সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, “পুলিশের ক্লান্তির একটা ব্যাপার আছে। প্রোগ্রাম যত বেশি লম্বা হয়, ততই ঝুঁকি বাড়ে।”
Published : 08 Apr 2024, 07:18 PM
বন্দরনগরীতে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠান চললেও নববর্ষের অনুষ্ঠান কেন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতা থাকবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন চট্টগ্রামের এক সংস্কৃতি কর্মী।
সোমবার দামপাড়ায় চট্টগ্রাম নগর পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশ কমিশনারের সাথে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজকদের এক সমন্বয় সভায় এ প্রশ্ন তোলেন কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, যিনি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সদস্য।
বাদল বলেন, “সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আমরা অনুষ্ঠান শেষ করার প্রস্তুতি রেখেছি। কিন্তু আমরা দেখছি নগরীতে অনেক রাত পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। সেগুলোর ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না। নববর্ষের অনুষ্ঠানে কেন সন্ধ্যার মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতা থাকবে?”
এর জবাবে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, “এটা একটা প্র্যাকটিস, এটা কোনো আইন না। পার্টিকুলার ওই দিনের ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে সরকারের এবং আমাদের পরামর্শে আমরা সকল অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করতে বলি।”
তিনি বলেন, নবর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হয় ভোর ৬টায়, সেজন্য পুলিশ মোতায়েন হয় সাড়ে ৪টা থেকে।
“পুলিশের ক্লান্তির একটা ব্যাপার আছে। প্রোগ্রাম যত বেশি লম্বা হয়র ততই ঝুঁকি বাড়ে। আর ওই দিন বেশি বেশি অনুষ্ঠান থাকে। সবগুলো অনুষ্ঠানতো একই সময়ে। বাকি দিনগুলোতে একটা অনুষ্ঠান বলে বেশি সময় ধরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্ভব।”
পুলিশ কমিশনার বলেন, “আপনি একটা পারসপেকটিভে দেখছেন, আমরা একটা দেখি। এখানে পার্টিসিপেন্টদের নিরাপত্তারও একটা বিষয় থাকে। তাদের বাড়ি ফেরার বিষয়টাও দেখতে হয়।”
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মূলত তিনটি স্থানে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের বড় অনুষ্ঠান হয়। এর একটি ডিসি হিলে, একটি সিআরবি শিরীষ তলায় এবং অন্যটি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে।
প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধরে ডিসি হিলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে ‘সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ’।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুচরিত দাশ খোকন বলেন, “অন্যবার বর্ষ বিদায়ের অনুষ্ঠান থাকলেও এবছর তা থাকছে না। পহেলা বৈশাখে সকাল সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠান বিকাল সাড়ে পাঁচটায় শেষ করা হবে।”
সিআরবি শিরীষ তলায় সকাল ৭টায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হবে বলে জানান ‘পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের’ সদস্য কামরুল হাসান বাদল।
এছাড়া আগের দিন বেলা সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বর্ষ বিদায়ের সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান আয়োজন করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
সভায় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ডিসি হিলের নববর্ষের অনুষ্ঠানের জন্য সকাল সাড়ে ৬টা থেকে চেরাগী পাহাড়, লাভলেইন, এনায়েত বাজার ও বোস ব্রাদার্স মোড় থেকে ডিসি হিলমুখী সড়কে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে।
সিআরবি শিরীষ তলার আয়োজনের জন্য কাঠের বাংলো, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং আটমাসিং মোড় থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
সভায় সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, “নববর্ষ অনুষ্ঠান নিয়ে আমোদের কোন দৃশ্যমান ঝুঁকি নেই। তারপরও সম্ভাব্য সকল ঝুঁকি মাথায় রেখে সকর্তকতা ও প্রস্তুতি আছে।”
নববর্ষ ঘিরে অনলাইনে ‘গুজব রটনাকারীদের’ বিষয়ে সজাগ থাকার কথাও বলেন সিএমপি কমিশনার।
আয়োজকদের সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আয়োজন শেষ করার অনুরোধ বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা নির্দেশনাও দেয়া হয় বৈঠকে। অনুষ্ঠানস্থলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের কোনো ধরনের ব্যাগ বহন থেকে বিরত থাকা, সন্দেহজনক কাউকে দেখলে সাথে সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করতে বলা হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, নববর্ষ ঘিরে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে থানা পুলিশের নিয়মিত মোবাইল টিমের পাশাপাশি পিকেট ডিউটি, ফুট পেট্রোল, চেকপোস্ট স্থাপনসহ সাদা পোশাকের পুলিশের নজরদারি থাকবে।
এছাড়া, সোয়াট, বম ডিসপোজাল ইউনিট, কুইক রেসপন্স টিম, ডগ স্কোয়াড কে-নাইন টিমকে স্ট্যান্ড বাই রাখা হবে।