ভারত ম্যাচের সুবাস নিয়ে পাকিস্তানকে হারানোর বিশ্বাস

ভারতের কাছে হারলেও জয়ের কাছাকাছি যেতে পারার বিশ্বাস পাকিস্তানকে হারাতে কাজে লাগবে বলে বিশ্বাস শ্রীধরন শ্রীরামের।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিঅ্যাডিলেইড থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2022, 09:46 AM
Updated : 5 Nov 2022, 09:46 AM

কারেন রোল্টন ওভালে আরও একটি দিন অনুশীলন। হয়তো এবারের বিশ্বকাপে শেষবার! শনিবার অ্যাডিলেইডের অপরূপ এই মাঠে অনুশীলন বাংলাদেশ দলের, ভারতীয় দল তখন অনুশীলন করছে মেলবোর্নে। এই দুই দলের লড়াইয়ের পর পেরিয়ে গেছে তিন দিন। তাদের এখন গন্তব্য ভিন্ন, প্রতিপক্ষ ভিন্ন, বাস্তবতা ভিন্ন। তবু যেন রয়ে গেছে রেশ। সামনে তাকিয়েও বাংলাদেশের জন্য প্রেরণা পেছনের ওই ম্যাচ! 

যদিও গত বুধবার সেই ম্যাচে ভারতের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে। বিতর্কের আগুনও ছড়িয়েছে বেশ। যে উত্তাপের আঁচ কিছুটা টের পাওয়া যাচ্ছে এখনও। কিন্তু স্রেফ পরাজয়ের হতাশা আর বিতর্ক ও প্রশ্নের ঝাঁজই নয়, ওই ম্যাচ হয়ে উঠছে বাংলাদেশের জন্য সামনে এগিয়ে চলার পাথেয়। যে প্রেরণা আর প্রাণশক্তির হাত ধরে পাকিস্তানকে হারানোর আশায় বুক বাঁধছেন টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম। 

মঞ্চ সেই একই। ভারতের বিপক্ষে শেষ বলের লড়াইয়ে যেখানে হেরেছে বাংলাদেশ, সেই অ্যাডিলেইড ওভালেই প্রতিপক্ষ এবার পাকিস্তান। রোববার ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায়। 

এমনিতে বিশ্বকাপের উত্তেজনা এখন সেমি-ফাইনাল লাইন-আপকে ঘিরে। কারও উল্লাসের উপলক্ষ আসছে, তো কারও হৃদয় ভাঙার গল্প রচিত হচ্ছে। শঙ্কা-সম্ভাবনার এই সমীকরণে গাণিতিকভাবে এখনও টিকে আছে বাংলাদেশও। 

বাস্তবতার নিরিখে অবশ্য সেই সম্ভাবনা খুবই সামান্য। যাবতীয় ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তা মাথায় রেখেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেবে নেদারল্যান্ডস, এই আশা করা কঠিন। বাংলাদেশ দলের দলের আশা তাই নিজেদের ঘিরেই। পাকিস্তানকে হারিয়ে যদি শেষটা ভালো করা যায়। 

শনিবার বাংলাদেশের ছিল ঐচ্ছিক অনুশীলন। ব্যাট-বলের তুকতাক করেন কেবল নুরুল হাসান সোহান, ইয়াসির আলি চৌধুরি, মেহেদী হাসান মিরাজ ও সৌম্য সরকার। বিশ্বকাপজুড়েই ম্যাচের আগের দিন পুরোদমে অনুশীলন করছে না দল। শেষ ম্যাচের আগেও সেই পরিকল্পনার ব্যতিক্রম হয়নি। এমনকি অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনও পুরোপুরি হলো অনলাইনেই। সেখানে প্রথম প্রশ্নই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ফেক ফিল্ডিং বিতর্ক নিয়ে। 

৫ রানে হেরে যাওয়া সেই ম্যাচে ৫ রানের সম্ভাব্য পেনাল্টি থেকে বাংলাদেশের বঞ্চিত হওয়া নিয়ে তোলপাড় হয়েছে যথেষ্টই। সেই ঢেউ এখনও থামেনি। ঘটনার পরপরই শ্রীরাম আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে যে কথা শোনা গিয়েছিল, তা এ দিন নিশ্চিত করলেন তিনি। 

“আমরা এখানে কোনো অজুহাত দিতে আসিনি। এটা যখনই হয়েছে, তখনই আমি ফোর্থ আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের বলা হয়েছে, এটা মাঠের আম্পায়ারদের ব্যাপার। তবে আমরা কোনো অজুহাত দিতে চাই না।” 

