মুস্তাফিজদের গুঁড়িয়ে চেন্নাইয়ের মাঠে অসাধারণ সেঞ্চুরি করে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন মার্কাস স্টয়নিস, রেকর্ড গড়া জয়ের আনন্দে উচ্ছ্বসিত লাক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের অধিনায়ক লোকেশ রাহুল।
Published : 24 Apr 2024, 12:22 PM
বল যখন ছুটছে বাউন্ডারিতে, মার্কাস স্টয়নিস তখন ছুটে চলেছেন দিগ্বিদিক। এক হাতে হেলমেট, আরেক হাতে ব্যাট উঁচিয়ে ধরে মাঠময় ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি বাঁধনহারা হয়ে। রান তাড়ায় অসাধারণ এক সেঞ্চুরি, শেষ ওভারের কঠিন চ্যালেঞ্জে মুস্তাফিজুর রহমানকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে স্মরণীয় জয়ের পর এমন উদযাপনই তো মানায়! তার সঙ্গে শেষ সময়ে উইকেটে থাকা দিপক হুডা ম্যাচ শেষে দারুণ বললেন, ‘যোদ্ধার মতো লড়েছে স্টয়নিস।’
৬৩ বলে অপরাজিত ১২৪, আইপিএলের সব আসর মিলিয়ে রান তাড়ায় সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড এখন স্টয়নিসের। যে মাঠ চেন্নাই সুপার কিংসের দুর্গ, সেই এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে ২১১ রান তাড়ায় জয় লাক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের। এই মাঠে রান তাড়ায় জয়ের রেকর্ড এটিই। ম্যাচ শেষে সুপার জায়ান্টসের অধিনায়ক লোকেশ রাহুলের উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া “সুপার স্পেশাল জয়।”
রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের ৬০ বলে অপরাজিত ১০৮ ও শিভাম দুবের ২৭ বলে ৬৬ রানের ইনিংসে চেন্নাই ২০ ওভারে তোলে ২১০ রান। এই মাঠে এত রান করে হারার রেকর্ড ছিল না তখনও। ম্যাচের মাঝবিরতিতে ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে বললেন, এই মাঠে এমন স্কোর স্রেফ অসাধারণ।
কে জানত, সেই স্কোর ‘সাধারণ’ হয়ে উঠবে পরের ইনিংসেই!
রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই লাক্ষ্নৌ হারায় কুইন্টন ডি কককে, বড় রান তোলায় যার আগ্রাসী ব্যাটে তাকিয়ে ছিল দল। উইকেটে যান তখন স্টয়নিস, এবারের আসরে যিনি সেরা চেহারায় ছিলেন না একদমই। আগের সাত ম্যাচে তার ফিফটি ছিল মোটে একটি, বাকি কোনো ইনিংসে ছুঁতে পারেননি ২৫ রানও।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বিদায় নিলেন লাক্ষ্ণৌ অধিনায়ক রাহুল। চারে নেমে দেবদূত পাডিক্কাল ১৩ রান করতে খেললেন ১৯ বল। তার পরও শেষ পর্যন্ত জিতে গেল লাক্ষ্ণৌ, কারণ স্টয়নিস এ দিন ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। প্রথম ওভার থেকে দলের ইনিংস টেনে নিয়েছেন, সব পরিস্থিতির দাবি মিটিয়েছেন, শেষ দিকে তাণ্ডব চালিয়েছেন, শেষ ওভারে ১৭ রানের সমীকরণ মিলিয়ে দিয়েছেন স্রেফ তিন বলে।
শেষ দিকে ৬ বলে ১৭ রানের ক্যামিও খেলে স্টয়নিসকে সঙ্গ দেওয়া দিপক হুডা মুগ্ধ সতীর্থের পারফরম্যান্সে।
“বেশিই ভালো খেলেছে সে… যোদ্ধার মতো লড়েছে। দ্বিতীয় ওভার থেকে (প্রথম ওভার) সে উইকেটে ছিল শেষ পর্যন্ত… অনেক কিছু শেখার আছে তার কাছ থেকে, আমাদের জন্য সে প্রেরণাদায়ী।”
স্টয়নিস দলকে জেতানোর পরই ড্রেসিং রুমে খ্যাপাটে উদযাপনে মেতে ওঠেন লোকেশ রাহুশ। সেই আনন্দের প্রকাশ ছিল পরে তার কণ্ঠেও।
“ওরা খুব ভালো ব্যাট করেছে, আমাদের শুরুটা ভালো ছিল না। তবে সব কৃতিত্ব স্টয়নিসের। যেভাবে সে ব্যাট করেছে, বাইরে থেকে দেখাটা অসাধারণ ছিল। স্রেফ পাওয়ার হিটিং নয়, খুব স্মার্ট ব্যাটিং করেছে।”
“খুবই স্পেশাল জয়, বিশেষ করে এভাবে যখন জয় আসে। দুই দলই ২১০ রানের বেশি করেছে। আমাদের রান তাড়ায় বেশির ভাগ সময়ই মনে হয়েছে, আমরা অনেক পেছনে আছি। কিন্তু সেখান থেকে এভাবে জয় আদায় করে নেওয়া… সুপার স্পেশাল।”
চেন্নাই অধিনায়ক রুতুরাজও বললেন, স্টয়নিস গড়ে দিয়েছেন মূল পার্থক্য।
“এই হার হজম করা কঠিন। তবে দারুণ ম্যাচ হয়েছে। ওরা শেষ দিকে সত্যিই খুব ভালো খেলেছে। ১৩-১৫ ওভার পর্যন্ত খেলা আমাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। তবে স্টয়নিসকে কুর্নিশ, সে অসাধারণ খেলেছে।”
এমন ইনিংস খেললেন যিনি, সেই স্টয়নিস বাদ পড়েছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আগামী মৌসুমের চুক্তি থেকে। কদিন আগে জায়গা হারিয়েছেন ওয়ানডে দল থেকেও। এসব নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে আলোচনার কমতি নেই। চুক্তি থেকে বাদ পড়লেও অবশ্য আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তার খেলা একরকম নিশ্চিতই। স্টয়নিসও জানালেন, তিনিও মানসিকভাবে সেভাবেই প্রস্তুত।
“কোচের (অস্ট্রেলিয়ার কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড) আমার সম্পর্ক দারুণ। বেশ আগে থেকেই আমি জানতাম যে, এবার চুক্তিতে রাখা হবে না আমাকে। তরুণদের মেলে ধরার সুযোগ দেওয়া ও আমার জায়গা নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া খারাপ কিছু নয়। চুক্তি নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই।”
“খেলার দিক থেকে বললে, অবশ্যই নিশ্চিত করতে চাই যে, দলে থাকব এবং এজন্যই আমার জন্য ও আমাদের জন্য এই টুর্নামেন্ট এতটা সৌভাগ্যের এবং এজন্যই এই টুর্নামেন্টকে এত ভালোবাসি।”
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চুক্তি থেকে বাদ পড়ার পর রাজ্য দল ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার চুক্তি থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিয়ে পুরোপুরিই ‘ফ্রি ল্যান্স' ক্রিকেটার হয় উঠেছেন স্টয়নিস। আইপিএলের এই সেঞ্চুরিতে যেন জানিয়ে দিলেন, নতুন অধ্যায়টিও খারাপ কাটবে না তার।