শনিবার বিকেলে নগরীর পাহাড়তলি বধ্যভূমির সামনের সড়কের মানববন্ধন ও উন্মুক্ত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ‘পাহাড়তলি বধ্যভূমি রক্ষা পরিষদের’ আয়োজনে।
অবিলম্বে বধ্যভূমিটির পুরো জমি অধিগ্রহণ করা না হলে লাগাতার কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দেওয়া হয়।
“এই বধ্যভূমি রক্ষার জন্য লড়াই করায় আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। টাকার প্রস্তাব দেয়া হয়, জমির প্রস্তাবও দেয়া হয়। আমরা কোনো স্মৃতিই সংরক্ষণ করতে পারিনি বলে মানুষ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানে না।”
১৯৯৯ সালে ওই বধ্যভূমির স্মৃতি রক্ষার্থে তৎকালীন সরকার জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয়। এই প্রকল্পের জন্য ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকার প্রকল্পটি বাতিল করে।
পাহাড়তলি এলাকায় বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত জমিতে ২০০৭ সালে একটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ। এর বিরুদ্ধে ২০১০ সালে আরেকটি রিট আবেদনে ওই ভবন নির্মাণে স্থগিতাদেশ দেয় আদালত।
২০১১ সালের ৬ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়, তদন্ত শেষে পাহাড়তলি বধ্যভূমির স্থান নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য।
১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর পাহাড়তলিতে গণহত্যা সংঘটিত হয়।
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ স্থানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করা হয় বিহারিদের সহায়তায়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ১১ মার্চে দেয়া এক আদেশে এক দশমিক ৭৫ একর জমির সম্পূর্ণ অংশ পাহাড়তলি বধ্যভূমি বলে রায় দেয়া হয়।
ড. গাজী সালেহ উদ্দীন বলেন, “চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে জমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থের চাহিদাপত্র ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ২০১৮ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৯ শতক পরিমাণ জমির মধ্যে সরকার দেশের সব চিহ্নিত বধ্যভূমি সংরক্ষণ করবে।
অধ্যাপক গাজী সালেহ উদ্দীন বলেন, “চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, প্রয়োজনে মন্ত্রী থেকে বিশেষ বরাদ্দ নেবেন। আমাদের দাবি পুরো জমি অধিগ্রহণ করুন। ২৬ মার্চের আগেই অধিগ্রহণ করতে হবে। এখানে হাজার হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে। তা না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।”
“আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ করেছে এই বধ্যভূমি তারই স্মারক। অথচ ধীরে ধীরে এখানে অবকাঠামো নির্মাণ হয়ে গেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আমাদের এই দায় থেকে মুক্ত করুন। বধ্যভূমিটি রক্ষা করুন।”
সাংস্কৃতিক সংগঠক ও প্রমা সভাপতি রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় মানববন্ধন চলাকালে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন অধ্যাপক হোসাইন কবির, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর, শহীদ পরিবারের সদস্য মো শাহাবুদ্দিন আঙ্গুর, রাউফুল হোসেন সুজা ও আনোয়ার হায়দার, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির চট্টগ্রাম জেলার কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক অনিক চৌধুরী, বিজয় একাত্তর সভাপতি আর কে রুবেল।
সংবাদ সম্মেলনের আগে প্রদীপ দেওয়ানজি রচিত গীতি নকশা ‘বধ্যভূমি’ পরিবেশন করে নাট্যাধার। সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেয় শোভন থিয়েটারসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।