এই মাসের শেষ দিকে দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে খেলতে পারবেন না বাংলাদেশের এই পেসার।
Published : 12 Nov 2023, 10:02 AM
‘দোয়া করবেন ভাই, ইনজুরিটা যেন ঠিক হয়ে যায়’- সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ম্রিয়মান কণ্ঠে বললেন তাসকিন আহমেদ। তার মুখটাও বেশ মলিন, ঠিক যেমন এই বিশ্বকাপে তার বোলিং। দল ভালো করেনি, তিনি নিজেও বল হাতে বিবর্ণ। সেই হতাশার ছাপই হয়তো পড়ছে তার চেহারায়। সামনে তাকিয়ে তার মূল দুর্ভাবনা চোট নিয়েই। নিজেই জানালেন, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সামনের টেস্ট সিরিজটায় খেলতে পারবেন না।
তার বোলিং দেখেই অবশ্য বোঝা যাচ্ছিল, ঠিকঠাক হচ্ছে না কোনো কিছু। পরে জানা যায়, কাঁধের পুরনো চোট মাথাচাড়া দিয়েছে আবার। বিশ্বকাপের মাঝামাঝি সময়ে দুটি ম্যাচ খেলতে পারেননি। যে ম্যাচগুলি খেলেছেন, অনেকটা নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। ৭ ম্যাচে শিকার করেছেন স্রেফ ৫ উইকেট।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ নিয়ে দলের আশা ছিল প্রবল। সেই ভরসা ছিল তাসকিনের ওপরই। কিন্তু তিনি নিজে বা অন্য কোনো পেসারই পারেননি প্রত্যাশা পূরণ করতে।
পেসারদের ব্যর্থতার দায় কিছুটা নিজেদের ওপর নিলেন তাসকিন, কিছুটা দিলেন উইকেট-কন্ডিশনকে এবং নিজেদের ব্যাটসম্যানদেরও।
“আমার মনে হয়, আমরা আসলে ব্যাটিং বান্ধব উইকেটগুলোতে খুব বেশি রান করতে পারিনি। এজন্য প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা কম ঝুঁকি নিয়ে ব্যাটিং করেছে বা সেট হয়ে গেলে আমাদের ওপর চড়াও হয়েছে। যদিও আমরা আরেকটু ভালো করতে পারতাম। কিন্তু ভারতীয় এসব উইকেটে পুরো টুর্নামেন্ট খেলে কেউ যদি ওভারপ্রতি রান ছয়-সাড়ে ছয়ে শেষ করতে পারে, এটা খুব ভালো।”
“তবে আরও ভালো করতে পারতাম হয়তো। সামনে চেষ্টা করতে হবে। আশা ছাড়া তো কিছু করার নেই। না পারলে আবার চেষ্টা করতে হবে।”
এসব পারিপার্শ্বিকতা ভাবনায় রেখেও তাসকিনের দিকে আলাদা করে আঙুল তোলা যায়। গত দুই-আড়াই বছর ধরে যেভাবে বোলিং করছিলেন তিনি, যেভাবে উন্নতি করে পেস আক্রমণে নেতা হয়ে উঠেছেন, যে ধার তার বলে দেখা গেছে, সেসবের কাছাকাছিও ছিল না এবারের বিশ্বকাপে।
সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার মতো ছিল তার গতি। এমনিতে পুরো ছন্দে থাকলে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতি তিনি ছাড়িয়ে যান নিয়মিতই। কিন্তু এই বিশ্বকাপে ১৩৫ কিলোমিটারের আশেপাশে ছিল তার গতি। লেংথ ও লাইনও খুব ধারাবাহিক ছিল না।
তাসকিন তখন জানালেন, কাঁধের সেই চোটের সঙ্গে লড়াই করেই তাকে বিশ্বকাপে খেলতে হয়েছে।
“চোট নিয়ে খেলছিলাম, ছন্দ পাচ্ছিলাম না… এর মধ্যে মার্জিন (ভুল ও ঠিক লাইন-লেংথের) ছোট ছিল। সব মিলিয়ে একটি কঠিন টুর্নামেন্ট গেছে। আমি খুব ভুগছিলাম, কারণ আমার কাঁধে কিন্তু ‘টিয়ার’ আছে। এটা নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছি।”
“তারপরও, আশামতো ভালো হয়নি পারফরম্যান্স। যখনই দলগতভাবে ভালো হয়েছে, নতুন বলে বা সব মিলিয়ে, আমার পারফরম্যান্স অনেক কার্যকর ছিল। আমি ‘আপ টু দা মার্ক’ বোলিং করতে না পারলে দলেও সেটির প্রভাব পড়েছে, এবার দেখলাম তা। ভবিষ্যতে আবার আরও ভালো করব। মূল ব্যাপারটা হলো ছন্দ। দোয়া করবেন যেন ফিট থাকি। ফিট থাকলেই আমি ভালো করব।”
গত দেড় বছরে মাঝেমধ্যেই তার মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে এই চোট। এক সময় অস্ত্রোপচারের ভাবনাও ছিল তার। তবে বিশেষজ্ঞ দেখানোর জন্য জানা গেছে, অস্ত্রোপচারেও ঠিক নাও হতে পারে এই সমস্যা। বরং আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কাও আছে। তাই ভিন্ন পথ বেছে নিতে হচ্ছে তাকে। তিনি নিজে এবং দল থেকে নানা সময়ে বলা হয়েছে, এই চোট ‘ম্যানেজ’ করেই খেলতে হবে। কখনও বিরতি দিয়ে, প্রয়োজনে একটু বেশি বিশ্রাম দিয়ে, ওয়ার্কলোড ম্যানেজ করে খেলাতে হবে।
সেটির অংশ হিসেবে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সামনের দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ তিনি খেলতে পারছেন না।
“এই সিরিজটা খেলতে পারব না। কিছু তো করার নেই। বিশ্রাম নিয়ে ও রিহ্যাব করে চেষ্টা করতে হবে রিদমে ফেরার। এই সিরিজটা বাদ দিলে আশা করি নিউ জিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে টি-টোয়েন্টি খেলতে পারব।”
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট শুরু আগামী ২৮ নভেম্বর, পরেরটি ৬ ডিসেম্বর। এরপর নিউ জিল্যান্ড সফরে ৩টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ। ওয়ানডে দিয়ে সিরিজ শুরু ১৭ ডিসেম্বর।