‘পরের বিশ্বকাপের জন্য দল প্রস্তুত হয়ে যাবে দুই-এক বছরের মধ্যেই’

আগামী বিশ্বকাপকে ঘিরে আশার কথা বলছেন নির্বাচক হাবিবুল বাশার, তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানসিক শক্তি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ তার।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিপুনে থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2023, 01:50 PM
Updated : 8 Nov 2023, 01:50 PM

এই বিশ্বকাপে একটি ম্যাচ এখনও বাকি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে হলে ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেটারদের মনোযোগ নিশ্চয়ই এখন কেবল সেই ম্যাচের দিকেই। তবে নির্বাচকদের ভাবনার পরিধি তো আরও বড়। হাবিবুল বাশার যেমন আগামী বিশ্বকাপের কথা ভাবছেন এখনই। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে যে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে, সেই ধারায় পরের বিশ্বকাপের অনেক আগেই দল প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে বিশ্বাস সাবেক এই অধিনায়কের।

হাবিবুল এখন আছেন দলের সঙ্গেই। বিশ্বকাপের শুরুতে নির্বাকদের মধ্য থেকে থেকে দলের সঙ্গে ছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। কলকাতা পর্বের আগে দেশে ফিরে যান তিনি। দলের সেমি-ফাইনাল খেরার আশা ততদিনে প্রায় শেষ। এরপর দলের সঙ্গে যোগ দেন হাবিবুল। তিনি স্বাক্ষী হন দলের আরও দুর্দশার।

কলকাতায় দুই ম্যাচ ও সব মিলিয়ে টানা ৬ ম্যাচ হারার পর অবশেষে দিল্লিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। তাতে একটু স্বস্তি ফিরেছে দলে। কিন্তু মূল স্বপ্ন তো দুমড়েমুড়ে গেছে বেশ আগেই।

সেই হতাশা হাবিবুলেরও সঙ্গী। পুনের টিম হোটেলে বুধবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অকপটেই তা বললেন এই নির্বাচক।

“আমরা সবাই দেখেছি বিশ্বকাপ কেমন কেটেছে আমাদের। নিশ্চিতভাবেই হতাশার। আমরা অনেক আশা করে এসেছিলাম। প্রত্যাশাও অনেক বেশি ছিল। সেটা কোনোভাবেই আমরা পূরণ করতে পারিনি। এই বিশ্বকাপের আগে আমাদের দলটা যেমন ফর্মে ছিল, পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে আমরা যতটা ধারাবাহিক, খুব ভালো খেলছিলাম, সেজন্য প্রত্যাশা একটু বেশি ছিল। আমরা প্রত্যাশা মেটাতে পারিনি। আরও ভালো হওয়া উচিত ছিল। এটা হয়ে থাকে। অনেক সময় আপনি ফর্মে এসে টুর্নামেন্টে ফর্ম হারিয়ে ফেলতে পারেন। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে আসলে।”

বিশ্বকাপ ব্যর্থতার কারণ নিয়ে গত কিছুদিনে অনেক আলোচনা হয়েছে। এখনও কারণ অনুসন্ধান চলছে। চলবে সামনেও। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কারণ সুনির্দিষ্ট করে জানেন না তারাও।

হাবিবুল অবশ্য একটা কারণ পেয়েছেন। তার মতে, স্কিলের ঘাটতির চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে মূলত মানসিকতার লড়াইয়ে।

“বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে আসার আগে আমাদেরকে মানসিক শক্তি নিয়ে বেশি কাজ করা উচিত। স্কিলের দিক থেকে আমরা আগে যা ছিলাম, এখন তাই আছি। বিশ্বকাপে বাকি দলগুলো অনেক প্রস্তুতি নিয়ে আসে। আমরাও অনেক প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলাম। কিন্ত এখানে শক্ত মানসিকতার একটা ব্যাপার থাকে। এরপর এই ধরনের টুর্নামেন্টে আসার আগে আমাদের মেন্টাল স্কিল নিয়ে কাজ করতে হবে।”

মানসিক শক্তির ব্যাপারটি অনেকটাই নির্ভর করে আসলে ক্রিকেটারদের নিজেদের ওপরই। তবে বিসিবিরও এখানে করণীয় দেখছেন হাবিবুল। নানা সময়ে বাংলাদেশ দলে মনোবিদ কাজ করেছেন বটে। তবে লম্বা সময়ের জন্য বা সার্বক্ষণিক কোনো মনোবিদ নেই অনেক বছর ধরেই। হাবিবুলের মতে, এদিকেই এখন নজর দেওয়া উচিত বোর্ডের।

