অ্যাডিলেইড ওভালের পূর্ব গেটের সামনে বিরাট কোহলির পোস্টার নিয়ে ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ বলে চিৎকার করছিলেন কিছু ভারতীয় সমর্থক। সেখানেই হুট করে একজন ঢুকে পড়ে গর্জন করতে থাকলেন ‘বাংলাদেশ...বাংলাদেশ’ চিৎকারে। গায়ে তার বাংলাদেশের জার্সি। তার একার কণ্ঠে ছাপিয়ে যাচ্ছিল যেন সবাইকে।
আসল চমকটা পাওয়া গেল তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে। কণ্ঠে বাংলাদেশ, গায়ে বাংলাদেশের জার্সি। কিন্তু তিনি আসলে ভারতীয়!
নাম তার শারাব। বাড়ি পাঞ্জাবে। থাকেন অ্যাডিলেইডে। তার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই সেখানে ছুটে এলেন তার মতো আরেকজন। তার গায়েও বাংলাদেশের জার্সি। নাম গোপি। দুজনই একসঙ্গে গলা ফাটিয়ে বললেন, “আমরা আজকে বাংলাদেশের সমর্থক…।”
২০ জনের মতো বেশ বড় একটি গ্রুপে এসেছেন তারা। সবাই বন্ধু। শারাব জানালেন, তাদের এই ভারতীয় গ্রুপে মোট তিনজন আজ বাংলাদেশের সমর্থক। বাংলাদেশের জার্সি খুঁজে বের করে কিনে গায়ে চাপিয়ে এসেছেন তারা। বন্ধুদের সঙ্গে এটা নিয়ে প্রচুর খুনসুটি ও মজা চলছে তাদের।
ক্রিকেট ম্যাচে অ্যাডিলেইড ওভালের দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৫৪ হাজারের মতো। রুলস ফুটবল ম্যাচে আরেকটু বেশি থাকে। ক্রিকেট ম্যাচে সাইটস্ক্রিন ও অন্যান্য কারণে কিছু অংশ ফাঁকা রাখতে হয়। সেই গ্যালারিতে ভারতীয় সমর্থকদের দাপট নিঃসন্দেহে। ক্রিকেট বিশ্বের যে কোনো প্রান্তেই ভারতের ম্যাচে এটা নিয়মিত চিত্র। কিন্তু ভারতীয় হয়ে মাঠে বসে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে বাংলাদেশকে সমর্থন করার নজির ইতিহাসে বিরল নিশ্চিতভাবেই।
প্রচণ্ড কৌতূহল নিয়ে শারাবের কাছে কারণ জিজ্ঞেস করে কোনো লাভ হলো না। বন্ধুদের ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ স্লোগানের জবাব একাই দিয়ে যাচ্ছেন তিনি সমানে বাংলাদেশের নামে আওয়াজ তুলে। কারণটা শেষ পর্যন্ত জানা গেল গোপির কাছ থেকে।
“দেখুন, আমরা খেলা দেখতে এসেছি মজা করতে এসেছি। আমাদের কাছে ক্রিকেট আগে, খেলাটার স্পিরিট আগে। আমরা এসেছি উপভোগ করতে। অবশ্যই ভারতকেও ভালোবাসি, সমর্থন করি। কিন্তু আমাদের যখন খেলা দেখার পরিকল্পনা হচ্ছিল, তখনই মনে হলো যে, বাংলাদেশের সমর্থক তো কম থাকবে। আমরা বাংলাদেশকে সমর্থন করব।”
এক পর্যায়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশের সমর্থকদের সঙ্গেও উল্লাসে ভাসতে দেখা গেল তাদেরকে।
পরে শারাবের কাছ থেকেও জানা গেল বাংলাদেশকে সমর্থন করার পেছনের ভাবনা।
“এই যে বাংলাদেশের জার্সি পরে এসেছি, বন্ধুদের কাছ থেকে প্রচুর খোঁচা পেতে হচ্ছে। আমি তাতে দমে যাচ্ছি না। একাই ওদের সঙ্গে লড়াই চালিয় যাব। গ্যালারিতে গিয়েও খ্যাপাটে সমর্থন দেব বাংলাদেশকে। অবশ্যই আমার দেশকে ভালোবাসি। তবে ক্রিকেট আমার কাছে স্রেফ খেলা। বিনোদন নিতে এসেছি, আমার মতো করেই পেতে চাই। আমার যেদিন যে দলকে ইচ্ছা, সমর্থন দেব। আজকে আমার দল বাংলাদেশ।”
‘ক্রিকেট স্রেফ একটি খেলা’, এমন উপলব্ধি এই জমানায় উপমহাদেশে বিরল। ক্রিকেট এখানে খেলার সীমানা ছাড়িয়ে দেশপ্রেম, দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে যায় প্রায়ই। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে তো সেই আবেগের প্রকাশ থাকে আরও তীব্র। সেখানে শারাব-গোবিদের উপস্থিতি যেন এক চিলতে ফুরফুরে হাওয়া।