মিচেল ঝড়ে ভারতকে হারাল নিউ জিল্যান্ড

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সফরকারীরা

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2023, 05:55 PM
Updated : 27 Jan 2023, 05:55 PM

আর্শদিপ সিংয়ের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারলেন ড্যারিল মিচেল। বলটি ‘নো’ হওয়ায় পেলেন ফ্রি-হিট। পরের দুই বলের পরিণতিও অভিন্ন। হ্যাটট্রিক ছক্কার পরের ডেলিভারিও পাঠালেন সীমানায়। তার শেষের এই ঝড়ে নিউ জিল্যান্ড পেল লড়াই করার সংগ্রহ। পরে ভারতের ব্যাটসম্যানদের আটকে রেখে দারুণ এক জয় এনে দিলেন বোলাররা। 

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে রাঁচিতে শুক্রবার ২১ রানে জিতেছে নিউ জিল্যান্ড। তাদের ১৭৭ রানের জবাবে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি ভারত। 

ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পর চলতি সফরে এটিই কিউইদের প্রথম জয়।

টি-টোয়েনিটতে চতুর্থবারের মতো ভারতের মাটিতে দুইশর কম রানের সংগ্রহ নিয়ে ভারতকে হারাল নিউ জিল্যান্ড। বিশ্বের আর কোনো দল ভারতের মাটিতে একবারও যা পারেনি।

সফরকারীদের জয়ের নায়ক ড্যারেল মিচেল। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটিতে স্রেফ ৩০ বলে ৫৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। তার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে শেষ ৪ ওভারে ৫৩ রান পায় নিউ জিল্যান্ড।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন ফিন অ্যালেন। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে প্রথম ৪ ওভারে ৩৭ রান পায় নিউ জিল্যান্ড। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেও ছক্কা মারেন অ্যালেন। 

পরের বলেই তাকে ফেরান ওয়াশিংটন সুন্দর। ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরা অ্যালেন ৪ চার ও ২ ছয়ে ২৩ বলে করেন ৩৫ রান। একই ওভারের শেষ বলে ফিরতি ক্যাচ দেন মার্ক চ্যাপম্যান।

ভালো শুরুর পর দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে নিউ জিল্যান্ড। তৃতীয় উইকেটে ৬০ রানের জুটি গড়েন ডেভন কনওয়ে ও গ্লেন ফিলিপস।

ত্রয়োদশ ওভারে কুলদিপ যাদবের বলে সূর্যকুমার যাদবের হাতে ক্যাচ দেন ফিলিপস। ১৭ রান করতে ২২ বল খেলেন ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।

আরেক প্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন কনওয়ে। তাকে সঙ্গ দিয়ে রয়েসয়ে ব্যাটিং শুরু করেন ড্যারেল মিচেল। ষোড়শ ওভারে ৩১ বল খেলে ফিফটি পূরণ করেন বাঁহাতি ওপেনার। 

আর্শদিপের করা ১৮তম ওভারে ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ বলে ৫২ রান করেন কনওয়ে।

ইনিংসের বাকিটায় দলকে দারুণভাবে এগিয়ে নেন মিচেল। প্রথম ১৫ বলে স্রেফ ১৬ রান করা ডানহাতি ব্যাটসম্যান পরের ১৫ বল থেকে করেন ৪৩ রান। শেষ ওভারের ওই ঝড়ে ২৭ রান তোলেন তিনি।

ভারতের তিন স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর, কুলদিপ ও দিপক হুডা ১০ ওভারে স্রেফ ৫৬ রানে নেন ৩ উইকেট। বিপরীতে পেসাররা ১০ ওভারে খরচ করেন ১১৯ রান।

রান তাড়া করতে নেমে ৪ ওভারের মধ্যে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় ভারত। দ্বিতীয় ওভারে দারুণ টার্নিং ডেলিভারিতে ইশান কিষানকে (৫ বলে ৪) বোল্ড করেন ব্রেসওয়েল। 

পরের ওভারে জ্যাকব ডাফির বলে কট বিহাইন্ড হন রাহুল ত্রিপাঠি। ৬ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। আর মিচেল স্যান্টনারের টার্ন ও বাউন্সে পরাস্ত হন শুবমান গিল। টাইমিংয়ের গড়বড়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওপেনার।

শুরুর ধাক্কা সামলে হার্দিক পান্ডিয়া-সূর্যকুমারের চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৫১ বলে ৬৮ রান। ইশ সোধির দ্বাদশ ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা মেরে পরের বলেই আউট হয়ে যান সূর্যকুমার। ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৩৪ বলে তিনি খেলেন ৪৭ রানের ইনিংস।

পরের ওভারে একই পথে হাঁটেন পান্ডিয়া। ব্রেসওয়েলের হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরা ভারত অধিনায়ক ২০ বলে করেন ২১ রান। 

ষোড়শ ওভারে নিজের কোটার শেষ ওভার করতে এসে ভারতের শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান দিপক হুডাকে ফেরান স্যান্টনার। ১০ বলে ১০ রান করে স্টাম্পড হন হুডা।

এরপর একাই লড়ে যান ওয়াশিংটন। অপর প্রান্তে একের পর এক উইকেট পতনের মাঝে টিকিয়ে রাখেন আশা। তবে তা পরাজয়ের ব্যবধান কমানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি।

স্রেফ ২৫ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করেন ওয়াশিংটন। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ২৮ বলে ৫০ রান করেই শেষের আগের বলে আউট হন তিনি।  

স্পিন বোলিংয়ের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে ৪ ওভারে এক মেডেনসহ স্রেফ ১১ রান খরচায় ২ উইকেট নেন স্যান্টনার। ব্রেসওয়েল ও ফার্গুসনও নেন ২টি করে উইকেট। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৭৬/৬ (অ্যালেন ৩৫, কনওয়ে ৫২, চ্যাপম্যান ০, ফিলিপস ১৭, মিচেল ৫৯*, ব্রেসওয়েল ১, স্যান্টনার ৭, সোধি ০*; পান্ডিয়া ৩-০-৩৩-০, আর্শদিপ ৪-০-৫১-১, ওয়াশিংটন ৪-০-২২-২, হুডা ২-০-১৪-০, উমরান ১-০-১৬-০, কুলদিপ ৪-০-২০-১, মাভি ২-০-১৯-১)

ভারত: ২০ ওভারে ১৫৫/৯ (গিল ৭, কিষান ৪, ত্রিপাঠি ০, সূর্যকুমার ৪৭, পান্ডিয়া ২১, ওয়াশিংটন ৫০, হুডা ১০, মাভি ২, আর্শদিপ ০*, উমরান ৪*; ডাফি ৩-০-২৭-১, ব্রেসওয়েল ৪-০-৩১-২, স্যান্টনার ৪-১-১১-২, ফার্গুসন ৪-১-৩৩-২, সোধি ৩-০-৩০-১, টিকনার ২-০-২৩-০)

ফল: নিউ জিল্যান্ড ২১ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ড্যারিল মিচেল