অজুহাত বাদ দিলে আপাতদৃষ্টিতে এই ম্যাচ থেকে আক্ষেপটুকুই সবচেয়ে প্রকাশ্য হয়। আরও একবার খুব কাছে গিয়েও জয়ের সীমানা ছুঁতে না পারার আফসোস। সুযোগ পেয়েও সেমি-ফাইনালের পথে এগিয়ে যেতে না পারার হতাশা। সম্ভাব্য স্মরণীয় জয়ের হাতছানি নিজেদের ব্যর্থতায় মিলিয়ে যাওয়ার বিষাদ। 

তবে যে আলোর উৎসের কারণে আঁধারকে বেশি নিকষ লাগছে, সেই আলো থেকেই নতুন আশার ঝলকানি দেখতে পাচ্ছেন শ্রীরাম। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের সময় তাকে বেশ উত্তেজিত দেখা গেছে মোসাদ্দেক হোসেনের শট নির্বাচন নিয়ে। লিটন কুমার দাসের দুর্দান্ত শুরুর পর যেভাবে ভেঙে পড়েছে ব্যাটিং অর্ডার, তাতে অন্যদের ওপরও খুব খুশি থাকার কথা নয় টেকনিক্যাল কনসালটেন্টের। তবে ম্যাচ শেষে তিনিই নুইয়ে পড়া দলকে উজ্জীবিত করেছেন তিনিই। 

দলকে তিনি পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন লড়াইয়ের জন্য। এই ম্যাচের অভিজ্ঞতাকে মনে করছেন দলের পোক্ত হওয়ার পথে পড় শিক্ষা। আর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির নিক্তিতে শেষ পর্যন্ত তিনি পেয়েছেন প্রবল বিশ্বাসের উপকরণ। 

“খেলা শুরু হওয়ার আগে যদি কেউ বলত যে আমরা ভারতের কাছে ৫ রানে হারব, তাহলে যে কেউ হয়তো তা লুফে নিত। আমরা নিজেদের এমন একটি জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলাম যে ভারতকে হারাতে পারতাম। যদিও শেষ পর্যন্ত আমরা পারিনি। তবে এতটা কাছাকাছি যেতে পেরে ছেলেরা অনেক আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে।” 

“দিনশেষে হার তো মাত্র ৫ রানের… শেষটুকু ঠিকঠাক করত না পেরে ড্রেসিং রুমে সবাই হতাশ ছিল অবশ্যই এবং তারা উপলব্ধি করেছে, কতটা সুবর্ণ সুযোগ তারা হাতছাড়া করেছে। তবে দলের জন্য দারুণ শিক্ষণীয় এটি এবং দলকে প্রচুর আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে যে, ভারতের মতো একটি দলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যদি এত কাছাকাছি যাওয়া যায়, তাহলে আমরা খুব বেশি দূরে নেই।” 

শ্রীরামের দাবি কতটা সত্যি, কিছুটা প্রমাণ মিলতে পারে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে। শক্তি-সামর্থ্যে পাকিস্তান এগিয়ে অনেকটা। সবশেষ ম্যাচে তারা হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে। বাংলাদেশের সঙ্গে সাম্প্রতিক কিংবা সার্বিক, সব রেকর্ডেই তারা যোজন যোজন এগিয়ে। দুই দলের ১৭ ম্যাচে পাকিস্তানের জয় ১৫টি। বাংলাদেশের দুটি জয় সেই ২০১৫ ও ২০১৬ সালে। 

শ্রীরাম তবু আশার তরী বেয়ে চলেছেন। বিশ্বকাপের আগে নিউ জিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ তাকে জোগচ্ছে সাহস। 

“অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করি যে পাকিস্তানকে হারাতে পারি। তবে সেমি-ফাইনালে খেলতে পারা আমাদের হাতে নেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে।” 

“পাকিস্তান খুব ভালো দল। নিউ জিল্যান্ডে ওদের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই আমাদের খুব ভালো সম্ভাবনা ছিল। আমরা তাদের শক্তির জায়গা জানি, তারাও আমাদের শক্তির জায়গা সম্পর্কে জানে। দারুণ একটি লড়াই তাই হবে।” 

সেই লড়াইয়ে যদি জিততে পারে বাংলাদেশ, সেমি-ফাইনাল খেলতে না পারলেও বিশ্বকাপ অভিযান তখন পুরোপুরি সফল বলেই ধরে নেওয়া যাবে। শেষ ভালোর রেশ আর মুখে হাসি নিয়ে দেশের উড়ানে চেপে বসা যাবে। কাগজে-কলমে সফলতম বিশ্বকাপকে সংশয়ের উর্ধ্বে তুলে নেওয়াও যাবে। হাতছানি আছে তাই এখনও অনেক কিছুর!