শামীমের দুর্দান্ত ইনিংস ও মেহেদির ক্যামিওতে সাকিবদের বিদায়

টুর্নামেন্টে টিকে থাকার ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে হারিয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের টিকেট পেল রংপুর রাইডার্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2023, 12:31 PM
Updated : 12 Feb 2023, 12:31 PM

শেষ ওভারে প্রয়োজন দাঁড়াল ৮ রান। প্রথম বলে ১ রান নিয়ে শেখ মেহেদি হাসানকে স্ট্রাইক দিলেন দাসুন শানাকা। ফাইন লেগের ফিল্ডারকে ত্রিশ গজের ভেতরে দেখে স্কুপে বাউন্ডারি হাঁকালেন মেহেদি। পরের ডেলিভারিতে বল তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে গেল সীমানার বাইরে। টুর্নামেন্টে টিকে থাকার আনন্দে হেলমেট খুলে সেটাকে ব্যাট দিয়ে শট খেলার ভঙ্গিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন মেহেদি।

দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে বিদায় করে শিরোপার আশা বাঁচিয়ে রেখেছে রংপুর রাইডার্স। রোববার এলিমিনেটর ম্যাচে ৪ উইকেটে জিতেছে রংপুর। ১৭১ রানের লক্ষ্য ৩ বল হাতে রেখে ছুঁয়ে ফেলে তারা। 

রংপুরের জয়ের মঞ্চ সাজিয়ে দেওয়ার নায়ক অবশ্য শামীম হোসেন। এবারের বিপিএলে প্রথমবারের মতো তিন নম্বরে নামার সুযোগ পেয়ে দারুণ এক ফিফটি করেন তিনি। 

দলকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়ে আউট হন শামীম। ৪টি করে চার-ছক্কায় খেলেন ৫১ বলে ৭১ রানের ইনিংস। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলার পর ম্যাচ সেরার প্রশ্নে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না কেউ।

শামীম আউট হওয়ার পর এক প্রান্ত ধরে রেখে দলকে জয়ের লক্ষ্যে রাখেন শানাকা। আট নম্বরে নেমে ৪টি চারে ১৮ রানের ক্যামিও খেলে বাকি কাজ সারেন মেহেদি।

এই জয়ে টুর্নামেন্টে টিকে থাকল রংপুর। মঙ্গলবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ হবে সিলেট স্ট্রাইকার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের প্রথম কোয়ালিফায়ারের পরাজিত দল। 

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে ভালো শুরু পায় বরিশাল। দ্বিতীয় ওভারে তিনি প্রথম বাউন্ডারি হাঁকানোর পরের ওভারে রকিবুল হাসানকে ওড়ান ছক্কায়। হাসান মাহমুদের টানা তিন বলে মারেন চার। 

এই ম্যাচের আগে দলে যোগ দেওয়া আন্দ্রে ফ্লেচার পারেননি তেমন কিছু করতে। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে রকিবুলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন ডিপ মিড উইকেটে। ১২ রান করতে ১৬ বল খেলেন ক্যারিবিয়ান ওপেনার।

তিন নম্বরে নেমে মিরাজের সঙ্গে ৪৬ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ। এই জুটি গড়ার পথে দ্বাদশ ওভারে শেখ মেহেদি হাসানকে স্লগ সুইপে চার মেরে পঞ্চাশে পৌঁছান মিরাজ। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি করতে তিনি খেলেন ৩৫ বল।

ওই ওভারেই নিজের একমাত্র ছক্কাটি মারেন মাহমুদউল্লাহ। পঞ্চাশের পর ডোয়াইন ব্রাভোকে দারুণ টাইমিংয়ে জোড়া চার মারেন মিরাজ। 

চতুর্দশ ওভারে আক্রমণে এসে দুই সেট ব্যাটসম্যানকে ফেরান শানাকা। স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ। ৪ চার ও ১ ছক্কায় করেন ২১ বলে ৩৪ রান।

শানাকার পরের ওভারে হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিরাজ। ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৪৮ বলে তিনি খেলেন ৬৯ রানের ইনিংস।

মিরাজ-মাহমুদউল্লাহ আউট হওয়ার পর শেষ ২৯ বলে ৪৪ রান যোগ করেন ভানুকা রাজাপাকসা ও করিম জানাত। জানাত ২৫ বলে ৩৩ রান এবং ভানুকা ১০ বলে ১৭ রান করেন।

