কুমিল্লার শাহজালাল আর কক্সবাজারের জীবন, এই দুজনের মধ্যে শিরোপা যুদ্ধ চলছে কয়েক বছর ধরে।
Published : 25 Apr 2023, 08:11 PM
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলায় শিরোপা জিতলেন কুমিল্লার শাহজালাল। তার কাছে হার মেনেছেন কক্সবাজারের তারেকুল ইসলাম জীবন।
গতবার জীবনের কাছেই মুকুট খুইয়েছিলেন শাহজালাল। তিনি তার আগে ২০১৯ সালে জীবনকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিলেন। এরপর কোভিড মহামারীর জন্য দুই বছর খেলা হয়নি।
২০২২ সালে খেলা পুনরায় শুরুর পর হেরে গিয়েছিলেন কুমিল্লার হোমনার শাহজালাল। এবার শিরোপা পুনরুদ্ধার করলেন তিনি।
মঙ্গলবার এবারের ফাইনালে মিনিট খানেকের মধ্যে অসুস্থতার কথা বলে পরাজয় স্বীকার করে নেন জীবন। সেই মুহূর্তে রেফারি চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শাহজালালের নাম ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে ঐতিহাসিক আব্দুল জব্বারের বলী খেলার ১১৪তম আসর অনুষ্ঠিত হয় এবার।
দুপুরে বলী খেলা শুরুর আগে থেকেই লালদীঘি ময়দানে হাজারো দর্শক জড়ো হয়। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মাঠ। ঢোল বাজনার তালে তালে আর করতালিতে তারা সমর্থন জোগাতে থাকে বলীদের।
কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ নানা বয়সী ৬০ জন বলী এবারের আসরে অংশ নেন। প্রথম রাউন্ড শেষে আব্দুল নূর, মো. মুছা, মো. সেলিম, মো. রুবেল ও আমীর হোসেনকে গত বারের প্রথম থেকে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী তারেকুল ইসলাম জীবন, শাহজালাল ও সৃজন চাকমার সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ করে দেয় কমিটি।
তাদের মধ্যে মুছাকে পরাজিত করে আব্দুল নূর, রুবেলকে পরাজিত করে শাহজালাল, সেলিমকে পরাজিত করে জীবন এবং আমীর হোসেনকে পরাজিত করে সৃজন চাকমা ওঠেন সেমিফাইনালে।
সেমিফাইনালে আব্দুল নূরকে পরাজিত করেন শাহজালাল এবং সৃজন চাকমাকে পরাজিত করেন চকরিয়ার জীবন।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল সেমিতে
সেমিফাইনাল পর্বে শাহজালাল ও আব্দুল নূরের মধ্যে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হলেও চকরিয়ার থেকে আসা তারেকুল ইসলাম জীবন এবং খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমার খেলাটি ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
টানটান উত্তেজনায় ভরা খেলাটিতে জিততে জীবন সময় নেন ১১ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড। তবে আব্দুল নূরকে পরাজিত করতে শাহজালাল সময় নেন মাত্র দেড় মিনিট।
প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম রেজাউল করীম চৌধুরী।
বাছাই নিয়ে বিতর্ক
এবারের আসরে অংশ নেওয়া বলীদের মধ্যে গতবারের প্রথম থেকে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী তিনজন ছাড়া অন্যদের অংশ নিতে হয়েছিল নকআউট পর্বের খেলায়। এর মধ্যে জয়ী ২৩ জনের মধ্যে কমিটি তাদের পছন্দমতো পাঁচজনকে নির্ধারণ করে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার জন্য।
কমিটির বাছাই করা পাঁচজনকে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার অনুমতি দেওয়ায় প্রথম রাউন্ড জয়ী অনেককেই প্রতিবাদ শুরু করেন।
কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে আসা মোহাম্মদ হোসেন ও মো. বজল ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, তাদের সঙ্গে ‘অন্যায়’ করা হয়েছে।
কুমিল্লার শাহজালাল। তার কাছে হার মেনেছেন কক্সবাজারের তারেকুল ইসলাম জীবন।
কোন পদ্ধতিতে পাঁচজনকে বাছাই করা হয়েছে, তার কোনো ব্যাখ্যা কমিটি তাদেরকে দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের ধনী ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর লালদীঘির মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা।
পরে তা আব্দুল জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিতি হয়, যার জনপ্রিয়তা এখনও অক্ষুণ্ণ। এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি শিরোপা জেতেন দিদার বলী।
বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১২ বৈশাখ লালদীঘির ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এই খেলা, খেলার আগের দিন থেকে শুরু করে পরদিন পর্যন্ত তিন দিন ধরে লালদীঘির মাঠ ও আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বসে বৈশাখী মেলা।
মেলায় বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দোকানিরা।