আফিফ হোসেনের খেলা দারুণ পছন্দ করেন ওয়েইন পার্নেল, তবে বাংলাদেশের এই তরুণের জন্য বিশেষ কিছু পরামর্শও দিলেন খুলনা টাইগার্সের দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার।
Published : 16 Feb 2024, 08:50 PM
ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে চল্লিশ ছোঁয়া ইনিংস। এক ম্যাচ পর আবার ত্রিশ ছাড়ানো ইনিংস। বিপিএলের শুরুটা আশা জাগানিয়া ছিল আফিফ হোসেনের। কিন্তু অন্য ম্যাচগুলোতে পারেননি প্রত্যাশা মেটাতে। সবশেষ দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে তিনি মেলে ধরলেন ঝড়ো ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী। তার সেই পারফরম্যান্সে মুগ্ধ ওয়েইন পার্নেল। তবে আফিফের ধারাবাহিকতার অভাবও নজরে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডারের। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় তরুণ ব্যাটসম্যানের জন্য তাই কিছু পরামর্শও দিলেন তার খুলনা টাইগার্স সতীর্থ।
তুমুল প্রতিভা নিয়ে দেশের ক্রিকেটে আবির্ভাব আফিফের। কিন্তু সম্ভাবনার পুরোটা এখনও বাস্তব রূপ দিতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টিতে এক সময় জাতীয় দলে নিয়মিত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন তিনি। আগামী মাসের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দলেও জায়গা হয়নি তার।
ধারাবাহিকতার ঘাটতির কারণেই তিনি পারেননি দলে থিতু হতে। টি-টোয়েন্টির সঙ্গে মানানসই ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য থাকলেও মাঠে তা নিয়মিত দেখাতে পারেন কম সময়ই। জাতীয় দলের হয়ে সবশেষ ১৮ ইনিংসে চল্লিশ ছুঁতে পারেননি তিনি। চলতি বিপিএলেও খুব একটা ধারাবাহিক নন। দশ ম্যাচে ৩০ পেরিয়েছেন মোটে তিনবার। আরও তিন ম্যাচে ২০ ছুঁয়েও অল্পেই আটকে গেছেন তিনি।
টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচে ৪১ রানের পর দশম ম্যাচে সেটিকে পেরিয়ে ৪৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন আফিফ। ঢাকার বিপক্ষে শুক্রবার ১২৯ রানের লক্ষ্যে স্রেফ ২১ বলে এই রান করেছেন তিনি। আলাউদ্দিন বাবু, মোসাদ্দেক হোসেনের ওপর ঝড় তুলে দুটি চারের সঙ্গে তিনি মেরেছেন চারটি ছক্কা।
ম্যাচ সেরার পুরস্কার অবশ্য আফিফের হাতে ওঠেনি। বোলিংয়ে স্রেফ ১৯ রানে ৩ উইকেট পাওয়া পার্নেল পেয়েছেন এই স্বীকৃতি। তবে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে আফিফের প্রশংসা করতে ভোলেননি পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
"খুব ভালো ইনিংস। আমার মতে, সে (আফিফ) বাংলাদেশের সবচেয়ে তরুণ প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানদের একজন। সে পেস বল খেলতে পারে, স্পিন খেলতে পারে। উইকেটের চারপাশে রান নিতে পারে। খুবই স্মার্ট ক্রিকেটার সে।"
"তার এখন ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের চেষ্টা করতে হবে। তবে হ্যাঁ, ম্যানেজমেন্ট ও সিনিয়র ক্রিকেটারদের তার কাছে এসে আত্মবিশ্বাস জোগাতে হবে। ভালো করার সব ধরনের রসদ আছে তার। এখন সঠিক কাজের জন্য যথাযথ অস্ত্রের ব্যবহার করাটা মূল বিষয়। আজকে সে প্রতিটি শট সঠিকভাবে খেলতে পেরেছে। তার জন্য আমি খুব খুশি।"
কখনও কখনও অতি আগ্রাসন বয়ে আনে বিপদ। আফিফের তাই আগ্রাসী মনোভাব কমিয়ে ধারাবাহিকতার দিকে মন দেওয়া উচিত কিনা, এমন প্রশ্নও রাখা হলো পার্নেলের কাছে। প্রোটিয়া অলরাউন্ডারের অভিমত, সহজাত খেলাটাই খেলতে দেওয়া হোক আফিফকে।
"কাউকে স্বাধীনতা দেওয়া ও তার স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য জরুরি। কারণ সে (আফিফ) একজন স্ট্রোকপ্রিয় ব্যাটসম্যান। তাকে ভিন্নভাবে খেলতে বলার মানে হলো, তার শক্তির জায়গা নিয়ে নেওয়া। সে যত ম্যাচ খেলবে, নিজ থেকেই বুঝতে পারবে (আগ্রাসন কমাতে হবে কি না)।"
"আমি বলব, কখনও কখনও ক্রিকেটারদের জন্য কোচিং খারাপ বিষয়। আপনি সবসময় যে কাউকে সহজাত খেলা খেলতে দেখতে চাইবেন। ২০১৮ সালে সিলেট সিক্সার্সের হয়ে খেলতে এসে তাকে প্রথম দেখেছি আমি। তখনই আমার মনে হয়েছে, এই ছেলেটা বিশেষ। আমি দেখেছি, সে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছে।"
ক্রিকেটীয় বাস্তবতার দিকটি তুলে ধরে সবাইকে আফিফের পাশে থাকার অনুরোধও করলেন পার্নেল।
"উত্থান-পতন থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আমার মনে হয় তার এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটেরও লক্ষ্য হলো, তাকে ধারাবাহিক বানানো। এর জন্য সমর্থন দরকার। সমর্থন পেলে সে আত্মবিশ্বাসী হবে এবং সেখান থেকে তাকে আরও ধারাবাহিক দেখা যাবে।"