৩৪ বছর বয়সী মীর আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
Published : 02 Apr 2024, 07:41 PM
চট্টগ্রামের বিআরটিসি ফলমন্ডি ডাস্টবিন থেকে সোমবার রাতে যে শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেই শিশুটিকে খুন করার পর প্রায় ১৫ ঘণ্টা ফেলে রাখা হয়েছিল টাইগারপাস রেলওয়ে পাহাড়ে। পরে সন্ধ্যায় সুযোগ বুঝে লাশটি ফলমণ্ডির ডাস্টবিনে ফেলে আসা হয়েছিল।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার সকালে মীর হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এ তথ্য জানায়।
৩৪ বছর বয়সী মীর হোসেনের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গ্রেপ্তার মীর হোসেন রাস্তা ও ডাস্টবিনে ভাঙ্গারি ও কাগজ কুড়ানোর কাজ করতেন। আর শিশুটির মাও একই কাজ করে। রাস্তায় বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে দেখা হওয়ার কারণে তারা পরস্পরের পরিচিত মুখ।
মোস্তাফিজুর বলেন, “রোববার রাতে শিশুটিকে রেখে তার মা বোতল-কাগজ কুড়াতে গেলে মীর হোসেন ফুসলিয়ে শিশুটিকে আন্দরকিল্লা থেকে টাইগারপাস রেলওয়ে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধর্ষণের পর খুন করে লাশ বস্তা ভরে রেখে পালিয়ে যায়।”
উপ-কমিশনার মোস্তাফিজুর বলেন, “সোমবার সন্ধ্যায় মীর হোসেন ভ্যান গাড়ি করে শিশুটির লাশ ফলমণ্ডির ডাস্টবিনে ফেলে রেখে চলে যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করে মঙ্গলবার সকালে তাকে বাকলিয়া বৌবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
সোমবার রাতে নগরীর বিআরটিসি ফলমণ্ডি এলাকার ডাস্টবিন থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ জানিয়েছিল, শিশুটির পায়ু ও যোনিপথে রক্তক্ষরণের চিহ্ন আছে। তাকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা ছিল।
এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেছেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, রোববার রাত ৯টার দিকে কাগজ ও বোতল সংগ্রহ করতে আন্দরকিল্লা এলাকায় আসেন বাদী। মা-মেয়ে জেনারেল হাসপাতালের সামনে অবস্থান করার সময় শিশুটি আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের উত্তর গেইটে লোকজনের কাছ থেকে টাকা চাইতে যায়।
মায়ের ভাষ্য, রাত ১টার দিকে তিনি তার মেয়েকে জামে মসজিদের সিঁড়িতে বসা অবস্থায় দেখতে পান। এসময় মেয়ে তার মাকে জেনারেল হাসপাতালের সামনে যেতে বলেন এবং সে আসছে বলে জানায়। মেয়ের আসতে দেরি হওয়ায় পুনরায় তাকে খুঁজতে গিয়ে আর খুঁজে পাননি বলে মা এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
গ্রেপ্তার মীর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্ত্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ১টার পর মীর হোসেন শিশুটিকে চিপস ও চকলেট কিনে দেওয়ার কথা বলে রিকশা করে কদমতলী আটমাসিং মোড়ে নিয়ে যায়।
“সেখান থেকে তাকে নিয়ে হেঁটে টাইগার পাসের দিকে গিয়ে রাস্তার পাশে পাহাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধর্ষণ করে। শিশুটি বাধা দেয়ার চেষ্টা করায় তাকে মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে খুন করে। পরে একটি বস্তা কুড়িয়ে এনে সেখানে লাশটি রেখে চলে যায়।”
পাহাড়ে লাশ পড়ে ছিল ১৫ ঘণ্টা
সহকারী কমিশনার অতনু জানান, প্রায় ১৫ ঘণ্টা লাশটি পাহাড়ে থাকার পর সেটি গুম করতে মীর হোসেন শিশুটির লাশ ডাস্টবিনে ফেলে রেখে আসে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে মীর হোসেনকে শনাক্ত করা হয়। শিশুটির মা পুলিশকে জানায়, মীর হোসেনও ভাঙ্গারি খুঁজে এবং তাকে বিভিন্ন সময়ে বৌবাজার এলাকায়ও দেখেছেন।
সেই তথ্যে সারারাত অভিযান চালিয়ে সকাল ৬টার দিকে বৌবাজার এলাকায় মীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা অতনু।
সহকারী কমিশনার অতনু বলেন, “মীর হোসেন বিকৃত মানসিকতার মানুষ। ২০১২ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর এলাকায়ও একই ধরনের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটিতে সে গ্রেপ্তারও হয়েছিল। মামলাটির বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।”
লাশ ফেলতে ভ্যান ভাড়া
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নোবেল চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গ্রেপ্তার মীর হোসেন বিকালে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম রুমানা আক্তারের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে মীর হোসেন কিভাবে শিশুটির সঙ্গে পরিচয় এবং কীভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে বলে জানান তিনি।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মীর হোসেন জানান, রোববার রাতে আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের সামনে থেকে শিশুটিকে নিয়ে কদমতলী নিয়ে গিয়ে চিপস কিনে দেন। তারপর তারা হেঁটে সিআরবি হয়ে টাইগার পাসের দিকে যায়।
রাস্তার পাশে পাহাড়ে নিয়ে শিশুটির মুখ চেপে নির্যাতন চালানো হয়। এসময় শিশুটি নিস্তেজ হয়ে গেলে মীর হোসেন সেখান থেকে সটকে পড়েন। প্রায় আধাঘন্টা পর সেখানে ফিরে এসে একটি বস্তায় লাশ ঢুকিয়ে পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে বৌবাজার এলাকায় বাসায় চলে আসেন মীর।
মীর হোসেন বলেন, দুপুরে ঘুম থেকে উঠে তিনি বৌবাজার এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে ভ্যান ভাড়া করেন। বাসা থেকে কয়েকটি বস্তাও নেন। পথে চেরাগী পাহাড় এলাকার ডাস্টবিন থেকে একটা টুকরি ও ভাঙ্গা বালতি কুড়িয়ে নেন।
সেগুলো নিয়ে কিছু সময় ঘোরাঘুরির পর বিকাল ৫টার দিকে ওই পাহাড়ে গিয়ে লাশের বস্তাটি ভ্যানে তুলে উপরে টুকরি ও বালতির ভাঙ্গা অংশটি চাপা দিয়ে রাখেন। এরপর কদমতলী এলাকায় গিয়ে একটি দোকানে চা পানের পর সন্ধ্যার পর ডাস্টবিনে লাশটি ফেলে বাসায় চলে যান মীর।
পুরানো খবর: