মুশফিক-তৌহিদকে ছাপিয়ে দ্যুতিময় রনি

সিলেট স্ট্রাইকার্সকে হারিয়ে টানা পঞ্চম জয় পেল রংপুর রাইডার্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2023, 04:41 PM
Updated : 4 Feb 2023, 04:41 PM

ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেললেন তৌহিদ হৃদয়। আসরে প্রথম ফিফটির দেখা পেলেন মুশফিকুর রহিম। দুজন মিলে শুরুর চাপ সামলে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে এনে দিলেন লড়াকু সংগ্রহ। তবু তা জয়ের জন্য যথেষ্ট হলো না। চমৎকার ইনিংসে রংপুর রাইডার্সকে জেতালেন রনি তালুকদার।  

অভিজ্ঞ এই ওপেনারের ঝড়ো ফিফটিতে সিলেটকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে রংপুর। ১৭১ রানের লক্ষ্য ১২ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলেছে তারা। 

চলতি বিপিএলে নিজের দ্বিতীয় ফিফটিতে ৩৫ বলে ৬৬ রান করেন রনি। ৮ চার ও ৩ ছয়ে সাজান নিজের ইনিংস। এছাড়া দুটি চল্লিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেন মোহাম্মদ নাইম শেখ ও শোয়েব মালিক। 

এর আগে সিলেটের ইনিংসে ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে ১৩ চার ও ২ ছয়ে ৫৭ বলে ৮৫ রান করেন হৃদয়। মাশরাফি বিন মুর্তজার অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া মুশফিক ৫ চার ও ৩ ছয়ের মারে ৩৫ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন। তবু শেষ পর্যন্ত জয় মেলেনি। 

রংপুরের এটি টানা পঞ্চম জয়। সবমিলিয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে তাদের অবস্থান।  

রংপুরের ওপরে থাকা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ফরচুন বরিশালের ঝুলিতেও ১০ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট। নেট রান রেটে এগিয়ে রয়েছে তারা। ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে সিলেট। 

টস জিতে সিলেটকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় রংপুর। দারুণ বোলিংয়ে দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও হৃদয়কে আটকে রাখেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারালেও ২৬ রানের বেশি করতে পারেনি সিলেট।  

নিজের প্রথম দুই ওভারে কোনো রান দেননি ওমরজাই। ২০১৬ সালে আরাফাত সানি ও চলতি আসরে নাহিদুল ইসলামের পর বিপিএল ইতিহাসে স্রেফ তৃতীয় বোলার হিসেবে এক ম্যাচে দুই মেডেনের রেকর্ডে নাম লেখান আফগান অলরাউন্ডার।  

ওমরজাইয়ের করা অষ্টম ওভারে প্রথম দুই বলে চার মেরে হাত খোলার আভাস দেন শান্ত। তবে পরের ওভারে তাকে ফিরিয়ে দেন হাসান মাহমুদ। ২ চারে ১৫ রান করতে ২২ বল খেলে আউট হন শান্ত।  

তখন অন্য প্রান্তে থাকা হৃদয়ের নামের পাশে ২৮ বলে ২৪ রান। তিন নম্বরে নেমে জাকির হাসান অল্পেই ফিরে যান। শেখ মেহেদি হাসানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।  

উইকেটে গিয়ে দ্বিতীয় বলেই ফিরতে পারতেন মুশফিক। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন তিনি। ক্যাচ জমাতে পারেননি শামীম হোসেন। উল্টো ছক্কা পেয়ে যান মুশফিক। 

ওই ছয়ই যেন ঘুরিয়ে দেয় সিলেটের ইনিংসের চাকা। ১১ ওভারে ৬৫ থেকে পরের ৯ ওভারে ১০৫ রান পায় তারা। অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেট জুটিতে স্রেফ ৫৭ বলে ১১১ রান যোগ করেন মুশফিক ও হৃদয়।  

