‘মাঠেই নামার কথা ছিল না’ শামার জোসেফের

ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে খেলা এই পেসারই ব্রিজবেন টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এনে দিলেন অভাবনীয় এক জয়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2024, 09:59 AM
Updated : 28 Jan 2024, 09:59 AM

অফ স্টাম্পের ওপর একেবারে নিখুঁত লেংথ ডেলিভারিটির লাইন মিস করলেন জশ হেইজেলউড। বল স্টাম্পে ছোবল দিতেই ব্রিজবেনের সবুজ আঙিনায় খ্যাপাটে দৌড় দিলেন শামার জোসেফ। তাকে আর পায় কে! তার পেছনে দৌড়াতে শুরু করলেন বাকি সতীর্থরাও। বাউন্ডারির কাছে গিয়ে পেলেন জোসেফের নাগাল, তাকে জড়িয়ে ধরে সবাই মিলে শুরু করলেন উদযাপন। সেটা যেন থামার নয়। থামবেই বা কেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অবিশ্বাস্য এক জয় যে এনে দিয়েছেন তিনি।

রোমাঞ্চ-উত্তেজনায় ঠাসা গ্যাবা টেস্টে রোববার চতুর্থ দিন ৮ রানের অভাবনীয় জয় পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৯৭ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এই প্রথম জিততে পেরেছে তারা।

ক্যারিবিয়ানদের এই অসাধারণ জয়ের নায়ক আর কেউ নন, শামার জোসেফ। ১১.৫ ওভারে ৬৮ রান দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেট একাই নেন এই পেসার। এই ম্যাচের সেরা তিনি ছাড়া আর কে! আগের ম্যাচে অভিষেকেও আলো ছড়ানো ২৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারই জেতেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।

অথচ এদিন খেলার কথাই ছিল না শামার জোসেফের। আগের দিন ব্যাটিংয়ের সময় মিচেল স্টার্কের ইয়র্কার ছোবল দিয়েছিল তার পায়ের অগ্রভাগে। পরে ব্যাটিং চালিয়ে যেতে পারেননি, মাঠ ছাড়তে হয়েছিল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। স্ক্যান করাতে যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। তিনি বোলিংয়ে ফিরতে পারেন সেটা চিন্তা করাই অসম্ভব ছিল।

ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে সেই জোসেফই গড়ে দিলেন ব্যবধান। পায়ের চোট নিয়ে প্রথম সেশনে টানা করেন ১০ ওভারের স্পেল, নেন ৬ উইকেট। বিরতি থেকে ফিরেও চালিয়ে যান বোলিং। তার হাত ধরেই জয়ের আনন্দে মাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জোসেফ তুলে ধরেন তার মনের অবস্থা।

“উৎসাহ দেওয়ার জন্য কৃতিত্বটা কেবল সতীর্থদের দিতে চাই। ব্যথা নিয়েও দল ও ক্যারিবিয়ান মানুষদের জন্য আমি চেষ্টা করে যেতে চাই। আজকে আমার মাঠে নামার কথা ছিল না। তবে চিকিৎসক আমার পায়ের আঙুলে কিছু একটা করেছেন। জানি না কী করেছেন, তবে সেটা কাজে দিয়েছে। কেবল মৌলিক বিষয়গুলোয় থাকার চেষ্টা করেছি। এই টেস্ট জিতে আমার কাছে মনে হচ্ছে পুরো সিরিজ জিতে গেছি আমরা।”

“ডাক্তার আমাকে সকালে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কেমন অনুভব করছি। বলেছিলাম, অনেক ব্যথা। সে পরে বললেন, মাঠে নামতে এবং তার বিশ্বাস ছিল আমি বোলিং করতে পারব। যখন পাঁচ উইকেট নিলাম, আনন্দে অশ্রু ঝরছিল। আমি এখন অনেক খুশি। এমনকি কোনো ক্লান্তিও নেই। মনে হচ্ছে, বোলিং চালিয়ে যেতে পারব।”

জোসেফ যে মাঠে নামতে পারবেন শুরুতে জানতেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। খেলা শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে তাকে জানানো হয় বিষয়টি। এরপর মাঠে নেমে জোসেফ যেটা করলেন, ব্র্যাথওয়েটের মতে, পুরো দলের জন্য এটা একটি উদাহরণ। 

“দিনের খেলা শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে জানতে পারলাম, সম্ভবত শামারকে পেতে যাচ্ছি। চিকিৎসক বলেছিল, তাকে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে এবং সে ভালো আছে। এরপর শামার নিজে বলল, সে মাঠে নামতে যাচ্ছে। আমার তাকে সমর্থন করতেই হতো।”

“সে সুপারস্টার এবং আমি জানি, ভবিষ্যতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য সে আরও অনেক দারুণ কিছু করবে। স্রেফ তার বিশ্বাসের কারণে। অনুসরণ করার জন্য, এটা দারুণ এক উদাহরণ।”

নতুন বলে শামার জোসেফের সঙ্গী অভিজ্ঞ পেসার কেমার রোচও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সতীর্থকে। তার দেখা ম্যাচ জেতানো সেরা বোলিং ছিল এটা।

“আমরা জানতাম, এই ম্যাচ জিততে বিশেষ কিছুর প্রয়োজন হবে। মনে হয়, আমার দেখা ম্যাচ জেতানো সেরা স্পেল ছিল এটি (জোসেফের বোলিং)। সে ক্যারিবিয়ান মানুষদের জন্য অসাধারণ কিছু করে দেখাল।”

খুব কাছে গিয়েও হারের হতাশায় পুড়ছে অস্ট্রেলিয়া। তবে জোসেফের দুর্দান্ত বোলিংয়ের প্রশংসা করতে ভোলেননি স্বাগতিকদের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স।

“ম্যাচ হারার পর অবশ্যই হতাশ আমরা। তবে চমৎকার একটি টেস্ট ম্যাচ এবং দারুণ একটি সিরিজ ছিল এটি। বিশেষ করে শামার আজকে যেভাবে বোলিং করেছে, সে দুর্দান্ত ছিল এবং দুর্ভাগ্যবশত আমরা যথেষ্ট ভালো ছিলাম না।”