ঘুম থেকে উঠে টিম বাস ধরতে না পারার ঘটনায় নিজের অবস্থান জানালেন বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক, যদিও তার দাবির সঙ্গে মিল নেই সাকিব আল হাসানের বক্তব্যের।
Published : 03 Jul 2024, 02:55 PM
সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠে টিম বাস ধরতে না পারার ব্যাপারটি স্বীকার করেছেন তাসকিন আহমেদ। তবে তার দাবি, এই ম্যাচের একাদশে তার এমনিতেই থাকার কথা ছিল না। সংবাদমাধ্যম গুজব ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ অভিজ্ঞ এই পেসারের। যদিও তার ব্যাখ্যার সঙ্গে সাকিব আল হাসানের বক্তব্যের ফাঁক রয়ে গেল ভালোভাবেই।
তাসকিনের ঘুম-কাণ্ড নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যেই বুধবার দুপুরে নিজের অফিসিয়াল ফেইসবুক পাতায় বাংলা ও ইংরেজিতে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন তিনি। যদিও তার দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার ব্যাপারটি স্বীকার করার আলাদা কোনো গুরুত্ব ছিল না। মঙ্গলবার বিকেলে সাকিব আল হাসান ও সন্ধ্যায় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান এটি নিশ্চিত করেই দেন।
ফেইসবুক বার্তায় তাসকিনের দাবি, যেসব খবর ছড়িয়েছে, সেসবের বেশির ভাগই সত্য নয়।
“আমি সম্প্রতি অনলাইনে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে সম্প্রতি শেষ হওয়া টি-২০ বিশ্বকাপের একটি ঘটনা নিয়ে অনেক হৈচৈ করা হচ্ছে। প্রথমত, আমি সবাইকে জানাতে চাই যে বেশিরভাগ সংবাদ এবং তথ্য যা ছড়ানো হচ্ছে তা কেবল গুজব এবং আমি আশা করি ভক্তরা এটি সেইভাবে দেখবেন। দ্বিতীয়ত, আমি ঘটনাটি সেদিন আসলে কী ঘটেছিল, তা পরিষ্কার করতে চাই।”
“আমি স্বীকার করি যে আমি স্বাভাবিকের চেয়ে পরে উঠেছি এবং এর জন্য আমি ইতিমধ্যে পুরো দল এবং ম্যানেজমেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।”
তাসকিন এরপর সময় ধরে ধরে মাঠে হাজির হওয়ার ব্যাপার ব্যাখ্যা করেন।
“আমি সকাল ৮:৩৭ এ উঠেছিলাম এবং ৮:৪৩ এ লবিতে গিয়েছিলাম এবং আমার রাইড প্রস্তুত হওয়ার সাথে সাথে আমি সকাল ৯:০০ এ হোটেল ছেড়েছি। আমি সকাল ৯:৪০-এ স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছি, টসের ২০ মিনিট আগে সকাল ১০:০০ এ। আমরা সকাল ১০:১৫-এ জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছিলাম এবং ম্যাচটি সকাল ১০:৩০ এ শুরু হয়েছিল।”
“এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, এই তথাকথিত ক্রীড়া সাংবাদিকরা গুজবের ভিত্তিতে খবর প্রচার/মুদ্রণ করছে এবং যাচাই না করে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে যা জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন খেলোয়াড় হিসাবে।”
ঘুমের কারণে তাসকিনের টিম বাস ধরতে না পারার খবরটি প্রথম আলোয় আনে ৭১ টিভি এবং তাদের সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেরিতে মাঠে আসার কারণেই সেদিন একাদশে রাখা হয়নি দলের সহ-অধিনায়ককে। তবে তিনি নিজে এই খবর উড়িয়ে দিলেন।
“যারা আমাকে চেনেন, তারা জানেন আমি আমাদের দেশকে কতটা ভালোবাসি এবং বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কতটা নিবেদিত, উৎসাহী এবং গর্বিত। আমি জানি. আমি সময়মতো টিমের বাসে না ওঠার একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল করেছি, কিন্তু আমি টসের আগেই স্টেডিয়ামে ছিলাম। আমার চূড়ান্ত দলে নির্বাচিত না হওয়াটা টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত ছিল। যা সঠিক টিম কম্বিনেশন পাওয়ার সাথে সম্পর্কিত এবং এটি আমার টিম বাসে না ওঠার ব্যর্থতার সাথে সম্পর্কিত ছিল না।”
মাঠে আসার সময় এবং একাদশ নিয়ে তাসকিনের এমন দাবির সঙ্গে সাকিব আল হাসানের বক্তব্যের একটু ফাঁক আছে। মেজর লিগ ক্রিকেটে খেলতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে মঙ্গলবার বিকেলে বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাকিব বলেছিলেন, তাসকিন মাঠে আসেন ‘যখন তাসকিন আসলে মাঠে পৌঁছেছিল, টস হওয়ার ৫-১০ মিনিট আগে সম্ভবত। (ম্যাচ শুরুর) খুবই কাছাকাছি সময়ে আসলে। স্বাভাবিকভাবে ওই সময়ে ওকে দলে নেওয়া টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য কঠিন ছিল। এরকম পরিস্থিতিতে একজন ক্রিকেটার কোন অবস্থায় থাকে, তার জন্যও একটু কঠিন।"
সাকিবের কথায় পরিষ্কার ছিল, দেরিতে মাঠে যাওয়ার কারণেই তাসকিনকে একাদশে বিবেচনা করা হয়নি।
তাসকিন যদিও দায় দিচ্ছে সংবাদমাধ্যমকে। ভবিষ্যতে এরকম করলে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন তিনি।
“আমি আশা করি মিডিয়া এবং ক্রীড়া সাংবাদিকরা মিথ্যা গল্প লেখার আগে আরও সতর্কতা অবলম্বন করবেন এবং একটি বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করবেন না। এটি কেবল আমাদের খেলোয়াড়দের ক্ষতি করে না, বরং আমাদের দেশের সামগ্রিক চিত্রকে ক্ষুণ্ন করে। আমি বিশ্বাস করি আমরা সবাই সৎ এবং পেশাদার সাংবাদিকতা আশা করি যাতে জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে পারি।”
“ভবিষ্যতে, আমি আইনীভাবে এই ধরনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব, যাতে কেউ আমার ক্রীড়াবিদ বা মানুষ হিসাবে আমার সুনাম বা অখণ্ডতা ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা না করে। আমার সকল ভক্তদের ধন্যবাদ তাদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য।”