ব্যাট হাতে দারুণ টুর্নামেন্ট কাটলেও বিপিএল ক্যারিয়ারের শততম ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নামেননি সাকিব। 

রান তাড়ায় শুরুতেই উইকেট হারায় রংপুর। সাকিবের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন নাইম শেখ। ওভারটিতে কোনো রান দেননি সাকিব।

পাল্টা আক্রমণে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন রনি তালুকদার ও শামীম। প্রথম ওভার মেইডেনের পরও পাওয়ার প্লেতে রংপুর তোলে ৫৫ রান।

ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের করা চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই অবশ্য ভাঙতে পারত শামীম-রনির জুটি। রনির শটে লং অনে দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ বল হাতে জমালেও ভারসাম্য হারিয়ে সীমানার টবলারে পা দিয়ে ফেলেন।

ওই ওভারের পঞ্চম বলে পুল করে নিজের প্রথম ছক্কা মারেন শামীম। পরের ওভারে সাকিবকে ছক্কায় ওড়ান রনি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মিরাজকে চার-ছয় মারেন শামীম। 

অষ্টম ওভারে ৬৯ রানের জুটি ভাঙেন কামরুল ইসলাম। খাটো লেংথের ডেলিভারি পেছনের পায়ে ভর করে সজোরে চালান রনি। তবে ধরা পড়ে যান ডিপ কভারে সানজামুল ইসলামের হাতে। ২টি করে চার-ছক্কায় ১৭ বলে ২৯ রান করেন রনি।

সোহান শুরু থেকে দ্রুত রান তোলায় মন দিলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। একাদশ ওভারে নিজের কোটার শেষ বলে রংপুর অধিনায়ককে এলবিডব্লিউ করেন সাকিব। ৩ চারে ১৩ বলে ১৮ রান করেন সোহান।

তখনও জয়ের জন্য ৯ ওভারে ৭৫ রান প্রয়োজন ছিল রংপুরের। তবে শামীম দৃঢ় হাতে এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। সোহান ফেরার পরের ওভারেই ১২ রান নেয় রংপুর। ৩৬ বলে বিপিএল ক্যারিয়ারে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি করেন শামীম।

ক্রমেই হাত থেকে ছুটে যেতে থাকা ম্যাচে বরিশালের আশা জাগান খালেদ আহমেদ। ত্রয়োদশ ওভারে আক্রমণে এসে রংপুরের রানের স্রোতে বাধ দেন ডানহাতি পেসার। আর ১৫তম ওভারে নিকোলাস পুরানকে ফিরিয়ে দেন তিনি।

এক ওভার পর খালেদের স্লোয়ার লেংথ ডেলিভারি উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনের কাছাকাছি হাতে ধরা পড়েন শামীম। লড়াইয়ে জাগে বাড়তি রোমাঞ্চ।

তখনও ২০ বলে রংপুরের দরকার ছিল ৩১ রান। ব্রাভো ফিরে যান দ্রুত। তবে দারুণ দৃঢ়তায় বাকিটা সামলে নেন শানাকা ও মেহেদি। দুজনের ১১ বলে ২১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয় পায় রংপুর।

শানাকা ১২ বলে ১৫ ও মেহেদি ৯ বলে ১৮ রান করে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৭০/৩ (মিরাজ ৬৯, ফ্লেচার ১২, মাহমুদউল্লাহ ৩৪, জানাত ৩৩*, রাজাপাকসা ১৭*; রকিবুল ৪-০-৩২-১, মুজিব ৩-০-১৯-০, হাসান ৪-০-৪৪-০, ব্রাভো ৪-০-২৯-০, মেহেদি ২-০-২৩-০, শানাকা ৩-০-২৩-২)

রংপুর রাইডার্স: ১৯.৩ ওভারে ১৭২/৬ (নাইম ০, রনি ২৯, শামীম ৭১, সোহান ১৮, পুরান ৫, শানাকা ১৫*, ব্রাভো ২, মেহেদি ১৮*; সাকিব ৪-১-২৭-২, প্রিটোরিয়াস ৩-০-৩২-০, মিরাজ ২-০-২৭-০, সানজামুল ২-০-১৪-০, কামরুল ৩.৩-০-৩৩-২, জানাত ১-০-১২-০, খালেদ ৪-০-২৩-২)

ফল: রংপুর রাইডার্স ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: শামীম হোসেন