নিজেদের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রানে জয়ের রেকর্ড গড়েছে ভারত।
Published : 18 Feb 2024, 04:30 PM
পিঠে অস্বস্তি নিয়ে আগের দিন অবসরে যাওয়া সেঞ্চুরিয়ান ইয়াশাসবি জয়সওয়াল ফের ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসটাকে বড় করলেন আরও। ছক্কার রেকর্ড গড়ে উপহার দিলেন আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরি। সঙ্গে বাকিদের অবদানে প্রতিপক্ষকে সাড়ে পাঁচশ ছাড়ানো লক্ষ্য দিল ভারত। পাহাড় টপকানোর চ্যালেঞ্জে মুখ থুবড়ে পড়ল ইংল্যান্ড, স্বাগতিকদের বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারল না তারা।
রাজকোট টেস্টের চতুর্থ দিন ৪৩৪ রানে জিতেছে ভারত; দেশটির টেস্ট ইতিহাসে যা সবচেয়ে বেশি রানে জয়ের রেকর্ড। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২১ সালে ৩৭২ রানের জয় ছিল তাদের আগের রেকর্ড।
রানের হিসাবে ইংল্যান্ড এর চেয়ে বড় ব্যবধানে টেস্ট হেরেছে আর কেবল একটিই। সেই ১৯৩৪ সালে ওভালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫৬২ রানে।
ম্যাচজুড়েই দাপট দেখায় ভারত। প্রথম ইনিংসে ৪৪৫ রান করে ইংলিশদের তারা থামিয়ে দেয় ৩১৯ রানে। আর রোববার ৪ উইকেটে ৪৩০ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারীদের তারা ছুড়ে দেয় ৫৫৭ রানের লক্ষ্য। রানপাহাড়ে চাপা পড়ে ১২২ রানে গুটিয়ে যায় বেন স্টোকসের দল।
প্রথম ম্যাচ হারের পর টানা দুই জয়ে পাঁচ টেস্টের সিরিজে ভারত এখন ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে।
ব্যাটে-বলে অবদান রেখে ভারতের এই জয়ের নায়কদের একজন রবীন্দ্র জাদেজা। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করার পর বল হাতেও ছাড়ান আলো। রান তাড়ায় নামা ইংলিশদের প্রায় একাই গুঁড়িয়ে দেন তিনি, বাঁহাতি স্পিনে ৪১ রানে নেন ৫ উইকেট। ১১২ রানের পর মোট ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা এই অলরাউন্ডার।
পরপর দুই ম্যাচে দ্বিশতক করে দিনের প্রথমভাগে আলো কেড়ে নেন জয়সওয়াল। ১২ ছক্কা ও ১৪ চারে ২৩৬ বলে ২১৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। টেস্টের এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডে বসেন পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরামের পাশে। ১৯৯৬ সালের অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৫৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে ১২টি ছক্কা মেরেছিলেন আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা আকরাম।
শুধু জয়সওয়াল নয়, ছক্কার রেকর্ড গড়েছে ভারতও। কেবল তৃতীয় ম্যাচ শেষ হয়েছে, তাতেই এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি ৪৮ ছক্কা মেরেছে দলটি। এই ম্যাচে ২৮ ছক্কা হাঁকিয়ে গড়েছে এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডও। দুই তালিকায়ই তারা ছাড়িয়ে গেছে নিজেদের।
২ উইকেটে ১৯৬ রান নিয়ে দিন শুরু করা ভারতের রান বাড়তে থাকে শুবমান গিল ও কুলদিপ ইয়াদাভের জুটিতে। ৬৫ রান নিয়ে খেলতে নামা গিল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে রান আউট হন ২ ছক্কা ও ৯ চারে ৯১ রান করে, ভাঙে ৫৫ রানের যুগল। কয়েক ওভার পর বিদায় নেন কুলদিপও।
গিল আউট হলে ক্রিজে যান আগের দিন ১০৪ রান করা জয়সওয়াল। বিরতি নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামলেও তার মনোযোগে একটুও ধরেনি চিড়। সহজাত ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান, দেড়শ স্পর্শ করেন ১৯২ বলে। ডাবল সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি ২৩১ বলে। কিছুক্ষণ পরই ইনিংস ঘোষণা করে দেন রোহিত।
