পাহাড়তলি বধ্যভূমি সম্প্রসারণের কাজ শুরু শিগগিরই: মেয়র

বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত জমির বেশিরভাগ এখনো ইউএসটিসির দখলে রয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2024, 02:39 PM
Updated : 25 March 2024, 02:39 PM

চট্টগ্রামের পাহাড়তলি বধ্যভূমি সম্প্রসারণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

সোমবার গণহত্যা দিবস উপলক্ষে পাহাড়তলি বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি বলেন, “হীনস্বার্থে ভূমিখেকোরা জায়গা দখল করতে করতে পাহাড়তলী বধ্যভূমিকে সংকুচিত করে ফেলেছে, যা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাকে ব্যথিত করে।

“এজন্য বধ্যভূমি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে বধ্যভূমির ডিজাইন ও এস্টিমেশন সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই বধ্যভূমি পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু হবে।”

এসময় মেয়র বধ্যভূমির উন্নয়নে কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনা দেন।

মেয়রের সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামসহ কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা।

এর আগে শনিবার নগরীর পাহাড়তলি উত্তর কাট্টলী এলাকায় অস্থায়ী স্মৃতি সৌধ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রামে যেসব বধ্যভূমি রয়েছে, সেগুলো সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।

১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার রায়েরবাজার ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বধ্যভূমি রক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে এই বধ্যভূমির স্মৃতি রক্ষায় তৎকালীন সরকার জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয়। এই প্রকল্পের জন্য ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকার প্রকল্পটি বাতিল করলে বরাদ্দ অর্থ ফেরত যায়। সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মুনতাসীর মামুন ও গাজী সালেহ উদ্দিনসহ কয়েকজন হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।

পাহাড়তলী বধ্যভূমির জমিতে ২০০৭ সালে একটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে বেসরকারি ইউনির্ভাসিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি) কর্তৃপক্ষ। এর বিরুদ্ধে ২০১০ সালে আরেকটি রিট আবেদনে প্রেক্ষিতে ওই ভবন নির্মাণে স্থগিতাদেশ দেয় আদালত।

বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত জমির বেশিরভাগ এখনো ইউএসটিসির দখলে রয়েছে।

২০১১ সালের ৬ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয় তদন্ত করে পাহাড়তলী বধ্যভূমির স্থান নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য।

বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ১১ মার্চে দেওয়া এক আদেশে এক দশমিক ৭৫ একর জমির সম্পূর্ণ অংশ পাহাড়তলী বধ্যভূমির বলে রায় দেওয়া হয়।

ওই কমিটির কাছে সাক্ষ্যদাতাদের বক্তব্য অনুসারে, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই বধ্যভূমিতে গণহত্যা সংঘটিত হয়। এর মধ্যে ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর ‘পাহাড়তলি গণহত্যা’ সংঘটিত হয়। প্রায় পৌনে ২ একর এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মানুষের মাথার খুলি, কঙ্কাল ও হাড়গোড়। বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করা হয় বিহারীদের সহায়তায়।

প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা জানান, সেখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। যেখানে ইউএসটিসি ভবন নির্মাণ করেছে, সেখানেই ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের পর লাশ ফেলে রেখেছিল পাকিস্তানী বাহিনী।

আদালত নির্দেশিত এক দশমিক ৭৫ একর জমির পুরোটা অধিগ্রহণ করে ‘গণহত্যা স্মৃতিসৌধ’ নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে ‘পাহাড়তলী বধ্যভূমি রক্ষা পরিষদ’।

আরও পড়ুন-

Also Read: পাহাড়তলীর বধ্যভূমি সংরক্ষণ আটকে ভূমি অধিগ্রহণে

Also Read: চট্টগ্রামে পাহাড়তলি বধ্যভূমির পুরো জমি অধিগ্রহণের দাবি