“হালদা নদীকে রক্ষা করতে হলে সমন্বিত প্রশাসনিক নজরদারির বিকল্প নাই,” বলেন অধ্যাপক মনজুরুল।
Published : 02 Jul 2024, 03:02 PM
চট্টগ্রামের হালদা নদীতে ফের মৃত মা মাছ ও ডলফিন ভাসতে দেখা গেছে। তবে জোয়ার ও ভারি বর্ষণের কারণে সেসব উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এ নিয়ে গত ১২ দিনে হালদা নদীতে মোট ছয়টি মা মাছ ও দুটি ডলফিনের মৃত্যু হলো।
হালদা পাড়ের বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হালদায় সম্প্রতি দূষণ ও বিষ প্রয়োগের মত ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। একারণে একের পর এক মা মাছ ও ডলফিন মারা যাচ্ছে।
সোমবার রাত ১১টার পর নদীর রাউজান উপজেলার আজিমের ঘাট অংশে মৃত ডলফিন ও মা মাছ ভেসে যেতে দেখেন হালদা পাড়ের বাসিন্দা রোসাঙ্গীর আলম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকালে দূর থেকে ডলফিনটি ভাসতে দেখেছিলাম। কিন্তু তখন ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না। পরে রাত ১১টার দিকে জোয়ারের সময় যখন আমি বাড়ি ফিরছিলাম, তখন ডলফিনটি আবার এদিকে আসে। ডলফিনটি বড় আকারের।
“আরও ১৫ মিনিট পর একটি মরা মা মাছ দেখতে পাই। মাছটি ৭-৮ কেজি ওজনের হতে পারে। সেটি রুই মাছ। বেশি বৃষ্টি ও জোয়ার থাকায় মাছ বা ডলফিন কোনটাই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।”
মৃত মা মাছ ও ডলফিন ভেসে যাওয়ার বিষয়টি রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়াকে ফোন করে জানান রোসাঙ্গীর আলম।
জানতে চাইলে রাউজান উপজেলার মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাতে হালদা পাড়ের একজন বাসিন্দা ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছেন। বিস্তারিত জেনে পরে এ বিষয়ে তথ্য দিতে পারব।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্য বিভাগের চেয়ারম্যান ও হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী ড. মনজুরুল কিবরিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল রাতে আজিমের ঘাট এলাকায় জোয়ারের সময় একটি মৃত ডলফিন ও একটি মা মাছ ভেসে যেতে দেখা গেছে।
“এ নিয়ে গত সাড়ে পাঁচ বছরে হালদায় মৃত ডলফিন এর সংখ্যা হল ৪২টি। আর চলতি বছর মৃত মা মাছের এর সংখ্যা বেড়ে হলো ৬টি।”
অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, “২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত হালদা নদীতে যে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং ছিল তাতে সম্প্রতি কিছুটা ভাটা পড়েছে। হালদা নদীকে রক্ষা করতে হলে সমন্বিত প্রশাসনিক নজরদারির বিকল্প নাই।”
নদী তীরের বাসিন্দা ও হ্যাচারি মালিক রোসাঙ্গীর আলম বলেন, “রোববার যে মা মাছটি আজিমের ঘাট এলাকায় মৃত পাওয়া যায় সেটি ছিল ১৯ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের। সবগুলো মা মাছই সপ্তাহখানেকের মধ্যে মারা গেছে।
“ধারণা করছি, কাছাকাছি সময়ে হালদায় বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আর দূষণ এখন খুব বেশি। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের পর ট্যানারির বর্জ্য ক্রমাগত হালদায় এসে পড়েছে। পরশু থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় হালদায় ঢল নেমেছে। তার আগে হালদায় পানি ছিল কম। তখন দূষিত পানি খাল হয়ে নদীতে পড়ার দৃশ্য পরিষ্কার দেখা গেছে।”
গত কয়েকদিনের মধ্যে যেসব মৃত মাছ দেখা গেছে সেগুলো ৮-২০ কেজি ওজনের মধ্যে। এগুলোই হালদার প্রাণ মা মাছ।
রোসাঙ্গীর আলম বলেন, “ট্যানারির দূষণ, বিষ প্রয়োগ এবং ফটিকছড়িতে নদীর বুকে রাবার ড্যাম বন্ধ করা না গেলে হালদাকে বাঁচানো যাবে না। আর হালদা রক্ষা করতে হলে অবশ্যই নদী পাড়ের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। নদীতে নজরদারি অবশ্যই বাড়াতে হবে।”
ইতোমধ্যে টানা মা মাছের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে মৎস্য বিভাগ। রোববার গঠিত ৫ সদস্যের ওই কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে ৭ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সোমবার বিকেলে হালদার সাথে যুক্ত খালগুলো ঘুরে দেখেন হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
হালদা নদীর সঙ্গে যুক্ত হাটহাজারী ও নগরীর পাঁচটি খালে পড়ে বিভিন্ন কলকারখানা ও গৃহস্থালী বর্জ্য। এসব খালের পানি সরাসারি গিয়ে পড়ে হালদায়। জুনের শুরু থেকে এসব খালে বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত পানি দেখা যাচ্ছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:
হালদায় মা মাছের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কমিটি
১৯ কেজির মা কাতল মাছ মিলল মৃত অবস্থায়
হালদায় আবার মা মাছের মৃত্যু, ভাবাচ্ছে নদীর 'দূষণ'
'নমুনা ডিম' ছেড়েছে মা মাছ, উৎসবের অপেক্ষায় হালদাপাড়ের মানুষ
হালদায় আশাতীত ডিম, হ্যাচারিতে গিয়ে 'হতাশা'
হালদায় প্রজনন মৌসুমে মাছের সাথে বেড়েছে চোরা শিকারীও
পানি কমেছে কাপ্তাইয়ে, লবণ বাড়ছে হালদায়, সংকটে চট্টগ্রাম ওয়াসা