দেড়শ থেকে দ্বিশতক ছোঁয়ার পথে জেমস অ্যান্ডারসনকে টানা তিনটি ছক্কা মারেন জয়সওয়াল। ১৮৫ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয়নি টেস্ট ইতিহাসের সফলতম পেসার অ্যান্ডারসনের।
ভিনোদ কাম্বলি ও ভিরাট কোহলির পর তৃতীয় ভারতীয় হিসেবে টানা দুই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন জয়সওয়াল। সবচেয়ে কম বয়সে একাধিক দ্বিশতক করাদের তালিকায় কাম্বলি ও স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পরেই তিনি।
জয়সওয়ালের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ১৭২ রানের জুটিতে ৭২ বলে ৬৮ রান করেন সারফারাজ খান। অনেক আলোচনার জন্ম দিয়ে টেস্ট দলে জায়গা করে নেওয়া এই ব্যাটসম্যান অভিষেক ম্যাচে দুই ইনিংসেই করলেন ফিফটি।
রান তাড়ায় কোনো ধরনের লড়াই-ই করতে পারেনি ইংল্যান্ড। নিয়মিত বিরতিতে হারায় তারা উইকেট। তাদের ইনিংসে কোনো জুটি ছুঁতে পারেনি ৩৫ রানও।
প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান বেন ডাকেটের রান আউট দিয়ে ইংল্যান্ডের পথ হারানোর শুরু। এক ওভার পর জ্যাক ক্রলিকে এলবিডব্লিউ করে দেন জাসপ্রিত বুমরাহ। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ব্যাটসম্যান।
২ উইকেটে ১৮ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় ইংল্যান্ড। এরপর ফিরেই স্লিপে রোহিতের দারুণ ক্যাচে বিদায় নেন অলি পোপ। জাদেজাকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন জনি বেয়ারস্টো।
ইংল্যান্ড দলের সেরা ব্যাটসম্যান জো রুট ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারেননি এই ইনিংসেও। তিনি জাদেজার শিকার হওয়ার পরের ওভারেই কুলদিপ ইয়াদাভ ফিরিয়ে দেন বেন স্টোকসকে। দুজনই সুইপ করতে গিয়ে হন এলবিডব্লিউ। চলতি সিরিজে ৬ ইনিংস ব্যাটিং করে রুটের রান স্রেফ ৬৭!
ইংল্যান্ডের সামান্য আশাটুকু শেষ তখনই। এরপর আর বেশিদূর এগোয়নি তাদের ইনিংস। মার্ক উডের ৩৩ ছাড়া ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যান করতে পারেননি ২০ রানও। এই উডকে ফিরিয়েই টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৬তম পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন জাদেজা।
মায়ের অসুস্থতায় এই ম্যাচের মাঝপথে চলে যাওয়া রবিচন্দ্রন অশ্বিন মাঠে নামেন চতুর্থ দিন। খালি হাতে ফেরেননি তিনিও, বোল্ড করেন টম হার্টলিকে।
সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে রাঁচিতে, শুরু আগামী শুক্রবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ৪৪৫
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩১৯
ভারত ২য় ইনিংস: (আগের দিন ১৯৬/২) ৯৮ ওভারে ৪৩০/৪ ডিক্লেয়ার (জয়সওয়াল ২১৪*, গিল ৯১, কুলদিপ ২৭, সারফারাজ ৬৮*; অ্যান্ডারসন ১৩-১-৭৮-০, রুট ২৭-৩-১১১-১, হার্টলি ২৩-২-৭৮-১, উড ১০-০-৪৬-০, রেহান ২৫-১-১০৮-১)
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৫৫৭) ৩৯.৪ ওভারে ১২২ (ক্রলি ১১, ডাকেট ৪, পোপ ৩, রুট ৭, বেয়ারস্টো ৪, স্টোকস ১৫, ফোকস ১৬, রেহান ০, হার্টলি ১৬, উড ৩৩, অ্যান্ডারসন ১*; বুমরাহ ৮-১-১৮-১, সিরাজ ৫-২-১৬-০, জাদেজা ১২.৪-৪-৪১-৫, কুলদিপ ৮-২-১৯-২, অশ্বিন ৬-৩-১৯-১)
ফল: ভারত ৪৩৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রবীন্দ্র জাদেজা
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত।