নিশামের তাণ্ডব ছাপিয়ে হৃদয়-লিটনের ব্যাটে ফাইনালে কুমিল্লা

বিপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ারে রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে পঞ্চমবার ফাইনালে পৌঁছে গেল চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2024, 04:12 PM
Updated : 26 Feb 2024, 04:12 PM

জিমি নিশামের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে বড় পুঁজি গড়ল রংপুর রাইডার্স। পরে বোলিংয়ে তারা প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপে আঘাত হানল শুরুতেই। তবে এরপর আর আনন্দের তেমন উপলক্ষ পেল না তারা। লিটন কুমার দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের চমৎকার ব্যাটিংয়ে অনায়াসেই জিতল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে কুমিল্লার জয় ৬ উইকেটে। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৮৬ রানের লক্ষ্য ৯ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে চারবারের চ্যাম্পিয়নরা।

৪৯ বলে ৯৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে রংপুরকে বড় পুঁজি এনে দেন নিশাম। কিন্তু বোলাররা পারেননি প্রতিপক্ষকে আটকাতে।

প্রথম বলে উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে ১৪৩ রানের জুটি গড়েন লিটন ও হৃদয়। কুমিল্লার পাল্টা আক্রমণের সূচনা যার হাত ধরে, সেই হৃদয় আউট হন ৪৩ বলে ৬৪ রান করে। দলকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে ৫৭ বলে ৮৩ রান করে ফেরেন লিটন।তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

বিপিএলে এ নিয়ে পাঁচবার ফাইনালে উঠল কুমিল্লা। আগের প্রতিটি ফাইনালেই ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছে বিপিএলের সফলতম ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। 


হারলেও অবশ্য ফাইনালে ওঠার সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি রংপুরের। একই মাঠে বুধবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে খেলবে তারা। 

রান তাড়ায় নেমে প্রথম বলেই ফিরে যান সুনিল নারাইন। ফাজালহাক ফারুকির শর্ট বলে পুল করার চেষ্টায় টাইমিংয়ে গড়বড় হয়, সামনে ঝাঁপিয়ে অসাধারণ ক্যাচ নেন নুরুল হাসান সোহান।

সেখান থেকে শুরুতে কিছুটা সময় নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন লিটন ও হৃদয়।

পঞ্চম ওভারে হাসান মাহমুদের বলে গা ঝারা দেন হৃদয়; লং অন দিয়ে ছক্কায় ওভার শুরুর পর মারেন দুটি চার। এক বল পর আরও দুটি বাউন্ডারি মেরে ওভার শেষ করেন তিনি। এই ওভারেই চলতি আসরে চারশ রান পূর্ণ হয় হৃদয়ের। গত বিপিএলেও চারশর বেশি রান করেন ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।

এরপর লিটন তেতে ওঠেন; পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে নিশামের বলে দুটি চারের পর ছক্কা মারেন তিনি। মোহাম্মদ নাবিকে ছক্কায় ওড়ান হৃদয়। পরের ওভারে আবু হায়দারের শর্ট বলে লং লেগ দিয়ে তিনি মারেন দেখার মতো ছক্কা। 

৩১ বলে আসরে তৃতীয় পঞ্চাশ পূর্ণ করেন হৃদয়। নিশামকে এক ওভারে তিন চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন লিটন। কুমিল্লা অধিনায়কের ফিফটি ছুঁতে লাগে ৩৮ বল। 

মনে হচ্ছিল, এই দুজনের ব্যাটেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে কুমিল্লা। যদিও তা হয়নি। আবু হায়দারের বলে টাইমিংয়ে গড়বড় করে বল আকাশে তোলেন হৃদয়, লং অফে ক্যাচ নেন সাকিব আল হাসান। শেষ হয় হৃদয়ের ৫ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংস।

বাকি কাজ সারতে অবশ্য সমস্যা হয়নি লিটনের। ১৮তম ওভারে শেখ মেহেদি হাসানের বলে দুটি চার মারেন তিনি। পঞ্চম বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ধরা পড়েন লং অনে। ৯ চারের সঙ্গে ৪ ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান কুমিল্লা অধিনায়ক।

