Published : 10 Jan 2023, 09:02 PM
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্য সেনের সহযোদ্ধা বিনোদ বিহারীর নামে চট্টগ্রামে একটি সড়কের নামকরণ এবং তার ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি জানিয়েছে চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
মঙ্গলবার এই বিপ্লবীর ১১২তম জন্মদিনে তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে এই দাবি জানান তারা।
নগরীর মোমিন রোডে তার আগের বাসভবনে প্রয়াত এ বিপ্লবীকে শ্রদ্ধা জানান অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। অধ্যাপক রীতা দত্তের নেতৃত্বে সারদা সংঘের উদ্যোগেও শ্রদ্ধা জানানো হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি দীপংকর চৌধুরী কাজল, দি চিটাগাং এসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সমরেশ বৈদ্য, কোষাধ্যক্ষ বিবেকানন্দ আচার্য, সুভাষ চৌধুরী, অশোক বিজয় দে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলায় ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন বিনোদ বিহারী চৌধুরী।
১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের সময়কালে ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগার লুট করে ব্রিটিশদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন সূর্যসেন ও তার সহযোগীরা। কয়েকদিনের সেই আন্দোলনের একজন যোদ্ধা ছিলেন বিনোদ বিহারী।
১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি মাস্টারদাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ব্রিটিশ সরকার আন্দোলন সাময়িক দমন করলেও পরে তা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ পরবর্তীতে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীন বাংলাদেশে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অগ্রবর্তী ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করেছেন বিনোদ বিহারী।
১৯৩৯ সালে বিনোদ চৌধুরী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দলের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ১৯৪৬ এ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
৪৭ এ দেশভাগের পর তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমএলএ) নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমল মিলিয়ে তিনি সাত বছর বিভিন্ন মেয়াদে জেল খেটেছেন।
দেশ ভাগ ও একাত্তরের স্বাধীনতা পর নানা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসহ নানা কারণে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকেই দেশ ছাড়লেও বিনোদ চৌধুরীকে টলাতে পারেনি কোনো কিছুই।
নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়েও তিনি টিকে ছিলেন এই স্বদেশের প্রতি মমত্ববোধ, প্রগাঢ় ভালোবাসা এবং দেশের প্রতি নিবেদিত প্রতিশ্রুতির কারণে।
১৯৬৮ সালে তার দুই ছেলে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কলকাতায় গিয়ে স্থায়ী হলেও তিনি দেশের মায়া ছাড়তে পারেননি বলে স্ত্রীকে নিয়ে থেকে গিয়েছিলেন বন্দর নগরীর মোমিন রোডের বাসাতে।
২০০০ সালে স্বাধীনতা পদকের মতো সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রাপ্তি ছাড়াও তিনি অর্জন করেছেন জনকণ্ঠ গুণিজন সম্মাননা ১৯৯৯, ভোরের কাগজ সম্মাননা ১৯৯৮, শহীদ নতুন চন্দ্র স্মৃতি পদক।
২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন অগ্নিযুগের এই বিপ্লবী।
আরও পড়ুন-