পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এ চূড়া স্পর্শ করেন।
Published : 03 Nov 2024, 12:05 AM
পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের আমা দাবলাম চূড়ায় আরোহণ করেছেন পর্বতারোহী তানভীর আহমেদ শাওন।
শনিবার বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম চূড়া তিনি স্পর্শ করেন।
পর্বতারোহণ বিষয়ক ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স ক্লাবের’ অভিযান ব্যবস্থাপক ফরহান জামান এ তথ্য দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হিমালয়ের অন্যতম কঠিন চূড়া আমা দাবলাম জয়ী পঞ্চম গর্বিত বাংলাদেশি হলেন আমাদের তানভীর। ২০২২ সালে ডা. বাবর আলী এই জয়যাত্রা শুরু করেন।
“এরপর ২০২৩ সালে নিশাত মজুমদার ও কাউসার রুপক এবং চলতি মৌসুমেই তৌফিক আহমেদ তমাল এই দুর্দান্ত কীর্তি গড়েন।”
তরুণ পর্বতারোহী তানভীর ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স ক্লাবের অর্থ সম্পাদক।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ক্লাবটির ফেইসবুক পেইজে লেখা হয়, “সামিট শেষে বিকালে নিরাপদে ক্যাম্প-২ এ নেমে এসেছেন তানভীর। তিনি সুস্থ আছেন। খাওয়া দাওয়া শেষে আজ সেখানেই বিশ্রাম নিচ্ছেন। আগামীকাল (রোববার) আবার শুরু হবে নেমে আসা।”
পুরো পথেই তানভীরের সঙ্গে ছিলেন পর্বতারোহী বন্ধু ও গাইড বীরে তামাং।
হিমালয় কন্যা নেপালের ৬ হাজার ৮১২ মিটার বা ২২ হাজার ৩৪৯ ফুট উচ্চতার এক সুন্দর ও কঠিন পর্বত হল আমা দাবলাম, যার অর্থ-‘মায়ের গলার হার’।
এ পর্বত নেপালের গর্বের। এর খাড়া ও ঢালু দেয়ালের জন্য অনেকেই এ পর্বতকে ডাকেন ‘হিমালয়ের ম্যাটাহর্ন’ নামে। এই পর্বতের অনেকাংশে ৬০ থেকে ৯০ ডিগ্রি খাড়া পথ বেয়ে উঠতে হয় আরোহীকে।
সেই আমা দাবলামের চূড়ায় উঠতে গত ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ থেকে নেপালের পথে যাত্রা করেন কিশোরগঞ্জের সন্তান তানভীর। তিনি ‘ভি এফ এশিয়া বাংলাদেশের’ সিনিয়র প্ল্যানার হিসেবে কর্মরত।
পরদিন প্রয়োজনীয় অনুমতি এবং অন্যান্য প্রস্তুতি শেষে ১৫ অক্টোবর পৌঁছে যান রামেছাপ বিমানবন্দরে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়াতে সেখান থেকে লুকলার নিয়মিত বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় দুই দিন আটকে থাকতে হয়। তানভীর পরদিনই সড়ক পথে যাত্রা করেন বেসক্যাম্পের উদ্দেশে। কিছু পথ গাড়িতে এবং বাকি পথ হেঁটে তিনি ২৪ অক্টোবর পৌঁছে যান আমা দাবলাম বেসক্যাম্পে।
অভিযান ব্যবস্থাপক ফরহান জামান বলেন, সেখান থেকে একবার তিনি ঘুরে আসেন ক্যাম্প-২ থেকে, যা উচ্চতায় স্বল্প অক্সিজেন থাকা আবহাওয়ায় শরীরকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য অতি প্রয়োজনীয়। এরপর বেসক্যাম্প থেকে নেমে শুরু হয় উপযুক্ত আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা।
“১ নভেম্বর আমা দাবলাম জয়ের কঠিন পরীক্ষা শুরু হয়। তিনি সেদিনই উঠে যান ক্যাম্প-২ এ। মধ্যরাতে শুরু হয় চূড়ার লক্ষ্যে চূড়ান্ত যাত্রা এবং সকালে তিনি এ পর্বত শীর্ষ স্পর্শ করেন।”
অভিযানের অপারেটর ‘স্নোয়ি হরাইজন ট্রেক্স অ্যান্ড এক্সপিডিশন’ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বোধা রাজ ভাণ্ডারির বরাতে তানভীরের আমা দাবলাম আরোহণের তথ্য নিশ্চিত হওয়ার কথা জানান ফরহান।
তানভীর কর্মসূত্রে ঢাকার বাসিন্দা ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
অন্যান্য পর্বতারোহীর মতই তারও পাহাড়ে পথ চলা শুরু হয় বান্দরবানে। তিনি ভারতের দেও তিব্বা (৬ হাজার ১ মিটার), রামজাক পর্বত (৬ হাজার ৩০৭ মিটার) এবং নেপালের চুলু ফার-ইস্ট (৬ হাজার ৫৯ মিটার) পর্বত অভিযান করেন।
আমা দাবলাম পর্বতের এই অভিযানে ব্যয়ের বড় একটি অংশ যোগান দিয়েছে ‘ব্যাগ’, ‘ফ্লিয়েসভা বাংলাদেশ’ ও ‘এলিট ট্রাভেলস’। অভিযানে সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স ক্লাব।
পুরনো খবর-