পরের ওভারে ফারুকির বলে ছক্কা মেরে কুমিল্লার জয় নিশ্চিত করেন মইন আলি।

ম্যাচের প্রথমভাগে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে অভিষিক্ত পেসার রোহানাত দৌল্লাহর হাতে বল তুলে দেন লিটন। প্রথম দুই বলে চার মেরে তরুণ বোলারকে স্বাগত জানান রনি তালুকদার।

তবে এই মাসেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসা রোহানাত পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেননি, নিজের দ্বিতীয় ওভারে শর্ট ডেলিভারিতে রনিকে কট বিহাইন্ড করেন তিনি।

তার আগের ওভারে খালি হাতে ড্রেসিং রুমে ফেরেন শামীম হোসেন। তানভির ইসলামের বলে সজোরে হাঁকান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ফলো-থ্রুতে হাত এগিয়ে দেন তানভির, তার হাতে লেগে বল যায় মিড-অফের দিকে। সামনে লাফিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন আন্দ্রে রাসেল। পঞ্চম ওভারে সাকিব আল হাসানও ফিরে গেলে বিপদ বাড়ে রংপুরের।

পাওয়ার প্লের শেষ বলে ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন মেহেদি। পরের ওভারে মুশফিক হাসানের বল ছক্কায় ওড়ান নিশাম আর শেষ বলে মেহেদির চারে পঞ্চাশ পূর্ণ হয় রংপুরের। 

নবম ওভারে আক্রমণে এসে মেহেদিকে ফেরান নারাইন। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি নিকোলাস পুরানও। মুশফিকের বলে একটি করে চার-ছক্কা মেরে লং অনে ক্যাচ দেন ক্যারিবিয়ান তারকা।

৩১ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করে এগিয়ে যান নিশাম। তবে অন্যপ্রান্তে আর কেউ প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি।

ক্রিজে গিয়ে শুরুতে বেশ ভুগতে দেখা যায় সোহানকে। প্রথম ১৩ বলে তার ছিল স্রেফ ৪। রাসেলের বলে দুটি চারের পর ছক্কা মেরে কিছুটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন রংপুর অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত যদিও খুব বিশেষ কিছু করতে পারেননি; ১৯তম ওভারে ফেরার আগে ২৪ বলে ৩০ রান করেন তিনি।

শেষ ওভারে মুশফিকের ওপর ঝড় বইয়ে দেন নিশাম। প্রথম বলে লো ফুল টসে ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে পান বাউন্ডারি। পরে কোমর উচ্চতার নো বলে মারেন আরেকটি চার। ফ্রি হিট বল তিনি ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ওড়ান ছক্কা।

পরে আরও দুই ছক্কায় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান নিশাম। তবে শেষ বলে আর পারেননি কাঙ্ক্ষিত বাউন্ডারি হাঁকাতে। সেঞ্চুরি ছুঁতে না পারার সেই আক্ষেপের সঙ্গে পরে যোগ হয় ম্যাচ হারের হতাশাও।

শেষ ওভারের তাণ্ডবে সব মিলিয়ে ৪ ওভারে ৭২ রান খরচ করেন মুশফিক, বিপিএলের ইতিহাসে যা কোনো বোলারের সবচেয়ে বেশি রান খরচের রেকর্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৮৫/৬ (রনি ১৩, শামীম ০, সাকিব ৫, মেহেদি ২২, নিশাম ৯৭*, পুরান ১৪, সোহান ৩০, নাবি ০*; রোহানাত ৩-০-২১-১, তানভির ৪-০-৩০-১, রাসেল ৪-০-৩৭-২, মুশফিক ৪-০-৭২-১, নারাইন ৪-০-১১-১, মইন ১-০-১২-০)

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৮.৩ ওভারে ১৮৬/৪ (নারাইন ০, লিটন ৮৩, হৃদয় ৬৪, চার্লস ১০, মইন ১২*, রাসেল ২*; ফারুকি ৩.৩-০-২৭-২, সাকিব ৪-০-২১-০, হাসান ২-০-৩২-০, নিশাম ৩-০-৩৭-০, নাবি ২-০-২১-০, আবু হায়দার ২-০-২০-১, মেহেদি ২-০-১৯-১)

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: লিটন কুমার দাস