‘বিগ থ্রি’ থেকে ‘বিগ ওয়ান’, আইসিসির আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ নিতে পারে ভারত

বৈশ্বির ক্রিকেট অর্থনীতির ৭০-৮০ ভাগ জোগান ভারত থেকেই আসে ধারণা করে আইসিসির রাজস্ব-বন্টনের প্রস্তাবিত নতুন কাঠামোয় বড় অংশের আয় একাই নিতে যাচ্ছে ভারতীয় বোর্ড, খবর ইএসপিএনক্রিকইনফোর। আয়ের তালিকায় বাংলাদেশ থাকবে আট নম্বরে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2023, 08:43 AM
Updated : 10 May 2023, 08:43 AM

আইসিসির রাজস্ব-বন্টনের খেলায় একসময় জন্ম নিয়েছিল তুমুল আলোচিত-সমালোচিত ‘বিগ থ্রি।’ এবার সামনে দেখা যেতে পারে ‘বিগ ওয়ান’, যেখানে আইসিসি থেকে আয়ের পালায় এককভাবে রাজত্ব করবে ভারত। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবর, আইসিসির প্রস্তাবিত পরবর্তী রাজস্ব-বন্টন মডেল অনুযায়ী, ৪০ শতাংশের কাছাকাছি আয় একাই নেবে ভারতীয় বোর্ড বিসিসিআই। 

২০২৪ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই কাঠামো এখনও প্রস্তাবনার পর্যায়ে আছে। তবে সেটির কাগজপত্র হাতে পেয়েছে বলে দাবি করেছে ইএসপিএনক্রিকইনফো। 

এই প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সামনের চার বছরে আইসিসির সম্ভাব্য আয় প্রতি বছর ৬০ কোটি মার্কিন ডলার। সেখান থেকে ভারতীয় বোর্ড পাবে প্রতি বছরে ২৩ কোটি মার্কিন ডলার। যা মোট আয়ের প্রায় ৩৮.৫ শতাংশ। 

প্রস্তাবিত এই কাঠামোয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় হবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের। তবে ভারতের চেয়ে তারা যোজন যোজন পিছিয়ে। ইংল্যান্ডের বোর্ড পাবে প্রতি বছর ৪ কোটি ১৩ লাখ ডলারের একটু বেশি। যা আইসিসির আয়ের ৬.৮৯ শতাংশ। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া পাবে মোট আয়ের ৬.২৫ শতাংশ, অর্থের অঙ্কে যা ৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের চেয়ে বেশি। 

এছাড়া বার্ষিক ৩ কোটি ডলারের বেশি পাবে আর কেবল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। তাদের আয় হবে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের একটু বেশি, শতকরা হারে ৫.৭৫ শতাংশ। 

পূর্ণ সদস্য বাকি ৮ দেশের সবার আয় হবে ৫ শতাংশের নিচে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সেখানে পাবে ২ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের একটু বেশি, মোট আয়ের যা ৪.৪৬ শতাংশ। 

আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ থাকবে তালিকার আট নম্বরে। বাংলাদেশেরও নিচে থাকবে ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার আয়। তবে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও ওপরে থাকা নিউ জিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোর্ডের আয় মোটামুটি কাছাকাছিই। 

সবচেয়ে কম ১ কোটি ৬৮ লাখ ডলার আয় হবে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের। 

আইসিসির একটি বিশেষ দল এবং সংস্থাটির ফিন‍্যান্স অ্যান্ড কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স কমিটি মিলে রাজস্ব বন্টনের এই কাঠামো তৈরি করছে। মার্চে আইসিসির বোর্ড সভায় এটি নিয়ে আলোচনা হয় এবং কাঠামোর কিছু কিছু দিক তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, রাজস্ব বন্টন পদ্ধতির মানদণ্ড। 

ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবর অনুযাযী, চারটি মানদণ্ড বিবেচনায় বোর্ডগুলির আয় নির্ধারণ করা হয়েছে- ক্রিকেট ইতিহাস ও ঐতিহ্য, আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোর ছেলে ও মেয়েদের আসরে গত ১৬ বছরের পারফরম্যান্স, আইসিসির বাণিজ্যিক আয়ে অবদান এবং আইসিসির পূর্ণ সদস্য হিসেবে সম্মান, যেটি সব দেশেরই সমান। 

ক্রিকেট ইতিহাসের ক্ষেত্রে জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান ও আয়ার‌ল্যান্ড ছাড়া অন্য সব পূর্ণ সদস্য দেশই সমান ৬.৯ শতাংশ শেয়ার পেয়েছে। 

আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোয় পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে মূলত মানদণ্ড ধরা হয়েছে নক আউট পর্বে পা রাখাকে। সেখানে অনুমিতভাবেই সবার ওপরে অস্ট্রেলিয়া (২১.৯ শতাংশ)। তাদের পরে আছে ইংল্যান্ড (১৮.৫ শতাংশ) ও ভারত (১৭.৪ শতাংশ)। 

ভারত সবাইকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে বাণিজ্যিক আয়ের অবদানের ক্ষেত্রে। প্রস্তাবিত এই কাঠামোয় এখানে ভারতীয় বোর্ড পাচ্ছে ৮৫.৩ শতাংশ! এটি কীভাবে ঠিক করা হলো, ইএসপিএনক্রিকইনফোর পাওয়া কাগজে সেটির ব্যাখ্যা নেই। তবে সাধারণত ধারণা করা হয়, বৈশ্বির ক্রিকেট অর্থনীতিতে ভারতের অবদান ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। 

প্রস্তাবিত এই কাঠামো নিয়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই মতামত জানানোর কথা সদস্য দেশগুলির। সেটি হয়ে গেলে ফিনান্স অ্যান্ড কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স কমিটি তা পাঠাবে আইসিসি বোর্ডের অনুমোদনের জন্য। অনুমোদনের সম্ভাব্য সময় ধরে রাখা হয়েছে আগামী মাসে ডারবানে আইসিসির বোর্ড সভায়। 

তবে সবকিছু এতটা মসৃণ নাও হতে পারে। ইএসপিএনক্রিকইনফা জানাচ্ছে, এই কাঠামোর অনেক কিছু নিয়েই অনেক প্রশ্ন আছে সদস্য দেশগুলির। একটি যেমন পারফরম্যান্সের মানদণ্ড। গত ১৬ বছরই কেন বিবেচনায় নেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কয়েকটি সদস্য দেশের চাওয়া, ১২ বছর বিবেচনায় নেওয়া। এছাড়া অন্যান্য মানদণ্ড ও কাঠামোর নানা হিসাব নিয়েও বোর্ডগুলির প্রশ্ন আছে বলে জানিয়েছে এই ক্রিকেট ওয়েবসাইটটি।