প্রথম ইনিংসে ১৯০ রানে পিছিয়ে থেকেও হায়দরাবাদ টেস্টে দুর্দান্ত এক জয় পেল ইংল্যান্ড।
Published : 28 Jan 2024, 05:22 PM
দিনের শেষ ওভারে স্পিনার টম হার্টলিকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় স্টাম্পড হয়ে গেলেন শেষ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ সিরাজ। ছুটে গিয়ে বোলারকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন কিপার বেন ফোকস। এগিয়ে এলেন অন্য সতীর্থরা। একদিন আগেও এমন কিছু কজনে ভেবেছিল! যে দল প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে ছিল ১৯০ রানে, যাদের হারের ছবি আঁকছিল অনেকেই, সেই ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত পেল স্মরণীয় এক জয়।
ব্রিজবেন থেকে হায়দরাবাদ- বিশ্বের দুই প্রান্তে একই দিনে অসাধারণ দুটি টেস্ট ম্যাচের সমাপ্তি দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। ঘরের মাঠে গত এক যুগ ধরে যারা কোনো টেস্ট সিরিজ হারেনি, সেই ভারতকে প্রথম টেস্টে ২৮ রানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড।
ইংলিশদের দুর্দান্ত এই জয়ের দুই নায়ক অলিভার পোপ ও হার্টলি। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে ১৯৬ রানের মাস্টারক্লাস এক ইনিংস খেলেন পোপ। অষ্টম উইকেটে তার সঙ্গে ৮০ রানের জুটির পথে ৩৪ রানের মহামূল্যবান ইনিংস খেলেন হার্টলি। অভিষিক্ত বাঁহাতি এই স্পিনার পরে বল হাতে ৬২ রানে নেন ৭ উইকেট।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টেস্ট অভিষেকে ইংল্যান্ডের কোনো স্পিনারের সেরা বোলিং এটি।
ম্যাচের চতুর্থ দিন রোববার ২৩১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ২০২ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। দেশের মাটিতে সবশেষ ৪৮ টেস্টে তাদের স্রেফ চতুর্থ পরাজয় এটি।
প্রথম ইনিংসে এই ম্যাচের চেয়ে বেশি রানে এগিয়ে থেকে আর কেবল একবারই কোনো টেস্ট হেরেছে ভারত। ২০১৫ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৯২ রানের লিড পেয়েও ৬৩ রানে হেরেছিল তারা।
হায়দরাবাদ ম্যাচের চেয়ে বেশি রানে প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে থেকে ভারতের মাটিতে টেস্ট জয়ের নজির আছে আর মাত্র একটি। ২০০১ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রানে পিছিয়ে থেকেও ১৭১ রানে জিতেছিল ভারত।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো করে ভারত। উদ্বোধনী জুটিতে তুলে ফেলে ৪২ রান। এরপরই ৩ বলের মধ্যে ২ উইকেট নিয়ে স্বাগতিকদের জোড়া ধাক্কা দেন হার্টলি।
বেরিয়ে এসে খেলে শর্ট লেগ ফিল্ডারের হাতে ধরা পড়েন বাঁহাতি ওপেনার ইয়াশাসবি জয়সওয়াল। তিনে নেমে শূন্য রানে ফিরে টেস্টে পড়তি ফর্মের পথচলা দীর্ঘায়িত করেন শুবমান গিল। সিলি পয়েন্টে ভালো ক্যাচ নেন পোপ।
ভালো শুরু করেও ইনিংস টেনে নিতে পারেননি রোহিত শার্মা। ৫৮ বলে ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৯ রান করা ভারত অধিনায়ককে এলবিডব্লিউ করে দেন হার্টলি।
আকসার প্যাটেলকে প্রোমোশন দিয়ে নামানো হয় পাঁচ নম্বরে। তিনি ও লোকেশ রাহুল মিলে চা-বিরতির আগে দলকে নিয়ে যান একশর দুয়ারে। কিন্তু বিরতির পর প্রথম ওভারেই বোলার হার্টলিকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন আকসার।
সেই পথ ধরে দ্রুত আরও তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় ভারত। রাহুলকে এলবিডব্লিউ করে দেন জো রুট। বেন স্টোকসের দুর্দান্ত থ্রোয়ে রান আউটে কাটা পড়েন রবীন্দ্র জাদেজা। জ্যাক লিচের বলে আলগা শটে স্লিপে ধরা পড়েন শ্রেয়াস আইয়ার।
একটা পর্যায়ে ৩ উইকেটে ৯৫ থেকে ভারতের স্কোর তখন ৭ উইকেটে ১১৯!
