কালিসহ ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে চলে যায়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এবং পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেন।
ওইদিন গভীর রাতে স্থগিত কেন্দ্রটি বাদে পটিয়া উপজেলা পরিষদের ১২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২৭টির ফল ঘোষণা করা হয়। এতে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ (আনারস) প্রতীকে ৪৬ হাজার ১৪২ ভোট পান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম (দোয়াত-কলম) ৫৬ হাজার ৫৪১ ভোট পান।
তবে ফল ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক হারুনুর রশিদ রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এতে তিনি ১০টি কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে বলে অভিযোগ করেন।
হারুনুর রশিদের অভিযোগ, ভোট চলাকালে এই কেন্দ্রগুলো থেকে আনারস প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়।
চেয়ারম্যান পদে ফল ঘোষণার আরো তিন ঘণ্টা পর ঘোষণা করা হয় ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফলাফল।
এতে দেখা যায়, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আবু ছালেহ মোহাম্মদ শাহরিয়ার (উড়োজাহাজ) ২৩ হাজার ৮৫০ ভোট এবং নিকটতম এমদাদুল হাসান (বই) ২৩ হাজার ৭৩ ভোট পান।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাজেদা বেগম শিরু (কলস) ২৪ হাজার ৮৯৪ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। তার নিকটতম সাজেদা বেগম (প্রজাপতি) ২৪ হাজার ৭৩১ ভোট পেয়েছেন।
এতে দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদে কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।
স্থগিত হওয়া পূর্ব পিঙ্গলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩৬১৫ জন। এই কেন্দ্রের ভোটেই নির্ধারিত হবে জয়-পরাজয়।
আটশ'রও কম ভোটের ব্যবধানে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে এগিয়ে আছেন আবু ছালেহ মোহাম্মদ শাহরিয়ার ওরফে শাহারু এবং ১৬৩ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু।
সোমবার মাজেদা বেগম শিরু এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “স্থগিত কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণের জন্য আগামী ৫ জুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই কেন্দ্রের ভোটারদের সাথে গত চারদিন যাবত আলাপে জানতে পারি, তারা ২৯ মে এর ঘটনার পর থেকে শঙ্কিত।
“ভোটারদের আশঙ্কা ২৯ মে এর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা। এমনকি সেদিনের চেয়ে আরও অধিক সংখ্যক লোকজন নিয়ে ভোট বাধাগ্রস্থ করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভোটাররা।”
তাই ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আগমন, বাধাহীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ ও নিরাপদে কেন্দ্র থেকে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি মন্তব্য করে মাজেদা বেগম শিরু বলেন, “পাশাপাশি কোনো দুস্কৃতিকারী যাতে জাল ভোট দিতে না পারে সেজন্যও ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।”
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই কেন্দ্রের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন বলে জানান তিনি।
পাশাপাশি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকেও শঙ্কার কথা জানিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে পটিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম প্রামাণিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর করা আবেদন আমরা গ্রহণ করেছি।
“ওই কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছিল বলেই ২৯ মে আমরা ভোটগ্রহণ স্থগিত করি। পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা অবগত। আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। কেন্দ্রটিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মেতায়েন করা হবে। আমি নিজে ভোট গ্রহণের সময় সেখানে উপস্থিত থাকব। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।”