আইনজীবী ‘হত্যাকাণ্ডের’ খবরে নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হলেও নতুন করে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ মেলেনি।
Published : 27 Nov 2024, 01:57 AM
চট্টগ্রামে আদালত এলাকা ঘিরে সংঘর্ষে আইনজীবী ‘হত্যাকাণ্ডের’ পর নগরীর বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা; ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে নগরীতে অভিযানেও নেমেছে যৌথবাহিনী।
মঙ্গলবার রাতে পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত আদালত থেকে নেমে আসার সড়কের আশপাশসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে যৌথবাহিনীর তল্লাশী শুরুর তথ্য মিলেছে।
আদালত চত্বরের অদূরে মুসলিম হাই স্কুলের সামনের যে সড়কে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন তার আশপাশের এলাকাগুলোতে রাতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে পরিস্থিতি শান্ত থাকতে দেখা গেছে।
সন্ধ্যার পর সংঘর্ষ থামলেও আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করেছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নামার আগে ও পরে এসব বিক্ষোভ হলেও নতুন করে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ মেলেনি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (জনসংযোগ) তারেক আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আইনজীবী হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশসহ যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করেছে।"
আরও পড়ুন:
চিন্ময় দাশকে গ্রেপ্তারে 'গভীর উদ্বেগ' ভারতের
ভারতের বিবৃতি ‘তথ্যের ভুল উপস্থাপন, বন্ধুত্বের মেজাজের বিপরীত’: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সিএমপির আরেক কর্মকর্তা বলেন, নগরীর কোতয়ালী থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। আশপাশের আরো কয়েকটি এলাকায় অভিযানের প্রস্তুতি চলছে।
মধ্যরাত পর্যন্ত আটক বা গ্রেপ্তারের তথ্য জানানো হয়নি।
এদিকে সন্ধ্যার পর আদালত এলাকা থেকে কিছুটা দূরের ‘বান্ডেল সেবক’ কলোনিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বলেছে, আগুনে ওই কলোনির তিনটি বসত ঘর, তিনটি দোকান ও একটি ট্রান্সফরমার পুড়ে প্রায় তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়। ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়।
তবে আগুন লাগার কারণ ও আগুনে হতাহতের বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেনি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
আদালতের অদূরে যে স্থানে আইনজীবী নিহত হন সেটির অদূরে বান্ডেল সেবক কলোনি। এখানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মী সেবকদের বসবাস।
রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার চট্টগ্রামে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
একদিনের মধ্যে চিন্ময় দাশের মুক্তি দাবি সনাতনী জোটের
চিন্ময় দাশকে গ্রেপ্তারে 'গভীর উদ্বেগ' ভারতের
বিকেলে অনুসারীদের বাধার মুখে চট্টগ্রাম আদালত থেকে চিন্ময়কে কারাগারে নেওয়ার সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের মধ্যে আদালত পাহাড়ে ওঠার মুখে মূল সড়কের বিপরীত পাশে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের ওপর হামলা হয়।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালত থেকে বাসায় ফেরার পথে সড়কে আইনজীবী সাইফুলের ওপর হামলা করা হয়। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
আইনজীবীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যার পর নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। সেখান থেকে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।
সন্ধ্যার পর থেকে আইনজীবী হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার কয়েকটি মিছিল নগরীর নিউ মার্কেট, এনায়েত বাজার, মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা মোড়, হাজারী গলির প্রবেশ মুখ, লালদীঘির পাড়, কোতোয়ালী মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ দল নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়, আন্দরকিল্লা সহ কয়েকটি স্থানে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আইনজীবী নিহতের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজা চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।
এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আইনজীবীরা বুধবার কাজ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ইসকন নিষিদ্ধের দাবি হেফাজতের
এদিকে ইসকনকে শিগগির নিষিদ্ধ করা এবং আইনজীবী আলিফ নিহতের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার রাতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বিবৃতির বিষয়টি সংবামাধ্যমকে জানানো হয়।
আরও পড়ুন:
একদিনের মধ্যে চিন্ময় দাশের মুক্তি দাবি সনাতনী জোটের
ইসকন নিয়ে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, “দেশবিরোধী বিশ্বাসঘাতক চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইসকনের কর্মী-সমর্থকরা চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে দিনের আলোতে জনসম্মুখে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ভারতের উসকানি ও মদদে এই ষড়যন্ত্রমূলক অরাজকতা তৈরি করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
"এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ইসকনের কর্মী-সমর্থকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শহীদ আলিফ হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। সন্ত্রাসী কার্যক্রমের দায়ে হিন্দুত্ববাদী ইসকনকে অতিসত্বর নিষিদ্ধ করতে হবে।"
হেফাজত নেতারা বলেন, "মুসলমানের রক্তখোর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসকগোষ্ঠী এদেশে ‘হিন্দু কার্ড’ খেলে তাদের আধিপত্যবাদ কায়েম রাখতে চায়। তাদের সেবাদাস ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর থেকে ভারত উন্মাদ হয়ে আছে। সে কারণে একের পর এক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি।"
ভারতের কোনো ফাঁদে পা না দিতে সাধারণ সনাতনী হিন্দু ভাই-বোনদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, "আর যারা ভারতের চক্রান্তের সাথে একীভূত হয়ে দেশবিরোধী অরাজকতা তৈরি করতে সক্রিয়, তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার নজির দেখাতে হবে সরকারকে।"আমরা আজকের ঘটনায় শান্ত ও সংযত থেকেছি বটে। কিন্তু এদেশের মুসলমানদের ধৈর্যেরও সীমা রয়েছে তা মাথায় রাখতে হবে।"
আরও পড়ুন:
চট্টগ্রামে আদালত এলাকার অদূরে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী নিহত
বিক্ষোভকারীদের হটাতে সাউন্ড গ্রেনেড, চিন্ময় দাশ কারাগারে
চিন্ময় দাশকে গ্রেপ্তারে 'গভীর উদ্বেগ' ভারতের