সংস্করণ বদলে গেলেও বদল এলো না বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্রে। ব্যর্থতার ধারা টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে বয়ে এলো ওয়ানডেতেও। বিরুদ্ধ স্রোতে লড়াই করলেন কেবল অধিনায়ক নিগার সুলতানা। তবে একার লড়াইয়ে পারলেন না তিনি তেমন কিছু করতে। জেসিকা কারের দুর্দান্ত বোলিং আর সুজি বেটসের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে নিউ জিল্যান্ড জিতে গেল অনায়াসেই।
আইসিসি উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের পথচলার শুরুটা সুখকর হলো না মোটেও। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েলিংটনে নিউ জিল্যান্ড জিতল ৮ উইকেটে।
বেসিন রিজার্ভে রোববার বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে করতে পারে ১৮০ রান। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে নিগার করেন ১৩৩ বলে ৭৩ রান।
২৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং ধসিয়ে দেন মিডিয়াম পেসার জেসিকা কার। তিন ব্যাটারের রান আউটও বারবার থমকে দিয়েছে দলকে।
নিউ জিল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের কাছে পাত্তাই পায়নি ওই স্কোর। ১৯ ওভার বাকি রেখেই ম্যাচ শেষ করে দেয় তারা। অভিজ্ঞ ওপেনার সুজি বেটস অপরাজিত থাকেন ১২ চারে ৯১ বলে ৯৩ রান করে।
বাংলাদেশের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সালমা খাতুন ছিলেন না এই ম্যাচে। অভিষেক হয় পেসার মারুফা আক্তার ও লেগ স্পিনার রাবেয়া খানের। কেউই তেমন কোনো ছাপ রাখতে পারেননি।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ধাক্কা খায় শুরুতেই। জেসিকার বেশ বাইরের বল ড্রাইভ করে কাভার পয়েন্টে ক্যাচ দেন ওপেনার মুর্শিদা খাতুন। পরের ওভারে কার বিদায় করেন বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটার ফারজানা হককে।
১০ রানে ২ উইকেট হারানো দলের হয়ে লড়াই করেন ওপেনার শারমিন আক্তার ও চারে নামা নিগার। রানের গতি যদিও ছিল শ্লথ, তবে জুটি গড়তে পারেন না। ২৫ ওভার শেষে দলের রান দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৭৪।
সেখান থেকে যখন গতি বাড়িয়ে ছোটার কথা সামনে, উল্টো ভেঙে যায় জুটি। বাঁহাতি স্পিনার ফ্র্যান জোনাসের সোজা বলের লাইন মিস করে এলবডিব্লউ হন শারমিন। অভিজ্ঞ ব্যাটার ৬৩ বল খেলে করতে পারেন ২৯ রান।
৬৪ রানের এই জুটি আসে ১১৫ বলে।
এরপর লতা মণ্ডলকে নিয়ে আরেকটি অর্ধশত রানের জুটি গড়েন নিগার। যথারীতি এই জুটিতেও রানের গতি ছিল না খুব ভালো। ৯৬ বল খেলে ৫৫ রান করেন দুজন।
৪৯ বলে ২২ রানে লতার বিদায়ে থামে এই জুটি।
নিগারের তৃতীয় ওয়ানডে ফিফটি আসে ১১০ বলে। পরে তিনি ছাড়িয়ে যান এই সংস্করণে নিজের আগের সেরা ৫৯ রানকে।
৩ চার ও ১ ছক্কায় ৭৩ রান করে বাংলাদেশ অধিনায়ক আউট হন লরেন ডাউনের দুর্দান্ত সরাসরি থ্রোয়ে। শেষ দিকে রুমানা আহমেদ, রিতু মনিরা পারেননি পরিস্থিতির দাবি মেটাতে। দ্রুত রান তোলার সামর্থ্য আছে যার, সেই জাহানারা আলমকে দেখা যায়নি ব্যাটিংয়ে।
জাহানারা অবশ্য নিজের আসল কাজে ঠিকই সফল। অভিজ্ঞ পেসার বল হাতে শিকার করেন দুটি উইকেট। তবে এর আগেই অর্ধশত রানের উদ্বোধনী জুটি পেয়ে যায় নিউ জিল্যান্ড। ৪৯ বলে ৫০ রান তোলেন সোফি ডিভাইন ও সুজি বেটস।
২১ রান করা ডিভাইনকে বিদায় করে জুটি ভাঙেন জাহানারা। পরের বলেই তিনি বিদায় করেন বিপজ্জনক ব্যাটার অ্যামিলিয়া কারকে। তবে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরতে দেননি বেটস ও ম্যাডি গ্রিন। এই দুজনই শেষ করে দেন খেলা।
জোড়া ধাক্কার পর কিছুটা সময় একটু সাবধানে খেলেন দুজন। পরে দারুণ সব স্ট্রোকের ভেলায় তারা পৌঁছে যান লক্ষ্যে।
১২টি ওয়ানডে সেঞ্চুরি করা বেটস ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো অপরাজিত থাকেন নব্বইয়ে গিয়ে। গ্রিন অপরাজিত থাকেন ৭০ বলে ৫৯ করে। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ১৩৩ বলে ১৩১ রানে।
দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচের সেরা অবশ্য জেসিকা কার।
সিরিজের পরের ম্যাচ বুধবার, নেপিয়ারে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ১৮০/৮ (মুর্শিদা ১, শারমিন ২৯, ফারজানা ১, নিগার ৭৩, লতা ২২, রুমানা ৯, রিতু ১৫, নাহিদা ১, রাবেয়া ৪*, মারুফা ৪*; জেনসেন ৮-০-৩১-০, জেস কার ১০-৪-২৩-৪, ডিভাইন ৫-০-১৬-০, পেনফোল্ড ৮-১-২৬-০, অ্যামিলিয়া কার ১০-০-৪১-০, জোনাস ৯-০-৪২-১)।
নিউ জিল্যান্ড : ৩১ ওভারে ১৮১/৮ (ডিভাইন ২১, বেটস ৯৩*, অ্যামিলিয়া কার ০, গ্রিন ৫৯*; জাহানারা ৮-০-৩২-২, মারুফা ৫-০-৩৫-০, সালমা ৪-০-৩৫-১, নাহিদা ৮-০-২৯-০, রাবেয়া ৩-০-২২-০, রিতু ৩-০-২১-০, রুমানা ৩-০-২৩-০, লতা ১-০-১২-০)।
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে।
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: জেসিকা কার।