হাসানের করা ১৪তম ওভারে পরপর তিন বলে চার-ছয়-চার মেরে পঞ্চাশ পূরণ করেন হৃদয়। আসরে নিজের পঞ্চম ফিফটিতে পৌঁছতে খেলেন ৪৩ বল। এরপর আরও ১৪ বল মোকাবিলায় ৩২ রান নেন তিনি। 

বিপিএল অভিষিক্ত অ্যারন জোন্সের করা ১৫তম ওভারে ৩ চারে ১৫ রান তোলে সিলেট। রবিউল হক পরের ওভারে দেন ১১ রান।  

শেষ ৪ ওভার থেকে আরও ৪৯ রান যোগ করেন মুশফিক ও হৃদয়। হারিসের করা ১৮তম ওভারে স্কয়ার লেগ দিয়ে বিশাল ছক্কা মারেন মুশফিক। ওই ওভারে প্রায় একই জায়গা দিয়ে চার মারেন হৃদয়।  

হাসানের করা ১৯তম ওভারে এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ছয় মারেন হৃদয়। এক বল পর পূরণ হয় মুশফিকের পঞ্চাশ। ৩টি করে চার-ছয়ে ৩০ বলে আসরে নিজের প্রথম ফিফটি করেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।  

রান তাড়ায় রংপুরকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন রনি ও নাইম। ইনিংসের প্রথম বলেই চার মারেন নাইম। পরে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন রনি। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে আসে ৫৯ রান। 

প্রতি ওভারেই অন্তত একটি করে বাউন্ডারি মারেন রংপুরের দুই ওপেনার। ষষ্ঠ ওভারে রেজাউর রহমান রাজাকে তিনটি চার মারেন রনি। পরের ওভারে বাউন্ডারির স্রোতে বাধ সাধেন রায়ান বার্ল। 

অষ্টম ওভারে প্রথমবার আক্রমণে আসেন থিসারা পেরেরা। দ্বিতীয় বলে ৪ মারেন রনি। পরের বলে ছক্কা মেরে স্রেফ ২৭ বলে আসরে নিজের দ্বিতীয় পঞ্চাশে পৌঁছান ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। 

ফিফটির পর বেশি দূর যেতে পারেননি রনি। মোহাম্মদ ইরফানের বলে এক্সট্রা কভারে মুশফিকের হাত ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। রনির বিদায়ে ভাঙে ১০০ রানের উদ্বোধনী জুটি।  

এরপর হাত খোলেন নাইম। রুবেল হোসেনকে মারেন জোড়া চার। জাগান আসরে নিজের প্রথম ফিফটির সম্ভাবনা। সেটি করার আগেই তাকে বোল্ড করেন রাজা। ৬ চারে ৩২ বলে ৪৫ রান করেন নাইম।  

তখন জয়ের জন্য ৪৬ বলে ৪৭ রান প্রয়োজন ছিল রংপুরের। যা অনায়াসে করে ফেলেন শোয়েব মালিক ও অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান।  

৪ চার ও ১ ছয়ে স্রেফ ২৪ বলে ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন মালিক। সোহানের ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলে ১৭ রান।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

সিলেট স্ট্রাইকার্স: ২০ ওভারে ১৭০/২ (হৃদয় ৮৫*, শান্ত ১৫, জাকির ৭, মুশফিক ৫৫*; মেহেদি ৩-০-২০-১, ওমরজাই ৪-২-১৭-০, রউফ ৪-০-৩৫-০, রবিউল ৪-০-৩১-০, হাসান ৪-০-৪৮-১, জোন্স ১-০-১৫-০) 

রংপুর রাইডার্স: ১৮ ওভারে ১৭৬/২ (নাইম ৪৫, রনি ৬৬, মালিক ৪১*, নুরুল ১৭*; রুবেল ৩-০-২৯-০, ইরফান ৪-০-৩৮-১, নাবিল ৩-০-২৪-০, রাজা ৪-০-৩৫-১, বার্ল ২-০-১৫-০, থিসারা ২-০-৩৩-০)  

ফল: রংপুর রাইডার্স ৮ উইকেটে জয়ী 

ম্যান অব দা ম্যাচ: রনি তালুকদার