পাহাড়ের অবৈধ সেবা সংযোগ দ্রুত বিচ্ছিন্ন করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
Published : 20 Jun 2024, 09:18 PM
চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোতে ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ এবং সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি‘।
বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে কমিটির ২৮তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতবছর ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৭তম সভাতেও একই ধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তবে তা সেভাবে কার্যকর হয়নি।
ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম সভায় তার বক্তব্যে বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধিদের অবৈধ গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে নির্দেশনা দেন।
সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসা, পিডিবি (বিদ্যুৎ) ও কেজিডিসিএল (গ্যাস) প্রতিনিধিদের কাছে অবৈধ সংযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে পাহাড়ের অবৈধ সেবা সংযোগ দ্রুত বিচ্ছিন্ন করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, “পাহাড়ের অবৈধ বাসিন্দারা কীভাবে সেবা সংযোগ পান? এসব বিষয়ে আপানাদের বার বার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এখন আবার উচ্ছেদ চালিয়ে প্রতিবেদন দেবেন।”
সভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধভাবে বসবাসকারীদের পাহাড় থেকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ এবং তাদের পুনর্বাসন দীর্ঘমেয়াদী বিষয়।
“সমস্যা হল, তারা পাহাড় ছেড়ে যেতে চান না। এর পরও আশ্রায়ণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন জায়গায় তাদের অনেককেই যে পুনর্বাসন করা হয়নি, তা নয়।”
প্রতি বছরই বর্ষা এলে চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো থেকে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদসহ সেবা সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করার কথা ওঠে, কিন্তু সে কাজে কখনোই পুরোপুরি সফল হতে পারেনি প্রশাসন।
চট্টগ্রামের ২৬টি পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা বর্তমানে ৬৫৫৮টি বলে সভায় জানানো হয়। ২৬ পাহাড়ের ১৬টি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের এবং বাকি দশটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আনোয়ার পাশা, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, রেলওয়ের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরীও সভায় উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, বৃষ্টির পূর্বাভাসের পর নতুন করে পাহাড় থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। গত এক বছরে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে বিভিন্ন পাহাড়ে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে।
২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ১২৭ জনের মৃত্যু হয়।এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে গঠন করা হয় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি।
কমিটির আহ্বায়ক চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবং সদস্য সচিব চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)। সিটি করপোরেশন, সিডিএ, পুলিশ, র্যাব, ওয়াসা, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি এই কমিটির সদস্য।
২০০৭ সালের ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি পাহাড়ে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের সাথে তাদের পুনবার্সনের সুপারিশ করেছিল। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম শুরুর সময়ে সভা করে নানা সিদ্ধান্ত নিলেও চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোতে অবৈধ বসতি এখনো ঠেকানো যায়নি।