“মনোবিদ তো আগেও কাজ করেছেন। তবে বছর জুড়ে যদি সব সময় আমাদের সঙ্গে থাকেন সব সময়…আমার মনে হয় যে স্কিলের দিক থেকে ওরা যা ছিল, তাই আছে। এই খেলোয়াড়রাই ভালো খেলছিল। এই বোলার, এই ব্যাটসম্যানরাই ভালো করেছে। বিশ্বকাপে এসে আমরা ওই ফর্মটা ধরে রাখতে পারিনি। আমার মনে হয় স্কিলে কোনো সমস্যা নেই। মানসিকভাবে কীভাবে শক্তিশালী থাকা যায়, এটা আমাদের শিখতে হবে।”

“মনোবিদ তো আমাদের সঙ্গে আগেও ছিল। এটা আরও আগে থেকে শুরু করা উচিত। বিশেষ করে আমাদের যারা তরুণ ক্রিকেটার, তাদের নিয়েই বেশি কাজ করা উচিত।”

বিশ্বকাপে এভাবে যখন মুখ থুবড়ে পড়ে কোনো দল, এরপর সবকিছু ঢেলে সাজানোর ব্যাপারটি আসেই। নতুন করে সব শুরু করা, দল বাছাই থেকে শুরু করে সবকিছুতে লম্বা পরিকল্পনা করা, পরের বিশ্বকাপের জন্য দলটাকে গড়ে তোলার ব্যাপার থাকে। হাবিবুলও সেভাবেই ভাবছেন। ঘাটতির প্রচুর জায়গা তার চোখে পড়েছে এই দলে। সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গার কথাও তিনি বললেন আলাদা করে।

“সত্যি কথা বলতে আমাদের সব বিভাগে কাজ করতে হবে। টপ অর্ডার ব্যাটিং, ফিনিশিং, আমাদের বোলিং…। বিশেষ করে মাঝের ওভারগুলোয় বোলারদের উইকেট নেওয়ার সামর্থ্যটা খুব গুরুত্বপূর্ষ। এখন যে ধরনের ক্রিকেট হয়, আপনি যদি মাঝের ওভারগুলোতে উইকেট না নিতে পারেন, তাহলে বড় রান আটকাতে পারবেন না। আমরা এই বিশ্বকাপে সেটাতে বেশ ভুগেছি।”

“ব্যাটিংয়ে টপ অর্ডার যদি রান না করতে পারে, তাহলে কঠিন হয়ে যায়। যদি উইকেট ভালো থাকে, এই যুগে তাহলে আপনাকে তিনশ রান তাড়া করার মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিং করতে হবে সবসময়। আমাদের সবকছু নিয়েই কাজ করতে হবে, শুধু একটা বিভাগ নয়।”

সব শূন্যতা পূরণের আশাও তার আছে প্রবলভাবে। সেই আশার মূল ভিত্তি, ঘরোয়া ক্রিকেটে কিছু জায়গায় উন্নতি। হাবিবুলের মতে, সেসবের প্রভাব জাতীয় দলে পড়তে আরেকটু সময় লাগবে। তবে পরের বিশ্বকাপের অনেক আগেই দলটা তৈরি হয়ে যাবে বলে বিশ্বাস তার।

“আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট তো নিশ্চিতভাবে অনেক উন্নতি করেছে। উইকেট নিয়ে অনেক কথা হতো। কিন্তু শেষ দুই বছরে উইকেট অনেক স্পোর্টিং হয়েছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উইকেট খুব ভালো থাকে। প্রিমিয়ার লিগের উইকেটও ভালো থাকে। এখন কিন্তু এই জিনিসগুলোর পরিবর্তন শুরু হয়েছে আস্তে আস্তে। সেটার ফল হয়তো আমরা এখন দেখতে পারছি না। আগামী বিশ্বকাপ চার বছর পর, এই সময়ে দলটা প্রস্তুত হয়ে যাবে। এক-দুই বছরের মধ্যেই প্রস্তুত হয়ে যাবে।”

আগামী বিশ্বকাপ ২০২৭ সালে, যৌথভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়াতে।