সেখান থেকে প্রতিরোধ গড়েন কিপার ব্যাটসম্যান শ্রিকর ভারত ও অশ্বিন। দুজনের পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে ভারত শিবিরে জাগে আশাও। তখনই আবার দৃশ্যপটে হাজির হার্টলি। পরপর দুই ওভারে দুই থিতু ব্যাটসম্যানকেই ফিরিয়ে দেন তিনি।
নিচু হওয়া ডেলিভারিতে বোল্ড হন ভারত। আম্পায়াররা দিনের খেলা আধা ঘণ্টা বাড়ানোর পর প্রথম ওভারেই অশ্বিন উইকেট ছুড়ে আসেন বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় স্টাম্পড হয়ে।
দুজনই করেন ২৮ রান করে। তাদের জুটিতে আসে ১৩০ বলে ৫৭ রান।
জাসপ্রিত বুমরাহ ও সিরাজের শেষ জুটিতে আবার ম্যাচে ফেরে উত্তেজনা। দিনের শেষ ওভারে ২৫ রানের জুটি ভেঙে সবকিছুই ইতি টেনে ইংল্যান্ডকে উচ্ছ্বাসে ভাসান হার্টলি।
অথচ ইংল্যান্ড যখন দিনের খেলা শুরু করেছিল, ৪ উইকেট হাতে নিয়ে কেবল ১২৬ রানে এগিয়ে ছিল তারা। এ দিন তারা যোগ করে আরও ১১৬ রান। আগের দিন ১৪৮ রানে অপরাজিত পোপ যোগ করেন ৪৮ রান। কার্যকর দুটি ইনিংস খেলেন রেহান ও হার্টলি। তাতে সফরকারীরা পায় লড়াইয়ের পুঁজি।
পোপ ডাবল সেঞ্চুরির সম্ভবনা জাগিয়ে বুমরাহকে রিভার্স স্কুপ করার চেষ্টায় বোল্ড হন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। খুব কাছে গিয়ে দ্বিশতক না পেলেও দিন শেষে কোনো আক্ষেপ তার থাকার কথা নয়। দল যে পেল দুর্দান্ত জয়। ওই ইনিংসের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন পোপ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৪৬
ভারত ১ম ইনিংস: ৪৩৬
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ১০২.১ ওভারে ৪২০ (আগের দিন ৩১৬/৬) (পোপ ১৯৬, রেহান ২৮, হার্টলি ৩৪, উড ০, লিচ ০*; বুমরাহ ১৬.১-৪-৪১-৪, অশ্বিন ২৯-৪-১২৬-৩, আকসার ১৬-২-৭৪-১, জাদেজা ৩৪-১-১৩১-২, সিরাজ ৭-১-২২-০)
ভারত ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৩১) ৬৯.২ ওভারে ২০২ (রোহিত ৩৯, জয়সওয়াল ১৫, গিল ০, রাহুল ২২, আকসার ১৭, শ্রেয়াস ১৩, জাদেজা ২, ভারত ২৮, অশ্বিন ২৮, বুমরাহ ৬*, সিরাজ ১২; রুট ১৯-৩-৪১-১, উড ৮-১-১৫-০, হার্টলি ২৬.২-৫-৬২-৭, লিচ ১০-১-৩৩-১, রেহান ৬-০-৩৩-০)
ফল: ইংল্যান্ড ২৮ রানে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে ইংল্যান্ড
ম্যান অব দা ম্যাচ: অলিভার পোপ